বাংলাদেশে ক্রিকেট ও ফুটবলের সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু দেশের ক্রিকেট যতটা এগিয়েছে ফুটবল ঠিক ততটাই থমকে দাঁড়িয়েছে। ক্রিকেটে ছেলেরা যখন বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে, তখন নারীরা জ্বালিয়েছে দেশের ফুটবলের মশাল। বিশ্ব আসরে শিরোপা জয় কয়েছে মোগিনি, সাজেদারা। এতে একটু হলেও নারীদের আলোয় মুখ ভাসাতে পেরেছে নানা সময় সমালোচনায় বিদ্ধ থাকা দেশের ফুটবল ফেডারেশন।
সেই নারী ফুটবলেই বিদ্রোহের আগুন! যার সূত্রপাত চলতি বছরের জানুয়ারিতে। চলতি বছরের শুরুতে অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাফজয়ী দলের ফুটবলার আনুচিং মোগিনী। তার একদিন পরই জাতীয় দলকে বিদায় জানান তারই সতীর্থ। সাজেদা খাতুন। সেই অভিমানের আগুনের তাপ আচ করতে পারেননি দেশের ফুটবলের কর্তারা।
এবার বাংলাদেশ নারী ফুটবলে অভিমান-অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। হঠাৎ শুক্রবার (২৬ মে) ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দেন মোগিনী-সাজেদাদের আরেক সতীর্থ সাফজয়ী সিরাত জাহান স্বপ্না। সব ধরনের ফুটবল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের এই স্ট্রাইকার। কারণ না জানালেও আগের আগুন আচ করলে বুঝার বাকি থাকে না কেন হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন; জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই ফুটবলার।
এবার অভিমান-অসন্তোষের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন নারীদের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। যার হাত ধরে দেশের নারী ফুটবলের এই জাগরণ তিনিই কিনা দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণটা অবশ্য জানিয়েছেন তিনি; মানসিক অশান্তি।
শুক্রবার (২৬ মে) দেশের নারী ফুটবল জাগরণের নায়ক ছোটন জানিয়েছেন, আগামী ৩১ মের পর থেকে আর বাফুফের নারী দলের দায়িত্বে থাকছেন না তিনি। ইতোমধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তবে ফেডারেশনকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাননি।
এদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের নারী ফুটবলের সঙ্গে জড়িত ছোটন। তার অধীনে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছে বাংলার বাঘিনীরা। জাতীয় দল ও বয়সভিত্তিক মিলে এ পর্যন্ত ৭টি আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। এছাড়া ছোটনের হাত ধরে মেয়ে ফুটবলে সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়। সেই ছোটনই কিনা এই মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত, এই প্রশ্নের উত্তরে ছোটন বলেন, এতো মানসিক অশান্তি নিয়ে কাজ করা যায় না। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করার পরও নানান কথা শুনতে হয়। আগামী ৩১ মের পর থেকে আমি আর দায়িত্বে থাকছি না। প্রতিদিন অনেক কাজের চাপ বাড়ছে। তবু শুনতে হয় এটা হয় না, ওটা হয় না। এই মানসিক যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না।
এদিকে কে বা কারা এসব বলেন এটা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি এই কোচ। তবে বাফুফেতে গুঞ্জন উঠেছে মহিলা কমিটির প্রশ্রয়ে পল স্মলির অযাচিত হস্তক্ষেপেই দায়িত্বে ছাড়ছেন ছোটন।
এদিকে দেশের নারী ফুটবল যার কারণে স্বপ্ন দেখলো, সেই কোচের এমন প্রত্যাশিত বিদায়ের ঘোষণা মর্মাহত করেছে ফুটবল প্রেমীদের। দেশের ফুটবলে যার এতো অবদান, তাকে তো বিশেষ সম্মানের সঙ্গে বিদায় দেওয়ার কথা। সেখানে ফুটবলারদের মধ্যেও অভিমান-অসন্তোষ, দেশের ভবিষ্যৎ ফুটবলের জন্য মোটেই কল্যাণ বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা। যে করেই হোক এই অভিমান-অসন্তোষের আগুন থামাতে হবে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দিলেন সাফজয়ী স্বপ্না