ক্রিকেট ম্যাচের কৌশলগত পরিবর্তনের ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ম নতুন সংযোজন৷ ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামা ক্রিকেটারদের ব্যাটে-বলে ম্যাচের মোড় যেকোনো সময় ঘুরে যাচ্ছে। তাই এ নিয়মটি আইপিএলের ম্যাচগুলোতে যোগ করেছে বাড়তি স্বাদ৷ আইপিএলের গত মৌসুমে এ নিয়মটি চালু করে বিসিসিআই৷
‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ম অনেকটা ফুটবল, বাস্কেটবল কিংবা রাগবি থেকে অনুপ্রাণিত। তবে এর চরিত্রগত কিছু ভিন্নতা রয়েছে৷ ফুটবলে বদলি প্লেয়ারের যেমন নির্দিষ্ট সংখ্যা তথা পাঁচ জন খেলোয়াড়ের মাঠে নামার অনুমতি রয়েছে৷ কিন্তু ক্রিকেটে তা মাত্র একজন৷
‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ কী? কিভাবে কাজ করে?
ক্রিকেটে অবশ্য খেলোয়াড় বদলির নিয়মটি খুব পুরনো নয়। ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বদলি ফিল্ডার খেলানোর নিয়ম তো সবারই জানা৷
আবার মাঠে কোনো ব্যাটার চোটে আক্রান্ত হয়ে দৌঁড়াতে সক্ষম না হলে, তার বদলি হিসেবে একজন ‘রানার’ খেলেন।
এছাড়া সম্প্রতি যোগ হয়েছে ‘কনকাশন সাব’। মাঠে কোনো ক্রিকেটার গুরুতরভাবে চোটে আক্রান্ত হলে তাঁর বদলি হিসেবে বিকল্প একজন ব্যাটার, বোলার কিংবা অলরাউন্ডারকে মাঠে নামানোর নিয়মই ‘কনকাশন সাব’৷
তবে ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ এক্ষেত্রে ভিন্ন৷ চোটের কারণে নয় বরং ম্যাচের কৌশলগত কিংবা খেলার ফলাফলে প্রভাব রাখতে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারদের ম্যাচে খেলানো হয়৷ তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো অভিষেকের মুখ দেখেনি ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ এর নিয়ম৷
কিভাবে কাজ করে ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’?
একটি ম্যাচের তিনটি সময়ে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার মাঠে নামতে পারেন৷ এ সময়গুলো হলো- ইনিংসের শুরুতে, ওভার শেষে ও যখন কোনো উইকেটের পতন হয় কিংবা কোনো ব্যাটার রিটায়ার করে৷
তবে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারদের মাঠে নামতে হলে টসের পর মূল একাদশের পাশাপাশি উভয় দলকেই পাঁচ জনের একটি ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারের তালিকা প্রকাশ করতে হবে৷ যদি মূল একাদশে তিনজন বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো হয়, তাহলে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে একজন বিদেশীকে খেলানোর সুযোগ থাকবে, অন্যথায় নয়৷
ব্যাটিং দলের উইকেট পতনের পর বোলিং দল যদি ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার নামান, তাহলে তিনি ওই ওভারে কোনো বল করতে পারবেন না। তাঁকে বোলিং কোটার চার ওভারেই হাত ঘুরাতে হবে৷ তবে এক্ষেত্রে যদি বৃষ্টি বা অন্য কোনো কারণে ম্যাচ সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে, তখন বরাদ্দকৃত ওভারই করতে পারবেন।
ম্যাচে যে ক্রিকেটারের বিকল্প হিসেবে ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটার মাঠে নামবেন, তিনি মাঠে আর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না। এমনকি বদলি ফিল্ডিংয়েও তাঁর নামার সুযোগ নেই৷
‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়ে বিতর্ক কেন?
‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়মটি গত মৌসুম থেকে চালু হলেও এখনো অনেক ক্রিকেটারই এটি হজম করতে পারেনি৷ কোনো কোনো ক্রিকেটার এ নিয়মকে ক্রিকেটের আইন বিরুদ্ধও বলেছেন।
ভারতের তিন সংস্করণের অধিনায়ক রোহিত শর্মার মতে ‘ইম্প্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়মটি অলরাউন্ডারদের কদর কমিয়ে দিচ্ছে৷ তিনি বলেন, ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটারের নিয়মটি আমার পছন্দ নয়৷ এটা অলরাউন্ডারদের পেছনে টেনে ধরবে, আর দিন শেষে ক্রিকেট ১১ জনের খেলা, ১২ জনের নয়। আশপাশের মানুষের বিনোদনের জন্যই এ নিয়মটি করা হয়েছে৷’
অলরাউন্ডারদের বিকাশের পথে এটি বাধা হবে বলে মনে করেন রোহিত। তিনি বলেন, ‘শিবম দুবে, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো অলরাউন্ডাররা বল করছে না, এটা আমাদের জন্য মোটেও ভালো নয়। সত্যি বলতে তাই আমি এর ভক্ত নই।’
রোহিতের মতো এ নিয়মটি পছন্দ করেন না আরেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ সিরাজ৷ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলা এই পেসার মনে করেন ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার আইনটা বাতিল হওয়াই ভালো৷
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার আইনটা বাতিল করলে ভালো হতো। এর ফলে বোলারদের কাজ খুব কঠিন হয়ে গেছে। যে কেউ ক্রিজে এসেই প্রথম বল থেকে বোলারদের ওপর চড়াও হচ্ছে৷ তাই এখন ২৭০-২৮০ রান খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে’
বিতর্কের মাঝে ‘ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার’ নিয়মটি ঠিক কতদিন বাঁচবে তা সময়ই বলে দিবে। তবে বেঁচে গেলে নিয়মটির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কি অভিষেক হতে যাচ্ছে?
আরও পড়ুন: আইপিএলের প্রাইজমানি কত?
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০এপ্রিল২৪/টিএইচ/বিটি