রোজকার যাপিত জীবনে নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী হয় মানুষ৷ জীবনের সত্যিকারের মর্ম উদ্ধার করতে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়৷ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও ব্যতিক্রম ছিলেন না৷ একটা গোটা প্রজন্মকে মাতিয়ে রাখা রোনালদোকে ছোটবেলায় ভীষণ অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে৷ কিন্তু জীবনের সত্যিকারের মর্ম উদ্ধার করেছেন রোনালদো।
১৯৮৫ সালে পর্তুগালের ম্যাদেইরাতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ জন্মস্থান ম্যাদেইরাতে থাকার সময় শরীরে ধরা পড়ে ট্যাকিকার্ডিয়া বা হৃদপিণ্ডের এক গুরুতর রোগ। অবস্থা এতোটাই গুরুতর ছিল যে, ফুটবলের সাথে রোনালদোর সম্পর্ক আজীবনের জন্য ছিন্ন হয়ে যেত৷ কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে ফিরে এলেন ফুটবলে৷ এরপরের জীবন তো সবার জানা৷ সেই ম্যাদেইরার ছেলেটি ভাবতেও পারেননি জীবনটা হবে এতো রঙিন!
জন্মস্থান ম্যাদেইরা থেকে ২০০৩ সালে ১২.২৪ মিলিয়ন পাউন্ডে পাড়ি জমান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে বৈশ্বিক ফুটবলে তারকা হিসেবে রোনালদোর তখন উত্থান ঘটে৷ জর্জ বেস্ট, ডেভিড ব্যাকহাম, ব্রায়ান রবসনদের ঐতিহ্যবাহী ৭ নাম্বার জার্সি পরে মাঠ মাতান রোনালদো৷ সতীর্থ ওয়েন রুনি, তেভেজদের নিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের জন্য ভীতির কারণ হয়ে ওঠেন তখনকার ম্যানচেস্টারের এ ত্রয়ী৷ তবে মাত্র ছয় মৌসুম খেলে শেষ করেন নিজের ম্যানচেস্টার অধ্যায়৷
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিতে ২০০৯ সালে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান রোনালদো৷ স্যান্তিয়াগো বার্নাব্যুর শ্বেত উপত্যকায় রোনালদোকে আনতে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড গুনতে হয়েছে মাদ্রিদকে৷ ইউনাইটেড ছেড়ে মাদ্রিদে আসা রোনালদো মাঠের ফুটবলে আরো দ্বিগুণ দাপট দেখাতে শুরু করেন৷ ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা এই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই পার করেন রোনালদো।
রিয়াল মাদ্রিদে ৯ মৌসুমে ২৯২ ম্যাচে গোল করেন ৩১১টি। এর মধ্যে চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, দুই বার লা-লিগা ও কোপা দেল রে জিতেন রোনালদো৷
মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্তাসে এসেও সফল ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো৷ জুভেন্তাসের হয়ে ৯৮ ম্যাচে গোল করেন ৮১টি৷ জুভেন্তাস জিতে টানা দুইটা সিরিয়া এ৷ কালক্রমে ইউরোপ অধ্যায় শেষে পাড়ি জমান এশিয়ান ফুটবলে৷ সৌদি আরবের আল-নাসেরের হয়ে খেলতে আসা রোনালদোর ক্যারিয়ারের উপসংহার টেনেছিলেন অনেক ফুটবল বোদ্ধরা৷ তবে সবাইকে বরাবরের মতো এবারও ভুল প্রমাণ করলেন তিনি৷
ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মাতিয়ে আসা রোনালদো সৌদি প্রো লিগে গিয়েও দেখাচ্ছেন একের পর এক ঝলক। গতকাল ৫ ফেব্রুয়ারি বয়সের হিসেবে ৪০’র কোঠায় পা দিয়েছেন এই তারকা। তবে এখনও মাঠের ফুটবলে এক টগবগে তরুণের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। বরাবরের মতোই বয়সটা তাঁর কাছে কেবল সংখ্যা৷ ২০২৩ সালে সর্বাধিক গোলদাতার মুকুটও গেছে তাঁর দখলে৷ গত বছরে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৫৮ ম্যাচে ৫৩টি গোল করে পর্তুগীজ ফুটবল সম্রাট রোনালদো জীবনের সত্যিকারের মর্ম উদ্ধার করেছেন।
আরও পড়ুন: হোয়াইটওয়াশ করার পথে ৭ ওভারেই ওয়ানডে ম্যাচ শেষ করল অস্ট্রেলিয়া
ক্রিফোস্পোর্টস/৫ফেব্রুয়ারি২৪/টিএইচ/এফএএস