‘ইট’স কামিং হোম…’ ইংল্যান্ড খেলছে এমন যে কোনো মেজর টুর্নামেন্ট শুরু হলেই তাদের ভক্ত-সমর্থকদের মুখে মুখে এই চ্যান্ট শুনতে পাওয়া যায়। নিজেদের দলকে সমর্থন জোগাতেই শিরোপা প্রত্যাশী ইংলিশরা এই চ্যান্টে চারিদিক সরগরম করে তোলেন। যদিও অধিকাংশ সময়েই ভক্তদের হতাশ করে থ্রি লায়ন্সরা। এবারও যার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। কেননা ২০২৪ ইউরো ফাইনালে হেরে গেছে ইংল্যান্ড।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে রাত ১ টায় জার্মানির বার্লিনে মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন এবং ইংল্যান্ড। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরও ওয়ারজাবালের ৮৬ মিনিটের গোলে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় এখনো ইউরো কাপ জিততে না পারা ইংল্যান্ডের। এ নিয়ে টানা দুই ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে হোঁচট খেলো গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।
দু’দলের ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর অবশ্য যতটা উত্তাপের আভাস পাওয়া গিয়েছিল, ম্যাচের প্রথমার্ধে তার ছিটেফোঁটাও ছিল না। প্রথমার্ধের শুরু থেকেই বেশ সাবধানে খেলতে থাকে দু’দল। খেলা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো, ঝুঁকি মুক্ত খেলার চেষ্টা করছিলো উভয় দলই। ফলে প্রথম ৪৫ মিনিটে অল্প বিস্তর আক্রমণ দেখা গেলেও কোন দলই প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পায়নি। তাই প্রথমার্ধ গোলশূন্য ড্র’তেই সমাপ্ত হয়।
তবে খেলার দ্বিতীয়ার্ধের চিত্র ছিল প্রথমার্ধের ঠিক বিপরীত। ম্যাচের শেষ ৪৫ মিনিট দু’দলের আক্রমণাত্মক ফুটবলে বেশ জমে ওঠে। বিরতির পর ৪৭ তম মিনিটে স্পেনের দুই তরুণ তুর্কির কল্যাণে লিড নেয় ৩ বারের ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। লামিন ইয়ামালের অ্যাসিস্টে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন নিকো উইলিয়ামস।
গোল খেয়ে সমতায় ফিরতে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় ইংল্যান্ড। একের পর এক আক্রমণের পর অবশেষে ইংলিশদের সমতায় ফেরান বদলি নামা কোল পালমার। ৭৩ তম মিনিটে জুড বেলিংহামের পাস থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক শটে গোল করেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার। খেলায় ১-১ সমতায় ফেরে দু’দল। ৮০ মিনিটের পর যখন মনে হচ্ছিলো খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে তখনই ইংলিশ ভক্তদের হৃদয় ভাঙেন স্পেনের হয়ে বদলি নামা স্ট্রাইকার ওয়ারজাবাল।
লেফটব্যাক মার্ক কুকুরেয়ার ৮৬ মিনিটে দেয়া অসাধারণ এক ক্রস থেকে বল ইংল্যান্ডের জালে পাঠাতে কোন ভুলই হয়নি তার। খেলায় আবারও লিড নেয় স্পেন। আর এই গোলের মাধ্যমে এক যুগের খরা কাটিয়ে স্পেনের ইউরোর শিরোপা জয়ও অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। যদিও নিয়মিত সময়ের শেষ দিকে পালমারের কর্ণার কিক থেকে গোল করার ভালো সুযোগ পেয়ে যায় ইংল্যান্ড, কিন্তু স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন ও মিডফিল্ডার দানি ওলমো দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোয় হতাশ হতে হয় গ্যারেথ সাউথগেটের দলকে।
এই জয়ের মাধ্যমে একমাত্র ইউরোপীয় দল হিসেবে সর্বোচ্চ ৪ বার ইউরোর শিরোপা ঘরে তোলার কীর্তি গড়লো ইংল্যান্ড। তাদের পরেই দ্বিতীয় স্থানে আছে ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। আর টানা দ্বিতীয় বারের মত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল হেরে হতাশার রেকর্ড গড়েছে তারকা খচিত ইংল্যান্ড।
গত বার ঘরের মাটিতে টুর্নামেন্টটির ফাইনালে ইতালির কাছে হারের পর এবার থ্রি লায়ন্সদের হৃদয় ভাঙার কারিগর আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী দল স্পেন। ফলে এখনো পর্যন্ত ইউরোর শিরোপা অধরাই রয়ে গেল এক বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
অন্য দিকে, অধিকাংশের মতে যোগ্যতম দল হিসেবেই ২০১২ সালের পর আবারও ইউরো কাপ ঘরে তুললো স্পেন। আসরে স্পেনের পরিসংখ্যানও অবশ্য তাদের হয়েই কথা বলবে। টুর্নামেন্টে খেলা ৭ ম্যাচের সবকটিতে জয় তুলে নেয়া স্পেন ছাড়া কি এই শিরোপার যোগ্যতর কোনো দাবিদার ছিল?
ক্রিফোস্পোর্টস/১৫জুলাই২৪/এমএস