বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম সেরা পেসার হয়ে উঠবেন, হয়তো নিজেও কখনও ভাবেননি। কিন্তু বাঁ-হাতের জাদুতে ঠিকই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। কেউ কেউ আবার তাকে ফিজ নামে ডাকে। কেউ আবার বলে কাটার মাস্টার।
খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে ১৯৯৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুরন্তপনা মোস্তাফিজ ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট ভালোবাসে। তাই তো খেলার জন্য স্কুলের পরীক্ষাও মিস করতে হতো হর-হামেশায়। তবে আজকের এই বোলার মোস্তাফিজ বোলার ছিলেন না, মোস্তাফিজ ছিলেন একজন ব্যাটার।
পরিবার ও খেলার প্রতি অনুপ্রেরণা:
মোস্তাফিজুর রহমানের পিতার নাম আবুল কাশেম গাজী এবং মায়ের নাম মাহমুদা খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট হলেন তিনি।
মোস্তাফিজের বাবা ক্রিকেটের একজন অন্ধ ভক্ত। ভাইয়েরাও ক্রিকেট পছন্দ করতো- তাই তো খেলার প্রতি পরিবার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, পরিবারের সমর্থন ও উৎসাহ ছিল বলেই নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রতিদিন অনুশীলন করতেন ২৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
এতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন তার ভাই মোখলেসুর রহমান। মূলত তিনিই তাকে প্রতিদিন অনুশীলনের জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যেতেন। আর এ কারণেই পড়ালেখাটা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেননি ফিজ।
প্রথমবার ঢাকায় আসা:
এলাকায় ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় ক্রিকেট খেললেও ফাস্ট বোলারদের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার জন্য ২০১২ সালে প্রথমবার ঢাকায় আসেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফাস্ট বোলিংয়ের ফাউন্ডেশনে ভর্তি হন। আর সেখানে ভালো করতে থাকলে দুবছরের মাথায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দলে ডাক পান। সেখানে মোট আট উইকেট নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ।
২০১৪ সাল থেকে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট এবং লিস্ট-এ ক্রিকেট খেলা শুরু করেন মোস্তাফিজু রহমান। শুরুতে খেলেছেন খুলনা বিভাগ এবং আবাহনী লিমিটেডের জার্সি। সেখানেও নিজের মেধার ভিত্তিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে বাংলাদেশ-এ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জায়গা করে নেন।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:
২০১৫ সালের বাংলাদেশের জার্সিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় মোস্তাফিজের। আর অভিষেক ম্যাচেই করেন বাজিমাত। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তার প্রথম উইকেটের শিকার হন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি।
জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার। সেই ম্যাচে একাই তুলে নেন পাঁচটি উইকেট। আর তাতেই ক্রিকেট ইতিহাসের দশম বোলার হিসেবে অভিষেকে ফাইফার নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন এই কাটার মাস্টার। পরে ম্যাচে ছয়টি উইকেট নিয়ে অভিষেকের দুই ম্যাচে সর্বোচ্চ ১১টি উইকেটের রেকর্ড গড়েন তিনি। আর সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নেন ২টি উইকেট। আর তাতেই ১৩টি উইকেট নিয়ে গড়েন আরও একটি রেকর্ড।
একই মাসে বাংলাদেশ সফরে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। আর সেই সিরিজে পাঁচটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে সিরিজ জিততে সহায়তা করেন মোস্তাফিজ। ওই সিরিজেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজের টেস্ট অভিষেক করান তিনি। অভিষেক ম্যাচে নেন মোট পাঁচটি উইকেট।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত মোট ১৫টি ম্যাচ খেলেছেন মোস্তাফিজ। উইকেট নিয়েছেন ৩১টি। আর রান করেন ৬৬। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮৮ ম্যাচ খেলে নেন ১৪০টি উইকেট। ব্যাট হাতে এসেছে ৯২ রান। আর টি-টোয়েন্টিতে খেলেন ৭৮টি ম্যাচ। উইকেট নেন ৯৭টি। রান করেছেন ৬৮।
বিপিএলে মোস্তাফিজ:
২০১৫ সালে প্রথমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ হয় মোস্তাফিজুর রহমানের। সেবার তাকে দলে ভেড়ায় ঢাকা ডাইনামাইস। বল হাতে মোট ১০ ম্যাচে নেন ১৪টি উইকেটে। এরপর বিভিন্ন দলের হয়ে খেলাল অভিজ্ঞতা নিয়েছেন তিনি। ২০১৮-১৯ মৌসুমে রাজশাহী কিংস, ২০১৯-২০ মৌসুমে রংপুর রাইডার্স এবং শেষ দুই আসরে খেলেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পক্ষে।
আইপিএল ও অন্যান্য ফ্রঞ্চাইজি লিগ:
ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও জনপ্রিয় ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে প্রথমবার খেলার সুযোগ পান মোস্তাফিজ। ২০১৬ সালের নিলামে তাকে দলে নেয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সুযোগ পেয়েই নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ফিজ। সেবারের আসরে ১৬ ম্যাচে নেন ১৭টি উইকেট। তার দল হয় চ্যাম্পিয়ন। আর তিনি টুর্নামেন্টের ইমার্জিন ক্রিকেটারের পুরষ্কার জেতেন।
পরেরবার তাকে দলে ধরে রাখে হায়দরাবাদ। কিন্তু পায়ের ইনজুরির কারণে সেবার খেলতে পারেননি কাটার মাস্টার। ২০১৮ সালের নিলামে মোস্তাফিজকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এরপর রাজস্থান রয়্যালস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
এদিকে পাকিস্তান সুপার লিগে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মোস্তাফিজ। কিন্তু শুরুতে তাকে খেলতে দিতে রাজি হয়নি বিসিবি। এ নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এর মাঝেই ইনজুরিতে পড়ে যান। ফলে খেলতে পারেনি। এছাড়া ইংল্যান্ডের নেটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে সাসেক্সের জার্সিতেও খেলেছেন। প্রথম মাচে মাত্র ২৩ রানের খরচায় নেন চারটি উইকেট। এরপর পড়েন ইনজুরিতে। তাতেই শেষ হয় টুর্নামেন্ট।
আরও পড়ুন: সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্ব, দেশের ক্রিকেটে ‘গ্রুপিং’ নিয়ে মুখ খুললেন পাপন
ক্রিফোস্পোর্টস/২৫ফেব্রুয়ারি/এসএ