ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর অস্ট্রেলিয়া যেন একই সূত্রে গাথা। কেননা বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলই অস্ট্রেলিয়া। টানা দুই হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেও শেষ পর্যন্ত টফি জিতেই টুর্নামেন্ট শেষ করলো অস্ট্রেলিয়া। আসরে ফাইনালের আগ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা ভারতকে হারের তিক্ত স্বাদ করালো ফাইনালের মতো বড় ম্যাচেই। প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ভারতীয় দর্শকের সামনে রোহিতদের হারিয়ে হেক্সা শিরোপা জয় করলো অস্ট্রেলিয়া।
আজ (রবিবার) ভারতের সবচেয়ে বড় নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে আসরের ফেবারিট দুই দল ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। পুরো আসর জুড়ে প্রথমে ব্যাট করা দলগুলো বেশিরভাগ ম্যাচে জয় পাওয়া সত্ত্বেও ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে কিছুটা ভিন্ন সিদ্ধান্তই নেন অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন এই অজি অধিনায়ক যা প্রথমে কিছুটা ভুল সিদ্ধান্ত মনে হলেও পরবর্তীতে বোলাররা প্রমাণ করে দেন যে তাদের বোলিং এর সিদ্ধান্তটি সঠিকই ছিল। কেননা উড়ন্ত ফর্মে থাকা ভারতের ব্যাটিং লাইন আপকে মাত্র ২৪০ রানের মধ্যেই আটকে দেয় তারা।
২৪১ রান তাড়া করতে নেমে মারকুটে ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে শুরুতেই বিপড়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার শামির বলে আউট হয়ে ফিরে যান মাত্র ৭ রান করে। এরপরও মারকুটে স্বভাবেই খেলে অজিরা। তবে ৫০ রানের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ওয়ার্নার, মার্শরা ফিরে যাওয়ার পর ম্যাচের হাল ধরেন ওপেনিংয়ে নামা ট্রাভিস হেড ও মার্নাস লাবুশেন। প্রথমে তারা কিছুটা ধীর গতিতে খেললেও আস্তে আস্তে রানের চাকা ঘুরাতে থাকেন। তবে তাদের এই জুটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় ভারতের জন্য। অনেক চেষ্টা করেও এই জুটি ভাঙতে পারেনি বুমরাহ-শামিরা। শেষ দিকে এসে হেড আউট হয়ে গেলে ভেঙে যায় ১৯২ রানের জুটিটি। তবে জয়ের জন্য দলের তখন প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান। এরপর ৪২ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
ফাইনালের একমাত্র সেঞ্চুরি করেন ট্রাভিস হেড। ১২০ বলে ১৩৭ রান করেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেয়া লাবুশেন ৫৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ভারতের হয়ে বুমরাহ সর্বোচ্চ ২ টি উইকেট নেন।
এদিকে টস হেরে ব্যাট করতে আসা স্বাগতিকদের হয়ে কাপ্তান রোহিত শর্মা শুরু থেকেই ক্যামিও ইনিংস খেলতে শুরু করেন। কিন্তু দলীয় ৩০ রানের সময় শুবমান গিল ব্যক্তিগত ৪ রানে আউট হয়ে গেলে ইনিংসের প্রথম ধাক্কা খায় ভারত। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত ৩১ বলে ৪৭ রানের ক্যামিও খেলে আউট হয়ে গেলে বিরাটের সাথে গড়া ৪৬ রানের জুটিটিও ভেঙে যায়। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর সাথে রান তোলার গতিও মন্থর হয়ে আসলে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় রোহিত শর্মার দল।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৭ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন কেএল রাহুল, এছাড়া বিরাট কোহলির ৬৩ বলে ৫৪ রান, রোহিতের ৩১ বলে ৪৭ রানের ঝড় এবং সুরিয়া কুমারের শেষ দিকে করা ১৮ রান, কুলদীপের ১০ ও সিরাজের ৯ রানের ছোট ছেট সংগ্রহে ভর করে ২৪০ রানের পুঁজি পায় মেন ইন ব্লুজ। ভারতের পাঁচ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান ছোঁয়ার আগেই সাজ ঘরে ফেরেন।
অজিদের হয়ে দুর্দান্ত বল করে সবচেয়ে বেশি ৩ উইকেট শিকার করেছেন মিচেল স্টার্ক। এছাড়া অজি কাপ্তান প্যাট কামিন্স এবং জশ হ্যাজেলউড উভয়েই ২ টি করে উইকেট নেন।বাকি দুই উইকেট দুই অজি অলরাউন্ডার ম্যাক্সওয়েল এবং জাম্পা সমানভাবে ভাগ করে নেন৷
এ নিয়ে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয় করলো অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ জিতেছিল অজিরা।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের ফাইনাল চলাকালেই দুঃসংবাদ পেলেন মোহাম্মদ শামি
ক্রিফোস্পোর্টস/১৯নভেম্বর২৩/এমটি