বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে আমিনুল হকের নাম অবিস্মরণীয়। একজন দক্ষ গোলরক্ষক হিসেবে তিনি দেশের ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। অসাধারণ পারফরম্যান্স, নেতৃত্বের গুণাবলি ও দেশপ্রেম তাকে জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
আমিনুল হকের শৈশব
১৯৮০ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা আমিনুল হক ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। আমিনুলের পরিবারের কেউ ফুটবলার ছিলেন না তবে তার এই আগ্রহকে পরিবারের সদস্যরা সবসময় সমর্থন করেছেন। তিনি জার্মানির কিংবদন্তি গোলরক্ষক অলিভার খানকে অনুসরণ করতেন, বড় হয়ে তার মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
ক্লাব ক্যারিয়ার
১৯৯৪ সালে ঢাকা মোহামেডানের যুব দলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমিনুলের পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু হয়। এই সময় থেকেই তার প্রতিভা সবার নজর কাড়ে। ফরাশগঞ্জসহ বিভিন্ন ক্লাবে খেলে তিনি ধীরে ধীরে একজন পরিপক্ব গোলরক্ষকে পরিণত হন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে পাঁচ মৌসুম খেলেছেন তিনি এবং ক্লাবের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই সময়কালে তিনি একজন দক্ষ গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। পরবর্তীতে ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ঢাকা মোহামেডান এবং শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে খেলে অসংখ্য শিরোপা জয় করেন আমিনুল হক।
আরও পড়ুন
» ভাঙা স্টিক দিয়ে শুরু, গলফার সিদ্দিকুরের গল্পটা যেন স্বপ্নের মতো
» জ্যাকি রবিনসন : যিনি ব্যাট হাতে ধূলিসাৎ করেছেন বর্ণবাদ
» ক্রিকেট বোর্ডে আসা নিয়ে যা ভাবছেন তামিম
আমিনুলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
১৯৯৮ সালে কাতারের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জাতীয় দলে অভিষেক হয় আমিনুলের। এরপর তিনি ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে ৫০টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফ শিরোপা এনে দেন। পেনাল্টি শুটআউটে দুর্দান্ত সেভ করে দলের জয়ের পাশাপাশি সেরা গোলরক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পান তিনি।
২০০৫ সালে তিনি জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন এবং সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে এশিয়ান গেমসে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল আমিনুলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
ইউরোপীয় স্বপ্ন ও অসমাপ্ত কাব্য
২০০৪ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেড আমিনুলের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু আমিনুল হকের ইউরোপীয় ক্লাবে খেলার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ফুটবল ভক্তদের মনে সবসময় কৌতূহল জাগিয়ে রাখে। বিশেষ করে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মতো একটি প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে কেন তার খেলা হয়নি- তা এখনো রহস্য!
এর পেছনে মূলত দুটি কারণকে দায়ী করা হয়
» যোগাযোগের ব্যর্থতা
সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা হয় যোগাযোগের ব্যর্থতা। সে সময় বাংলাদেশের ফুটবলের অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। ফলে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সঙ্গে যোগাযোগে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয় এবং চুক্তি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
» বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অবহেলা
অনেকের মতে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এই চুক্তিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে এমন একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের ইউরোপীয় ফুটবলে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হতে পারেনি।
অবসর জীবন
২০১০ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর গ্রহণের পর আমিনুল হক রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ফুটবল ছাড়াও তিনি সমাজসেবা এবং বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে জড়িত।
পারিবারিক জীবন
আমিনুল হক ব্যক্তিগত জীবনে সাধারণত তার পরিবারকে গণমাধ্যমের আলোচনার বাইরে রেখেছেন। এটি তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে, যা অনেক পাবলিক ব্যক্তিত্ব পালন করে থাকেন।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৬জানুয়ারি২০২৫/আইএইচআর/এসএ