টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে দুর্দান্ত খেলে সুপার এইটের যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। স্বপ্ন ছিল সেমিতে খেলা। তবে প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়, বেজে উঠে বিদায় ঘণ্টা। তবে তখনো নাটকীয়তার বাকি ছিল—অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে রূপ কথার জন্ম দেয় আফগানিস্তান। এছাড়া ডেভিড ওয়ার্নাররা হারে ভারতের কাছে। আর এতেই সেমির স্বপ্ন উঁকি দেয় বাংলাদেশের সামনে।
শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের দেওয়া ১১৫ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারের মধ্যে তাড়া করতে পারলে সেমিতে যাবে বাংলাদেশ। না পারলে টিকিট আফগানিস্তানের, কপাল পুড়বে অস্ট্রেলিয়ার। নির্ধারিত সব ওভার খেলে আফগানদের হারালে সেমিতে যাবে অস্ট্রেলিয়া।
এমন জটিল সমীকরণ মাথায় নিয়ে বৃষ্টি ভেজা মাঠে লড়াই করে বাংলাদেশ। টস হেরে ফিল্ডিংইয়ে নেমে আফগানদের ১১৫ রানে আটকে দিয়ে প্রথম আশার প্রদীপ জ্বালে শান্ত বাহিনী। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে লড়াই করেও পারলো না বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হয় টাইগারদের। ১২.১ ওভারে লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি লিটন-শান্তরা। উল্টো সেন্ট ভিনসেন্টের আকাশে বৃষ্টি ঝলে ডিএলএস পদ্ধতিতে ১ ওভার কেটে ১১৪ রানের লক্ষ্য দেওয়া হয়।
শেষ হাসি হাসে রশিদ খানরা। বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পৌঁছে যায় টিম আফগানিস্তান। এতে সত্যি সত্যি কপাল পুড়েছে টিম অস্ট্রেলিয়ার। এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপ ওয়ান থেকে দুই সেমিফাইনালিস্ট ভারত ও আফগানিস্তান। বাদ পড়েছে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর সেন্ট ভিনসেন্টের মাটিতে মঙ্গলবার ভোরে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেমিফাইনালের টিকিট পেতে জটিল সমীকরণ মাথায় নিয়ে টস হেরে ফিল্ডিং নামে নামে শান্ত বাহিনী।
আরও পড়ুন :
» ভারতের জয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকে রইল বাংলাদেশের
» সাকিব-মাহমুদউল্লাহর কি অবসর নেওয়া উচিত? যা বললেন ফাহিম
তাসকিন-তানজিদদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই আফগানদের রানের লাগাম টেনে ধরে টিম বাংলাদেশ। এতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানে থামে আফগানিস্তানের রানের চাকা।
লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে হলে ১২.১ ওভারের মধ্যে এই লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হবে। এছাড়া স্কোর লেভেল করে যদি চার মারতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে সময় পাবে ১২.৩ ওভার। এছাড়া স্কোর লেভেল করে যদি ছক্কা মারতে পারে তাহলে ১২.৫ ওভারে জয় পেতে হবে।
এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে ফিল্ডিংইয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু পায় বাংলাদেশ। দুই পেসার তানজিম সাকিব ও তাসকিন আহমেদের সুইংইয়ে কাবু হয় আফগান ওপেননাররা। পাওয়ার প্লেতে বেশি রান হতে দেননি দুই পেসার। তখনো মাঠে থিতু হতে পারেননি দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।
তবে ওপেনার ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ১৮ রান করে ফেরেন তিনি। এতে ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। পরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন কাটার কাস্টার মুস্তাফিজ। পরে টানা দুই আঘাত হেনে আফগানদের বেশি উড়তে দেননি রিশাদ। তার তৃতীয় উইকেটে গুলবাদিন নাইবকে ফেরান।
এতে শেষ পর্যন্ত পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানে থামে আফগানিস্তান। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেছেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট শিকার করেছেন রিশাদ। এছাড়া একটি করে উইকেটে পেয়েছেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ।
১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে নাভিন উল হককে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন লিটন দাস। উইকেটে দাঁড়াতেই পারেননি তানজিদ তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ফারুকির শিকার তিনি। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল শান্তও। নাভিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন ৫ বলে ৫ রান নিয়ে। পরের বলেই সাকিব আল হাসানকেও ফেরান নাভিন। চারে নেমে ডাক খেয়েছেন তিনি। সৌম্য ভালো শুরু করলেও ১০ বল খেলে ১০ রান করে ফেরেন।
এছাড়া ঝড় শুরু করে তাওহিদ হৃদয়ও উইকেটে বেশি সময় থাকতে পারেননি। রশিদের শিকার হওয়ার আগে ৯ বলে ১৪ রান করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহও নামের সঙ্গে সুবিচার করতে পারেননি। ৯ বল খেলে ৬ রান করেছেন তিনি। রিশাদকেও ফেরান রশিদ।
সেমির সুযোগ নষ্ট করে ম্যাচ থেকেও ছিটকে যায় বাংলাদেশ। এক প্রান্তে লিটন দাস দাঁড়িয়ে থাকলেও আরেক প্রান্তে ছিল ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল। কোনোরকমে একশ পেরিয়ে অলআউট হয় টাইগাররা। লিটন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫৪ রান করে। দীর্ঘ দিন পর লিটনের ব্যাট হাসলেও দলের কাজে আসেনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ১১৫/৫ (২০)
জয়ের টার্গেট : ১১৪ (১৯) (ডিএলএস)
সেমিতে যেতে টার্গেট : ১১৬ (১২.১/১২.৩/১২.৫)
বাংলাদেশ : ১০৫/১০ (১৭.৫)
ফলাফল: আফগানিস্তান ৮ রানে জয়ী।
বাংলাদেশের একাদশ
তানজিদ হাসান, লিটন দাস (উইকেটকিপার), নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ, জাকের আলী, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তানের একাদশ
রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, গুলবদিন নাইব, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, করিম জানাত, রশিদ খান (অধিনায়ক), নানগায়াল খারোতি, নুর আহমেদ, নাভিন-উল-হক, ফজলহক ফারুকি।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৫জুন২৪/এসএ