Connect with us
ফুটবল

ব্রাজিলের দুর্দান্ত দশ : পেলে-গারিঞ্চা থেকে এন্ড্রিক

Brazilian Footballer
পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলে নানা সময়ে উত্থান হয় এমন অসংখ্য প্রতিভাবান তারকাদের। ছবি- সংগৃহীত

ফুটবলের প্রতিভা তৈরির কারখানা বলা হয় ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলকে৷ যুগে যুগে ব্রাজিল থেকে ফুটবল অঙ্গনকে মাড়িয়ে গেছেন অসংখ্য তারকারা৷ সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান তারকা শিবিরে নতুন নাম তরুণ তুর্কি এনড্রিক৷ ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ইংল্যান্ড ও স্পেনের বিপক্ষে গোল পেয়েছেন এই বিষ্ময় বালক। এতে ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করা তারকাদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন এই ফরওয়ার্ড৷ পেলে-গারিঞ্চা থেকে এন্ড্রিক, এ যেন তারার মেলা।

পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলে নানা সময়ে উত্থান হয় এমন অসংখ্য প্রতিভাবান তারকাদের৷ এ পর্যন্ত ব্রাজিলের হয়ে বিভিন্ন সময়ে দ্যুতি ছড়ানো দুর্দান্ত দশ তারকা ফুটবলার কারা ছিলেন?

পেলে-গারিঞ্চা থেকে এন্ড্রিক

পেলে

ব্রাজিল ফুটবলের আলোচনায় বরাবরই চর্চিত নাম পেলে৷ প্রয়াত এ ফুটবল সম্রাট পেলে এখনও ব্রাজিলের হয়ে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছেন। এ রেকর্ড যেন তার মতোই অমর৷ ক্যারিয়ারজুড়ে দেশের হয়ে করেছিলেন ৭৭টি গোল। সেলেসাও জার্সিতে যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। পেলের ক্যারিয়ারের বিশ্বকাপের সংখ্যা কোনো কোনো দেশের বিশ্বকাপের চেয়েও বেশি৷ ক্যারিয়ারে তিনি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেন৷

পেলে সম্পর্কে বিখ্যাত লেখক এদুয়ার্দো গালিয়ানো লিখেছেন, পেলে যখন ছুটে চলতেন, তিনি প্রতিপক্ষদের ফাঁক গলে এগিয়ে যেতেন, যেভাবে মাখনের পেট চিরে এগিয়ে চলে গরম ছুরি। যখন তিনি থামতেন, তার পায়ের ইন্দ্রজালে প্রতিপক্ষ হয়ে যেত মোহাবিষ্ট। তিনি যখন শূন্যে লাফাতেন, দেখে মনে হতো অদৃশ্য সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন তিনি। যখন তিনি ফ্রি-কিক নিতেন, মানব দেওয়াল তৈরি করা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়েরা গোলপোস্টের দিকে মুখ করে থাকতেন, যাতে গোলটা দেখা থেকে বঞ্চিত না হন তারা।

গারিঞ্চা

গারিঞ্চা নামের অর্থ অর্কমা ছোট পাখি৷ কিন্তু ফুটবল মাঠেও মোটেও অকর্মা ছিলেন না তিনি। বলা হয়ে থাকে, গারিঞ্চার মতো উইঙ্গার পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি আসেনি। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ওই পজিশনের সেরা খেলোয়াড়, ১৯৬২ বিশ্বকাপে হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা৷

তৎকালীন কোচের চোখে গ্যারিঞ্চা দর্শকদের বিনোদন নিয়ে একটু বেশিই চিন্তিত ছিলেন। কেননা ফুটবল ইতিহাসে গারিঞ্চার মতো আর কেউ দর্শককে এতোটা খুশি করতে পারেনি৷ ৬২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এবং স্বাগতিক চিলির বিপক্ষে ম্যাচ দুটিতে অসাধারণ খেলে করেন ৪ গোল।

এদুয়ার্দো গ্যালিয়ানো তার সম্পর্কে লিখেছেন, গরিঞ্চা যখন খেলতেন, ফুটবল মাঠ হয়ে যেত সার্কাসের রিং৷ বল হয়ে পড়তো পোষমানা এক বুনো পশু আর খেলাটা ফুর্তির এক মেলা৷

