বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় খেতাব পেয়েছেন, ছড়িয়েছেন নিজের দ্যুতি। দেশের ক্রিকেটের তারকাদের তারকা হওয়ার পথে এগিয়ে আছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এবারের বিপিএলে শুরু থেকে একটু খেই হারিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই খুঁজে পেয়েছেন নিজের চেনা ছন্দ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে ঠিক মতো খেলতে না পারায় যে সাকিবের কণ্ঠে ছিল গ্লানির সুর। সেই সাকিব এখন বিপিএলে সেরা হওয়ার রেসে নাম লিখিয়েছেন। টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে বেশ জ্বলে উঠেছেন। মাঝে মাঝে নিচ্ছেন উইকেটও। দেখাচ্ছেন পরিচিত সেই উদযাপন।
বিপিএলের শুরুর পারফরম্যান্স দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন রাজনীতি করেই হয়তো ফুরিয়ে যাচ্ছেন সাকিব। খেলার মাঠে আর জ্বলে উঠতে পারবেন না তিনি। কিন্তু না, সব তত্ত্ব কথা, সব নিন্দুকের মুখের তিক্ততা উড়িয়ে দিয়ে ফিরেছেন স্বরূপে। দেখাচ্ছেন নিজের চেনা রূপ। তাই তো বলায় যায়- সাকিব আল হাসান ,যার কাছে শেষ বলে কিছু নেই।
দশম বিপিএলে প্রথম ৫ ম্যাচের তিন ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সাকিব করেন মোট ৪ রান। বাকি দুই ম্যাচে অষ্টম উইকেটেও ক্রিজে নামেননি তিনি। হয়তো চোখের সমস্যার কারণে ঠিকঠাক মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। গেছেন সিঙ্গাপুরে, চিকিৎসা করিয়ে ফিরেছেন মাঠে।
সেই সাকিব এবারের বিপিএলে গড়েছেন দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে খেলেছেন ৩৯ বলে ৬২ রানের ইনিংস। এর আগের ম্যাচেই খুলনার বিপক্ষে ৩১ বলে ৬৯। সব মিলিয়ে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯৬ রান। সঙ্গে ঘূর্ণি ভেলকি দেখিয়ে নিয়েছেন ১৩টি উইকেট।
সাকিবের জ্বলে ওঠা ও টানা জয়ে এবারের বিপিএলে প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফ চূড়ান্ত করেছে রংপুর রাইডার্স। গ্রুপপর্বে এখনও বাকি দুই ম্যাচ। সব মিলিয়ে এখনো অন্তত ৪টি ম্যাচ মাঠে নামার সুযোগ রয়েছে সাকিবের। তাই টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার পথটা খোলা রয়েছে। সেই পথে সাকিবের প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকার শরীফুল ইসলাম ও কুমিল্লার তাওহিদ হৃদয়।
এর আগের নয়টি আসরের মধ্যে সাকিব চারবার বিপিএলের সেরা হিসেবে পুরস্কার জিতেছেন। এবারও উঁকি দিচ্ছে সেই সম্ভাবনা। এছাড়া মাঠের মধ্যে তরুণদের সাহস দেয়া, টেকনিক শিখিয়ে দেয়া, দর্শকদের ভুয়া ভুয়া ধ্বনির বিপক্ষে গিয়ে খেলা, রাজনীতি নিয়ে সমালোচনার জবাব দেয়া। সব কাজ করে নিজের আসল রূপ দেখাচ্ছেন সাকিব।
চট্টগ্রামের ম্যাচের পর সামাজিক মাধ্যমে বয়ে যাচ্ছে প্রশংসার বন্যা। সাকিবকে নিয়ে কেউ কেউ লিখেছেন, ‘তারার আলো খুঁজে পেতে কষ্ট হওয়ার কথা না, হচ্ছেও না, চট্টগ্রাম সাক্ষী থাকল।’
সাকিবের দল রংপুরের হয়ে খেলতে এসেছেন জিমি নিশাম। এই ব্ল্যাক ক্যাপার অলরাউন্ডার সাকিবকে নিয়ে বলেন, ‘সাকিব যদি চোখে নাও দেখে তবুও ভালো বল করতে পারবে…’
শুধুমাত্র দিন হিসেবে ১১ বছরের বেশি সময় দুনিয়ার সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। সবমিলিয়ে ওয়ানডে অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব নাম্বার ওয়ান ছিলেন ৪,২৭৬ দিন। ওয়ানডে ক্রিকেট তবে দিনের হিসেবে নাম্বার ওয়ান সাকিব ছাড়া আর কারো নেই চার হাজার দিন। সম্প্রতি ওয়ানডে অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থান থেকে নেমে গেছেন সাকিব। যদিও এর পেছনে পারফরম্যান্স নয়, মাঠে না নামায় মূল কারণ।
সবাই যখন সমালোচনা করছে, ঠিক তখনই সাকিব এমন খেলা করলেন, যা দেখে মন বলে ওঠে- কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়? কতবার জবাব দিলে তবে সাকিব আল হাসান হওয়া যায়?
এবারের বিপিএলে ৭০০০ টি-টোয়েন্টি রান স্পর্শ, দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে ‘৭ হাজার রান ও ৪০০ উইকেট’ ক্লাবে প্রবেশ। টি-টোয়েন্টিতে ১০৯ বার ব্যাটারদের বোল্ড আউট করে পঞ্চম স্থানে নাম লিখিয়েছেন সাকিব। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ১২০০ উইকেট নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: তৃতীয় টেস্টের মাঝ পথেই একাদশ ছাড়লেন অশ্বিন
ক্রিফোস্পোর্টস/১৭ফেব্রুয়ারি২৪/এজে