নাম্বার সেভেন-শুধুই একটা জার্সি। তবে এর সাথে মিশে আছে দুই দশকের এক বিশেষ চরিত্রের। চরিত্রটা অনুমেয়ই, মহেন্দ্র সিং ধোনি। কী ঝড়, কী বৃষ্টি– সবকিছু উপেক্ষা করে ধোনিকে ব্যাট কিংবা গ্লাভস হাতে এক পলক দেখতে স্টেডিয়ামে ছুটে আসা দর্শকরা পায় অনিঃশেষ অনুভূতি৷ যেমনটা পেয়েছিল ওয়াংখেড়ের সেই স্মরণীয় রাতে৷ লাসিথ মালিঙ্গার বলটা গ্যালারিতে আঁচড়ে ফেলার তরতাজা স্মৃতি আজও নাড়া দেয় অনেককেই৷
ক্রিকেট আর মহেন্দ্র সিং ধোনি- এ দুয়ের রসায়ন বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই৷ মাঠের ক্রিকেটে চাপকে পরিণত করেছেন শিল্পে, সতীর্থদের কাছে হয়েছেন আস্থার জায়গা আর গোটা ভারতের কাছে আইকনিক হিরো৷
ভারতের ছোট্ট শহর ‘রাঁচি’র থেকে শুরু। গোলকিপারের গ্লাভস তুলে উইকেট কিপারের গ্লাভস হাতে তুলে নেওয়া, দিলীপ ট্রফি থেকে শুরু করে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে ঢুকতে না পারার হতাশা, সতীর্থ যুবরাজ সিং এর সঙ্গে রেষারেষিসহ আরো নানান টুইস্টে সাজানো মাহির সিনেম্যাটিক জীবন। তবে সবকিছু ফিকে হয়ে যায় এক অদম্য মনোবলের কাছে৷ ঘন মেঘ ভেদ করে ভারতীয় ক্রিকেট আকাশে জন্ম হয় এক ধ্রুবতারার। গ্রেগ চ্যাপেলের চোখে যিনি ছিলেন ‘আউটসাইডার ট্যালেন্ট’।
আরও পড়ুন:
» বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে স্পোর্টস ইনস্টিটিউট, এটি কিভাবে কাজ করে?
» নারী বিশ্বকাপ আয়োজনে বাংলাদেশের বাধা কোথায়?
ফুটবলে যদি হয় পেপ গার্দিওলা, ক্রিকেটের নামটা অবশ্যই মহেন্দ্র সিং ধোনি৷ ক্রিকেটটা দারুণভাবে পড়তে পারার পাশাপাশি, অধিয়নায়কত্বেও ছিলেন ভীষণ পটু। অধিনায়কত্ব নামক শিল্পে রিকি পন্টিংয়ের সাথে অকপটে চলে আসবে ধোনির নামও৷ ফিনিশারের ভূমিকায়ও তালিকার শুরু দিকের নাম ধোনি। ক্যারিয়ারে জিতেছেন ২ বিশ্বকাপ আর ৩ এশিয়াকাপ। রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও। আইপিএলেও সাফল্যের পাল্লায় ভারী নামটা ঐ একজনই। চেন্নাই সুপার কিংসের ট্রফি ক্যাবিনেটে পাঁচ শিরোপা যুক্ত হয়েছে ধোনির সৌজন্যেই৷
পরিসংখ্যানের পাতা উল্টালে ক্যারিয়ারে ব্যাটার হিসেবেও ছিলেন দিনের আলোর মতো উজ্জ্বল। ৩৫০ ওয়ানডে ও নব্বইয়ের ওপর টেস্ট-টোয়েন্টি খেলা ধোনির ক্যারিয়ারের রান সতেরো হাজার৷ কেবল ওয়ানডেতেই গড়টা পঞ্চাশের ওপরে৷
আইপিএলের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে তিনি৷ ২৬৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ৪০ ছুঁই ছুঁই গড়ে রান করেছেন ৫ হাজারের বেশি৷ সবশেষ মৌসুমে ১৪ ম্যাচে মাত্র ৭৩ বল মোকাবেলায় ১৩টি ছক্কা ও ১৪টি চারে ২২০ স্ট্রাইক রেটে মোট ১৬১ রান করেন ধোনি। এমন ধোনিকে দেখতে আসন্ন আইপিএলে মুখিয়ে আছেন ভক্তরা। তবে এক্ষেত্রে চেন্নাইকে যেতে হবে একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে৷
আরও পড়ুন:
» অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি পদকজয়ী অ্যাথলেট কে?
» অলিম্পিকের সর্বকালের সেরা তারকারা
আইপিএল শুরুর পর ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি প্রচলিত নিয়ম ছিল, যেখানে পাঁচ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ক্রিকেটারকে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ক্রিকেটার বিবেচনা করে দলে টানতে পারত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। যা আনক্যাপড প্লেয়ার রুল নামে পরিচিত ছিল৷
২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা ধোনির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতো এই নিয়ম৷ এর ফলে ধোনিকে আনক্যাপড প্লেয়ার হিসেবে দল নিলে চেন্নাইয়ের জন্য কম খরচ হতো৷ তাই ৪৪ ছুঁই ছুঁই ধোনিকে ২০২৫ সালেও খেলাতে চেয়েছিল চেন্নাই। তবে সেটিতে বাকি ফ্রাঞ্জাইজিগুলো আপত্তি জানায়৷ ফলে পুনরায় আনক্যাপড প্লেয়ার রুল চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ তাই আসন্ন আইপিএলে ধোনিকে রাখতে বেশ মোটা অঙ্কের রুপি গুনতে হতে পারে চেন্নাইকে। অবশ্য এ ব্যাপারে ধোনি জানিয়ে দিয়েছেন বিষয়টি তিনি ভেবে দেখবেন। প্রয়োজনে নিজের চেয়ে গুরুত্ব দিবেন দলকে৷
ক্রিফোস্পোর্টস/২০আগস্ট২৪/টিএইচ/বিটি