আরও পড়ুন:

» ‘কালো মানিকের’ মৃত্যু মানতে পারছেন না রোমারিও-রোনালদিনহোরা

» মেসিকে নিয়ে কী ভবিষ্যদ্বাণী করলেন সাবেক ক্লাব সতীর্থ রোনালদিনহো

» মাঠের লড়াইয়ে ফিরছেন রোনালদিনহো

জিকো

আশির দশকের প্রজন্মের কাছে জিকো রীতিমতো এক ট্রাজিক হিরোর নাম৷ ফুটবল পায়ে অসংখ্যবার মাতিয়েছেন দর্শকদের৷ ক্যারিয়ারজুড়ে ব্রাজিলের বিখ্যাত ফ্ল্যামেঙ্গো ক্লাবের হয়ে সবকিছু জিতলেও একটাই আক্ষেপ ছিল, ব্রাজিলের কখনো বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তার৷

ব্রাজিলের অন্যতম সেরা এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের প্রায় ৮০০ ম্যাচে গোল রয়েছে ৫০০টিরও বেশি। ১৯৮২ বিশ্বকাপে তিনি পরিণত হন সেলেসাওদের মেইন-ম্যান৷ বিশ্বকাপে চার-চারটি গোল করলেও, সেবার দল হিসেবে কিছুই জিততে পারেনি ব্রাজিল৷ ১৯৮৬ এর বিশ্বকাপেও ব্রাজিলের ভরসার নাম ছিলেন জিকো, কিন্ত কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় সেলেসাওরা৷

Brazilian Footballer ronaldo

ব্রাজিলের হয়ে দ্যুতি ছড়ানো তারকা ফুটবলাররা। ছবি- সংগৃহীত

রোমারিও

গোল এলাকার জিনিয়াস হিসেবে খ্যাতি রয়েছে রোমারিওর৷ মাঠের ফুটবলে কখনো ব্যাকহিল, কখনো টো-পক কিংবা বাইসাইকেল–গোলকিপারকে দারুণভাবে ব্যতিব্যস্ত করে রাখতেন তিনি৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৭০ ম্যাচে তার পা থেকে এসেছে ৫৫টি গোল৷ ক্লাব পর্যায়েও উজ্জ্বল ছিলেন রোমারিও৷ বার্সেলোনার হয়ে লা লীগা শিরোপা জয়ের পাশাপাশি পিএসবি এনডোভানের হয়ে তিনবার জয় করেছেন ইরাডিভাইস শিরোপা।

বিখ্যাত লেখক এদুয়ার্দো গালিয়ানো তার সম্পর্কে লিখেছেন, রোমারিও একের পর এক গোল করতে থাকেন আর গোলকিপার খাচায় বন্দী অবস্থায় পলক ফেলার সময় পর্যন্ত পায় না৷

রোনালদো

ব্রাজিল এর জার্সি গায়ে ১৯৯৪ সালে অভিষেক হয় রোনালদো নাজারিওর। ১৭ বছর ৭ মাস ১২ দিন বয়সে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করে পেলে, এদুর পর দেশের হয়ে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান রোনালদো।

২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে রোনালদোর দুই গোলে ব্রাজিলের ২-০ গোলের জয় নিশ্চিত হয়। এতে পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপ জেতে সেলেসাওরা৷ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পরে রোনালদো বন্দনা৷

রোনালদিনহো

তার দৃষ্টিনন্দন ড্রিবলিং দেখে যে কেউই বলতে বাধ্য হতো জিনিয়াস৷ বল যেন তার পায়ে আঠার মতো লেগে থাকতো। ১৯৯৭ সালে ব্রাজিলের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে অভিষেক হয় রোনালদিনহোর, একই বছর জাতীয় দলেও জায়গা পেয়ে যান তিনি৷ মাঠের খেলায় সেসময় ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে প্রতিভাবান তরুণ হয়ে ওঠেন তিনি, ফলে নামকরা ক্লাবগুলোও তার দিকে ঝুঁকতে শুরু করে৷

