ব্রাজিলের কাছে একটা জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে রয়েছে জার্মানির বিপক্ষে ৭ গোল খাওয়া সেই ম্যাচটি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সেই ম্যাচটি পরিচিত হয়ে রয়েছে ‘মিনেইরাচো’ নামে। মূলত মিনেইরাও স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ায় এমন নাম। ২০১৪ সালে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলের সেই পরাজয়ের স্মৃতি যেন বারবার ফিরে আসে ব্রাজিলের কাছে।
ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হারের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন রূপে সেই ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দেয়। কখনও অন্য কেনো দলের স্কোর লাইনের কারণে অপমানিত হতে হয় ব্রাজিলকে আবার কখনও রীতিমতো মিমসের মাধ্যমে ট্রলের শিকার হতে হয় ব্রাজিলকে। সেই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও একটি কারণ।
একজন খেলোয়াড়ের প্রসঙ্গে কথা বলতেই আবারও উঠে আসলো ব্রাজিলের সেই লজ্জাজনক স্কোরলাইনের কথা। অস্কার দস সান্তোস এমবাওবা জুনিয়র। ব্রাজিলের সেই লজ্জাজনক ম্যাচের সদস্য ছিলেন তিনি। তবে তাঁকে ব্রাজিল এবং ব্রাজিল ভক্তরা মনে রেখেছে বিশেষভাবে। কারণ ৭ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার ম্যাচে ১টি মাত্র গোল শোধ করতে সক্ষম হয় সেলেসাওরা। আর সেই একমাত্র গোলদাতা ছিলেন অস্কার। লজ্জাজনক ওই ম্যাচে ব্রাজিলের মান কিছুটা বাঁচিয়েছিলেন এই ফুটবলার।
ব্রাজিলের জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সেই ২০১৬ সালেই। যদিও ওই সময়টাতে ক্লাব ফুটবলে করেছেন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। চেলসির হয়ে ২বার প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছেন। জিতেছেন ইউরোপা লিগও। এছাড়া ২০১৩ সালে জিতেছিলেন কনফেডারেশনস কাপও। সেসকল সুখস্মৃতির পর কেটেছে বহুবছর। অনেক বছর পরে নতুন করে আবারও আলোচনায় এসেছেন অস্কার। জাতীয় দলকে বিদায় জানিয়ে অস্কার পাড়ি জমান চীনের ঘরোয়া ফুটবল ক্লাব সাংহাই পোর্টে। এবার সেখান থেকে স্বদেশে ফেরায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলারকে নিয়ে।
আরও পড়ুন:
» দেশের ক্রিকেটে সাকিবের না খেলতে পারা আমাদের ব্যর্থতা : সুজন
» তরুণ কনস্টাসের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে দুঃসংবাদ পেলেন কোহলি
পেশাদার ফুটবলার হওয়ার সূচনাটা হয়েছিল যে সাও পাওলো ক্লাবের হয়ে, ১৫ বছর পরে সেই ক্লাবের ডেরায় ফিরলেন সাবেক এই ব্রাজিল তারকা। ফ্রি এজেন্ট হিসেবে গতকাল অস্কারকে দলে ভিড়িয়েছে সাও পাওলো।
অস্কারের প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলেই ৭-১ গোলের সেই ম্যাচের কথা মনে পড়ে যায়। সবার মনেই প্রশ্ন ওঠে ওই ম্যাচের স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়রা বর্তমানে কে কোথায় আছেন, কি করছেন? সবই এখন জানতে চায় ভক্ত-সমর্থকরা।
সেভেন-আপের সেই ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে মাঠে নামেন তিন বদলিসহ মোট ১৪ জন ফুটবলার। এই ১৪ জন ফুটবলারের মধ্যে দুইজন বাদে বাকি সবাই ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগে খেলে থাকেন। গ্রিসের অলিম্পিয়াকোসের হয়ে খেলেন উইঙ্গার উইলিয়ান। এছাড়া ফরাসি ক্লাব নিঁসের হয়ে খেলছেন ডিফেন্ডার দান্তে।
কেউ কেউ চলে গেছেন অবসরে আবার কেউ কেউ শুধু খেলেন ক্লাব ফুটবলে। ৬ বছর আগেই অবসরে গেছেন ওই ম্যাচের গোলকিপার ৪৫ বছর বয়সী হুলিও সিজার। গত বছর ক্লাব সান ম্যারিনোর ত্রি পেনের থেকে অবসরে গেছেন ৪৩ বছর বয়সী মাইকন। গত ২২ ডিসেম্বর ফ্লামেঙ্গোর সঙ্গে চুক্তি শেষ করেন ৩৭ বছর বয়সী দাভিদ লুইজ। এদিকে ফ্লুমিনেন্সের কোচকে চড় মেরে ক্লাব ছাড়া হয়েছেন মার্সেলো।
৩৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার ফের্নান্দিনিও এখনও খেলছেন ব্রাজিলের ঘরোয়া ক্লাব অ্যাথলেটিকো পারানায়েনেজের হয়ে। ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগের ক্লাব অ্যাথলেটিকো মিনেইরোয়ের হয়ে খেলছেন ৩১ বছর বয়সী বের্নার্দও। একই দলে সতীর্থ হিসেবে রয়েছে ওই দলের আরেক ফরোয়ার্ড হাল্ক। এছাড়া ওই দলে থাকা আরেক ফরোয়ার্ড ৪১ বছর বয়সী ফ্রেড অবসরে গেছেন ২ বছর আগেই। এছাড়াও অস্কারের নতুন দল সাও পাওলোর হয়ে তাঁর সতীর্থ হিসেবে থাকছে ৩৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডার লুইস গুস্তাভো।
৭-১ গোলের ওই ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন ৩ জন ফুটবলার। এদের মধ্যে ছিলেন উইলিয়ান, রামিরেস ও পলিনিও। এদের মধ্যে ২ বছর আগে অবসরে গেছেন ৩৭ বছর বয়সী মিডফিল্ডার রামিরেস এবং পলিনিও করিন্থিয়াসের হয়ে অবসরে গেছেন গত সেপ্টেম্বরে।
সবদিক বিবেচনায় দেখা যায়, ব্রাজিলের সেই লজ্জাজনক ম্যাচের স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়দের মধ্যে এখনও মাঠে নামেন ৭ জন ফুটবলার। এছাড়া ক্লাবহীন রয়েছেন ২ জন। সবমিলিয়ে ১৪ জনের স্কোয়াডে থাকা ৯ জন এখনও খেলেন। তবে ক্লাবহীন ২ জনকে বাদ দিলে সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ যা ৭-১ গোলের সেই ম্যাচটিকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৬ডিসেম্বর২৪/এসআর/বিটি