দেখতে দেখতে শেষের দিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। আগামীকাল (২৯ জুন) ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে এই টুর্নামেন্টের। এবারের আসরের দুই ফাইনালিস্ট ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে দুই শক্তিশালী দলের জমজমাট লড়াই দেখতে মুখিয়ে আছে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব। প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম শিরোপা নাকি ভারতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা? তার জবাব মিলবে খুব শীঘ্রই।
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালের আগে যে বিষয়গুলো জানা দরকার
কে কীভাবে ফাইনালে উঠেছে
বিশ্বকাপের এবারের আসরে গ্রুপ-এ তে ছিল ভারত। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট, কানাডা ও আয়ারল্যান্ড। এ পর্বে তারা ৩টি জয় পায় এবং একটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। এতে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের সেরা দল হিসেবে সুপার এইট নিশ্চিত করে রোহিত শর্মার দল। সুপার এইটে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান। এ পর্বেও সবগুলো ম্যাচ জিতে নিয়েছে তারা। এরপর সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৬৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে অপরাজিত থেকে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ম্যান ইন ব্লুসরা।
অন্যদিকে প্রথম পর্বে গ্রুপ-ডি তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। গ্রুপ পর্বের সবগুলো ম্যাচে জয় নিয়ে সুপার এইটে উঠে প্রোটিয়ারা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র। এ পর্বেও সবগুলো ম্যাচে জয় পায় এইডেন মার্করামের দল। এরপর সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে হারিয়ে অপরাজিত থেকে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটে প্রোটিয়ারা।
আরও পড়ুন:
» ব্যর্থ বিশ্বকাপ শেষে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলতে যাচ্ছেন ৭ বাংলাদেশি
» যে লজ্জার রেকর্ডে তামিম-সৌম্যদের কাতারে কোহলি
আইসিসির বিশ্বকাপ আসরে ফাইনাল অথবা সেমিফাইনালে কতবার মুখোমুখি
আইসিসির বিশ্বকাপ আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সে আসরে ডি ভিলিয়ার্স-ডেল স্টেইনদের হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ধোনি-কোহলিরা।
ফাইনালে যাদের ওপর নজর থাকবে
ফাইনালে ভারতের ব্যাটারদের মধ্যে নজর থাকবে অধিনায়ক রোহিত শর্মার ওপর। চলতি আসরে ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৭ ইনিংসে ২৪৮ রান করেছেন এই বিধ্বংসী ওপেনার। সুপার এইটের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯২ এবং সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইনিংস খেলেছেন তিনি। এছাড়া ৭ ইনিংসে ১৯৬ রান করা সূর্যকুমার যাদব, ১৭১ রান করা ঋষভ পন্তরাও নজরে থাকবেন।
বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজরে থাকবেন জশপ্রিত বুমরাহ। বর্তমানে দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রান খরচায়ও অনেক কৃপণ তিনি। চলতি আসরে ৭ ইনিংসে ৪.১৩ ইকোনমিতে রান দিয়ে ১৩ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার।
আরও পড়ুন:
» দক্ষিণ আফ্রিকার ‘আট’ ও রাজা রবার্ট দ্য ব্রুসের ‘সাত’
» ফাইনাল খেলতে নয়, শিরোপা জিততে এসেছি : শামসি
এছাড়া ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট (১৫) নেয়া আর্শদীপ সিং এবং আক্সার প্যাটেল, কুলদীপ যাদবরাও নজরে থাকবেন। এছাড়া আলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ব্যাট ও বল হাতে যেকোনো সময় ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিতে পারেন। ফাইনালে নজরে থাকবেন এই ক্রিকেটারও।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের মধ্যে নজরে থাকবেন বিধ্বংসী ওপেনার কুইন্ট ডি কক। এবারের আসরে ৮ ইনিংসে ২০৮ রান করেছেন তিনি। যেখানে ২টি অর্ধশতকও রয়েছে। এছাড়া ট্রিস্টান স্টাবস, ডেভিড মিলার ও হেনরিখ ক্লাসেনরাও নজরে থাকবেন।
বোলারদের মধ্যে নজরে থাকবেন আনরিখ নরকিয়া, কাগিসো রাবাদা। এবারের আসরে প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন নরকিয়া। ৮ ইনিংসে ১৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। সমান ম্যাচ খেলে ১২ উইকেট শিকার করেছেন কাগিসো রাবাদা।
বিশেষ নজর থাকবে লেগস্পিনার তাবরাইজ শামসির ওপর। মাত্র ৪ ইনিংস খেলে ১১ উইকেট শিকার করেছেন এই বোলার।
আরও পড়ুন:
» রোহিত-দ্রাবিড়ের বিশ্বাস, ফাইনালে রানে ফিরবেন কোহলি
» বুমরাহকে নিজের থেকে ভালো বোলার বললেন কাপিল দেব
পিচ ও কন্ডিশন যেমন হতে পারে
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে। এই ভেন্যুতে এর আগে টুর্নামেন্টের ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে প্রথম ম্যাচটি সুপার ওভারে গড়ায়, আর বাকী ছয় ম্যাচে আগে ব্যাট করা দল ৩টি এবং পরে ব্যাট করা দলও সমান ৩টি জয় পেয়েছে।
এই ভেন্যুতে সুপার এইটের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিল ভারত। সে ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৪৭ রানে জিতেছিল রোহিত শর্মার দল। তবে এই মাঠে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার।
বৃষ্টির সম্ভাবনা ও রিজার্ভ ডে
ফাইনাল ম্যাচটি স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে। ম্যাচ চলাকালে আকাশ মেঘলা থাকবে এবং প্রবল বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। ম্যাচ চলাকালে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ।
এই ম্যাচে রিজার্ভ ডে থাকছে। তবে ম্যাচ শেষ করার জন্য অতিরিক্ত ১৯০ মিনিট সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রথমদিনে ম্যাচ শেষ করা না গেলে যেখানে খেলা শেষ হবে, রিজার্ভ ডে তে সেখান থেকেই খেলা শুরু হবে। আর বৃষ্টি বাগড়া দিলে বিজয়ী ঘোষণার জন্য উভয় দলকে কমপক্ষে ১০ ওভার ব্যাট করতে হবে।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৮জুন২৪/বিটি