২০০১ সালে ব্রাজিলের গ্রেমিও থেকে তিনি যোগ দেন ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি)। শুরু দিকে দলে নিয়মিত সুযোগ না পেলেও পরের মৌসুমেই পিএসজিকে লিগ কাপের ফাইনালে নিয়ে যান এবং ওই মৌসুমে পিএসজি থেকে যোগ দেন স্পেনিশ জায়ান্ট ক্লাব বার্সেলোনায়। এখানেই তিনি কাটান ক্যারিয়ারের সোনালী সময়৷

২০০৪ ও ২০০৫ সালের ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি ২০০৪-০৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে জেতেন লা-লিগা শিরোপা।

কাফু

ব্রাজিল রক্ষণের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন কাফু৷ রাইট-ব্যাক পদে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে খেলেছেন সর্বাধিক ১৪২ ম্যাচ৷ ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০০২ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর মধ্যে দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল৷ এমনকি বিশ্বকাপে তার খেলা ২১ ম্যাচের ১৬ ম্যাচেই জিতেছে ব্রাজিল৷ এছাড়াও তিনি দুই দফায় কোপা দেল রে ও কনফেডারেশন কাপের শিরোপা জয় করেছেন।

আলেক্সান্দ্রে পাতো

আলেক্সান্দ্রে পাতোর শুরুর গল্পটা অনেকটাই কিংবদন্তী পেলের মতো৷ ২০০৮ সালে সুইডেনের বিপক্ষে বেঞ্চ থেকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নেমে যখন জয়সূচক গোলটি করেছিলেন, তখন অনেকেই তাকে ৫০ বছর আগে বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দেওয়া পেলের সঙ্গে তুলনা করেন৷

কিন্তু দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করা এই সেন্টার ফরওয়ার্ড শেষ পর্যন্ত নিজেকে ঠিক সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি৷ দেশের হয়ে মাত্র ২৭ ম্যাচ তার রয়েছে ১০ গোল৷ এরপর ফর্মহীনতা ও নানা কারণে দলের আঙিনায় পা রাখতে পারেননি তিনি৷

তবে ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের হয়ে ক্যারিয়ারে সোনালী সময় কাটিয়েছেন৷ এসি মিলানের হয়ে ১১৭ ম্যাচে তার গোল রয়েছে ৫১টি।

নেইমার

নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় পেলেকে হটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১২৮ ম্যাচে ৭৯ গোল করে ব্রাজিলের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন নেইমার৷ ইনজুরিতে বারংবার ছিটকে যাওয়া নেইমার আধুনিক ফুটবলে অন্যতম এক বড় প্রতিভা৷ ব্রাজিলিয়ান অন্যান্য তারকাদের মধ্যে তার খেলার ধরণ অনেকটাই রোনালদিনহোর মতো৷ দৃষ্টিনন্দন ড্রিবিংয়ের পাশাপাশি ফিনিশিংয়েও দুর্দান্ত তিনি৷

এনড্রিক

হন্যে হয়ে একজন ফিনিশারের খোঁজ করা ব্রাজিলের জন্য এক আশার আলো হতে যাচ্ছেন এনড্রিক৷ ফুটবল মাঠের এই বিস্ময় বালক ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছেন ফুটবল ভক্তদের৷ ব্রাজিলের হয়ে ইংল্যান্ড ও স্পেনের বিপক্ষে গোল করেছেন তিনি৷ সব মিলিয়ে ৪ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার এখন গোল রয়েছে দুটি৷ যেখানে একটি গোল করেছেন স্যান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে৷

সেই বার্নাব্যু, যেখানে দুই বছর আগেই তাকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। মাদ্রিদের হয়ে অভিষেকের আগেই বার্নাব্যুতে গোলের খাতা খুলেছেন এন্ড্রিক৷ চলতি মৌসম শেষে পরের মৌসুম থেকে রিয়ালের শ্বেত জার্সিতে মাঠ মাতাবেন তিনি। পেলে-গারিঞ্চা থেকে এন্ড্রিক, ব্রাজিলের ফুটবল গ্যালাক্সিতে তারা একেকজন নক্ষত্র।

আরও পড়ুন: সাবেকদের বিশ্বকাপ: খেলবেন রোনালদিনহো, কাকা, ল্যাম্পার্ড, টট্টি

ক্রিফোস্পোর্টস/১৪এপ্রিল২৪/টিএইচ/এসএ

Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ফুটবল