সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত যুব এশিয়া কাপে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় দিল অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দলগত খেলার মাঝেও একটা একক নাম শোনা যাচ্ছে অনেকটা জোরে সোরেই। ফাইনালে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় আশিকুর রহমান শিবলী।
টুর্নামেন্ট জুড়েই আলো ছড়িয়েছেন উইকেট কিপার এই ব্যাটার। যুব এশিয়া কাপের আসরে পাঁচ ম্যাচে দুটি ফিফটি এবং দুটি সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন তিনি। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে রান আউট হয়ে ৭ রানে কাঁটা পড়েন। সেই ঝাঁজ মেটাতেই হয়তো ফাইনালের মঞ্চে ১২৯ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন শিবলী।
আসরের প্রথম দুই ম্যাচ পরপর অর্ধশতক করে চমক দেখান শিবলী। উদ্বোধনী ম্যাচে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ৭১ রান দিয়ে শুরু করেন। পরবর্তী ম্যাচেও করেন ৫৫ রান। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তুলে নেয় যুব ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নক আউট পর্বে উঠে বাংলাদেশ।
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে আসর জুড়ে ১২৬.০০ ব্যাটিং গড়ে শিবলী করেছেন ৩৭৮ রান। এমন অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরেও পাঁ মাটিতে রাখছেন আশিকুর রহমান শিবলী। তিনি জানান, সামনে যুব বিশ্বকাপ, এখন সেখানেই তার পরবর্তী লক্ষ্য। ২০২০ সালে আকবর বাহিনীর মতো উঁচিয়ে ধরতে চান যুব বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফি।
গোটা আসুর জুড়ে নজর কারা শিবলীর আবির্ভাব হঠাৎ করেই হয়নি। তার ক্রিকেটের শুরুটা হয় জন্মভূমি ফরিদপুর থেকে। নতুন ক্রিকেটার সন্ধানে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১২ কার্নিভালে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেন শিবলী। সেখান থেকেই শুরু হয় তার প্রাতিষ্ঠানিক ক্রিকেটযাত্রা। কোচ মোখলেসুর রহমান বাবলুর তত্ত্বাবধানে ফরিদপুর ক্রিকেট একাডেমিতে তার ক্রিকেট শিক্ষার শুরু হয়।
সুযোগ পান ফরিদপুর ও ঢাকা বিভাগে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬ ও ১৮ পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলার। সেখানে ভালো পারফর্ম করে জায়গা করে নেন ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে। তবে সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে ৬টি ডিসমিসাল করা এই ক্রিকেটার তখনও ছিলেন না কোন প্রফেশনাল উইকেটকিপার। ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে তিনি ছিলেন একজন অফস্পিনিং অলরাউন্ডার।
ফরিদপুর লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনে করিম মিয়া স্মৃতি সংঘের কোনো উইকেটকিপারের ছিল না। তখন দলের প্রয়োজন মেটাতে প্রথমবারের মতো কিপিং গ্লাভস হাতে জড়ান শিবলী। সেখান থেকেই উইকেট কিপার ব্যাটার হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ইয়ুথ লিগে দুই সেঞ্চুরি করে জায়গা করে নেন বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পে।
জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্পেও তার কিপিং গ্লাভসেই আস্থা রাখেন টিম ম্যানেজমেন্ট। শিবলী ঢাকা লিগে প্রথম বিভাগে খেলেছেন তার বড় ভাই আসিফের দলে। সেখানে গাজী টায়ার্সের হয়ে ভালো করতে না পারলেও কোচ সালাউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বলের অধীনে তার ব্যাটিং টেকনিকের অনেক উন্নতি ঘটে।
গেল বছর নভেম্বরে জাতীয় যুব দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে ডাক পান শিবলী। ওয়ানডে সিরিজে সুযোগ পেয়ে তিন ম্যাচে ৭৪, ৪২ ও ৭২ রান করে নিজের আগমনী বার্তা জানান দেন তিনি। সেবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে দেশকে সিরিজ জয়ের স্বাদ এনে দেন শিবলী। এর পর ঘরের মাঠেও পাকিস্তান সিরিজে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন তিনি। তবে ঘরের মাটিতে সিরিজ জেতাতে পারেনি দলকে।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে শিবলীর ব্যাট তেমন একটা জ্বলে ওঠেনি। সদ্য সমাপ্ত যুব এশিয়া কাপের আগে গেল মাসেই ভারতে চার জাতি টুর্নামেন্টে ভারত ‘বি’ দলের বিরুদ্ধে ১৩৫ রানের ইনিংস খেলেন শিবলী। টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল ২৬৩ রান।এরপরই যুব এশিয়া কাপে তার ব্যাটের দুর্দান্ত ঝলক দেখান গোটা বিশ্বকে।
ছোট ভাইয়ের এমন কৃতিত্বে আনন্দিত শিবলীর বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম আসিফ। যার অধীনে ঢাকা লিগের প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে গাজী টায়ার্সের হয়ে খেলেছিলেন শিবলী। ছোটবেলা থেকে শিবলীর ক্রিকেটের অনুপ্রেরণা জোগানো আসিফ এক সাক্ষাৎকারে শিবলীর ক্রিকেটে আগমনের শুরুর দিকের কথা গুলো জানান।
আরও পড়ুন: যুব এশিয়া কাপ : চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ কত টাকা প্রাইজমানি পেল?
ক্রিফোস্পোর্টস/১৮ডিসেম্বর২৩/এসএফ/এজে