Connect with us
স্পোর্টস বক্স

লর্ডস অনার্স বোর্ড : ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীক

honours board 2
অনার্স বোর্ড। ছবি- সংগৃহীত

ক্রিকেট জগতে অনেক সম্মানজনক স্বীকৃতি থাকলেও, লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম ওঠানো ক্রিকেটারদের জন্য এক বিশেষ গৌরবের বিষয়। এটি কেবল ব্যক্তিগত কৃতিত্বের স্বীকৃতি নয়, বরং ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠার একটি অনন্য সুযোগ।

লর্ডস অনার্স বোর্ড : ইতিহাস ও উৎপত্তি

লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, যা “ক্রিকেটের মক্কা” নামে পরিচিত, লন্ডনের সেন্ট জন’স উড এলাকায় অবস্থিত। ১৮১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাঠে প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। লর্ডসের অনার্স বোর্ড চালু করা হয় ক্রিকেটারদের বিশেষ অর্জন লিপিবদ্ধ করার জন্য। এখানে শুধুমাত্র সেসব ক্রিকেটারের নাম লেখা হয়, যারা লর্ডসের মাঠে টেস্ট ম্যাচে ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি, বোলিংয়ে পাঁচ উইকেট বা দশ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন। পরবর্তীতে এটি ওয়ানডে ক্রিকেটেও যুক্ত করা হয়।

লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম ওঠানোর মানদণ্ড

লর্ডস অনার্স বোর্ডে নাম ওঠানোর জন্য ক্রিকেটারদের যে কীর্তি গড়তে হয়;

ব্যাটসম্যানদের জন্য 

» লর্ডসের মাঠে এক ইনিংসে ১০০ বা তার বেশি রান করা।


আরও পড়ুন 

» পাকিস্তানের সামনে নিউজিল্যান্ডের রানের পাহাড়

» যেভাবে আমেরিকার জাতীয় খেলা হয়ে উঠেছিল বেসবল


বোলারদের জন্য 

» এক ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া।

» একটি ম্যাচে ১০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া। (টেস্ট)

এই নিয়ম শুরুতে শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটের জন্য প্রযোজ্য ছিল, তবে ২০১৯ সালে লর্ডস কর্তৃপক্ষ ওয়ানডে ক্রিকেটেও এই স্বীকৃতি প্রদান শুরু করে।

বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তিরা এবং অনার্স বোর্ড

লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম খোদাই করাটা ক্রিকেটারদের জন্য গর্বের বিষয়। কিছু কিংবদন্তি ক্রিকেটার রয়েছেন, যাদের নাম একাধিকবার এই বোর্ডে উঠেছে।

কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাটসম্যান

»‌ ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (১৯৩০) – ২৫৪ রান করেছিলেন, যা লর্ডসের অনার্স বোর্ডে তার নাম খোদাই করেছে।

»‌ কেভিন পিটারসেন (২০০৮) – দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন।

‌» কুমার সাঙ্গাকারা (২০১৪) – ১১২ রান করে এই তালিকায় জায়গা করে নেন।

কিছু উল্লেখযোগ্য বোলার 

»‌ জিম লেকার (১৯৫৬) – এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়া মাত্র কয়েকজন বোলারের মধ্যে তিনি একজন।

‌» গ্লেন ম্যাকগ্রা (১৯৯৭) – লর্ডসে ৮ উইকেট নেওয়া তার অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অনার্স বোর্ডে স্থান পাওয়া

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য লর্ডস অনার্স বোর্ডে নাম ওঠানো গর্বের বিষয়। এখন পর্যন্ত তিনজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার এই বিরল সম্মান অর্জন করতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের অর্জন 

‌» শাহাদাত হোসেন (২০১০) – ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান।

‌» তামিম ইকবাল (২০১০) – একই ম্যাচে ১০৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নাম লেখান।

‌» মোস্তাফিজুর রহমান (২০১৯) – পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান।

এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বিশাল অর্জন, কারণ লর্ডসের মতো ঐতিহ্যবাহী ভেন্যুতে পারফর্ম করা সব ক্রিকেটারের স্বপ্ন।

লর্ডস অনার্স বোর্ড কেন ক্রিকেটারদের জন্য কীভাবে গৌরবের বিষয়?

» ইতিহাসের অংশ হওয়া – অনার্স বোর্ডে নাম উঠলে সেটি চিরকাল ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকে।

‌» ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বীকৃতি – এটি কোনো ট্রফি বা পুরস্কারের চেয়ে কম কিছু নয়, বরং একটি স্বীকৃতির চূড়ান্ত স্তর।

‌» ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা – যেকোনো ক্রিকেটার লর্ডসে ভালো পারফর্ম করতে চাইবেন, যাতে তার নাম বোর্ডে স্থান পায়।

‌» স্মরণীয় পারফরম্যান্সের দলিল – অনার্স বোর্ডে থাকা মানে ক্রিকেট ইতিহাসের বিশেষ পারফরম্যান্সগুলোর মধ্যে নিজের স্থান নিশ্চিত করা।

লর্ডস অনার্স বোর্ড শুধু একটি বোর্ড নয়, এটি ক্রিকেটের একটি চিরস্থায়ী অংশ। এখানে নাম খোদাই হওয়া মানে ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার এখানে জায়গা করে নিয়েছেন, যা তাদের ক্যারিয়ারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। ভবিষ্যতে আরও অনেক বাংলাদেশি ক্রিকেটার এই সম্মান অর্জন করবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ক্রিফোস্পোর্টস/১৯ফেব্রুয়ারি২৫/আইএইচআর/এসএ

Crifosports announcement
Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in স্পোর্টস বক্স