শচীন টেন্ডুলকারকে দেখেই হয়তো আপনার বেড়ে ওঠা৷ ব্যাট হাতে পেলেই সজোরে একটা স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলে ‘শচীন’ হতে চাইতেন। হয়তো আপনার বেড়ে ওঠা এ যুগের ভিরাট কোহলিকে দেখে, কব্জির মোচড়ে ফ্লিক করে বলটাকে স্কয়ার লেগে পাঠিয়ে দেওয়ার দৃশ্য আপনাকে নিশ্চিত মুগ্ধ করে ছেড়েছে৷ কিন্তু যাদের বেড়ে ওঠা শেন ওয়ার্নকে দেখে? নিজের চর্মচক্ষুকে ভীষণ ভাগ্যবান তারা ভাবতেই পারে।
ইহজীবনে ‘জাদু’ দেখাতেন নিয়মকরে। পর্দায় কিংবা সরাসরি যারা সেই জাদু উপভোগ করতেন, ভ্রু কুঁচকে যেত তাদের। এমনকি ভ্রু কুঁচকে যেত জাদুতে পরাস্ত হওয়া স্বয়ং ব্যাটারেরও৷ শহিদ আফ্রিদির ভাষায় তিনি ছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি অব লেগ-স্পিন’।
১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ফান্ট্রিতে জন্মানো ওয়ার্ন ১৬ বছর বয়সেই নিজের প্রতিভার জানান দেন। প্রথমে ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ পান। লেগ স্পিন এবং অফ স্পিন দুটোতেই ছিল সমান দখল।
ওয়ার্নের ক্যারিয়ারের সেরা বলটি করেছেন ১৯৯৩ সালের ৪ জুন। ম্যানচেস্টার ওল্ড ট্রাফোর্ডে তখন ব্যাট করছেন ইংল্যান্ডের মাইক গ্যাটিং৷ অপরপ্রান্ত থেকে বলটাকে ক্রমশ ঘুরাচ্ছেন ২৩ বছর বয়সী স্বর্ণকেশী ওয়ার্ন৷ বলটাকে হাত থেকে ছাড়লেন লেগ-স্টাম্পের অনেক বাইরে। আরো আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতো ডানহাতি ব্যাটার গ্যাটিংয়েরও মনে হয়েছিল বলটি ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ এবং তাই করলেন, গ্যাটিং আর এটি খেলার চেষ্টা করেননি।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিচ থেকে সহসা বলটি খুব দ্রত টার্ন নিয়ে অফস্ট্যাম্প ছুঁয়ে যায়। চাক্ষুষ ঘটনায় হতবাক হয়ে যান গ্যাটিং। খানিকক্ষণ তিনি ক্রিজেও দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকেন ঠিক কী ঘটল আমার সাথে! কোনো ম্যাজিক নাকি? এরপর থেকে এ বলটাকেই ডাকা হয় ‘বল অব দ্যা সেঞ্চুরি’। আমাদের বেড়ে উঠার গল্পে জাদুকর ওয়ার্নের কোন অধ্যায় যুক্ত হয়নি বলে যাদের আক্ষেপ। সেই আক্ষেপটা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে শেন ওয়ার্নের করা ঐ ‘বল অব দ্যা সেঞ্চুরি’।
অথচ ক্যারিয়ারে শুরুতে বাজে পারফরম্যান্সের জন্য বাদও পড়েছেন ওয়ার্ন। ১৯৯২ সালে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ওয়ার্নের পথচলা শুরু হয়৷ শুরুটা ছিল একেবারেই অনাড়ম্বর। সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ওয়ার্নের বল ঘোরানোর সুযোগ হয়। টসে জিতে ভারত অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়৷ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করে ৩১১ রান৷ সেখানে ওয়ার্ন করেছিলেন ২০ রান৷ তবে পুরো টেস্টে লেগ স্পিনার হিসেবে খেলা ওয়ার্ন ১৫০ রান খরচায় উইকেট শিকার করেছিলেন মাত্র একটি৷
সিরিজের চতুর্থ টেস্টেও ওয়ার্নের ওপর আস্থা রাখে অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু ওয়ার্ন প্রতিদান দিলেন শূন্য। চতুর্থ টেস্টে করলেন সাদামাটা পারফরম্যান্স। পুরো ম্যাচে ৭৮ রান খরচায় থাকলেন উইকেট শূন্য৷ ফলে বাদ পড়েন দল থেকে। ক্যারিয়ারে প্রথম সিরিজে ১ উইকেট পাওয়া সেই ওয়ার্ন ক্যারিয়ার শেষে থামলেন ১০০১ উইকেটে।
পুরো ক্যারিয়ারেই দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন৷ কিভাবে ঐ বলটাকে হাতের আঙ্গুলে আলতো করে ঘুরান। হাত থেকে ছুটে আসা বলের ফ্লাইট কিংবা টার্নেই পরাস্ত করেন ক্রিকেট বিশ্বের নামজাদা ব্যাটারদের৷ ওয়ানডেতে হাত ঘুরিয়ে উইকেট তুলেছেন ২৯৩টি, টেস্টে উইকেট সংখ্যা তো ভড়কে যাওয়ার মতো৷ সংখ্যাটা ৭০৮! গোটা ক্যারিয়ারেই তুলেছেন ১০০১টা৷
আরও পড়ুন: বিপিএলের প্রতি ম্যাচে বিসিবির আয় কোটি টাকা
ক্রিফোস্পোর্টস/১৪জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এফএএস