কয়েকদিন আগে ক্রীড়া বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে বেশ মর্মাহত কণ্ঠে খালেদ মাহমুদ সুজন বলছিলেন-সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই আমাকে গতি দানব বলে হাস্যরস করেন। এটা আমার কাছে খারাপই লাগে। আমি তো ওই সময় খারাপ ক্রিকেটার ছিলাম না।
শুধু সুজন একা নন, জাতীয় দলের অনেক সাবেক ক্রিকেটাররাই এ প্রজন্মের ক্রিকেট প্রেমীদের ট্রলের শিকার। কদিন আগে তো তামিম ইকবালের অবসর ইস্যুতেও অনেকে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু দলে তার অবদান তো ঠুনকো নয়। তবু কারো চোখের বিষ হয়েছেন।
এই ধরুন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ- ক্রিকেটার হিসেবে পেশাদারিত্ব ও ব্যক্তিত্ব যাকে ক্রিকেট পাড়ায় অনন্য করেছে তাকেও অনেকে খাটো করেছেন! আর এসবের পেছনে বড় একটা অংশই এ প্রজন্মের।
তাহলে প্রশ্ন হলো- আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরও স্বর্ণালি সময় এলে পরবর্তী প্রজন্মও কী মাশরাফি, সাকিবদের অবদানকে ঠুনকো করে দেখবে? এমনটা কেন হচ্ছে বা হবে? ক্রিকেটের যেমন আলাদা জৌলুশ রয়েছে তেমন করে ক্রিকেটারদের সম্মানটাও গড়তে হবে।
সম্মান শব্দটাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেক পিছিয়ে আছে। ইতিহাস ঘেটে দেখুন-কজন ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় নিয়েছেন? উত্তরের পাতা ফাঁকাই থাকবে। তবে কী কেউ যোগ্য ছিলেন না? তবে এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক নাম পাওয়া যাবে। শেষ সময়ে শেকড়েই মাটি খুঁজে পান না ক্রিকেটাররা। অথচ ঘরে সম্মানটা আগে দরকার। এতেই তো প্রজন্মের সেতুবন্ধন দৃঢ় হবে।
বাংলাদেশ ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে এশিয়া কাপে সর্বপ্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। এরপর প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। পরের বছর ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। আর সেবারই আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পায়। ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। যেখানে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের উত্থানের গল্প লেখেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ক্রিকেট ভক্তদের কাছে তারা দুজন অ্যাশ-ম্যাশ নামেই পরিচিত। বিশ্বের বাঘা বাঘা দলগুলোকে বাংলাদেশ হারিয়েছে অ্যাশ-ম্যাশ এর নেতৃত্বে। ২০০০ সাল পরবর্তী এক দশক অ্যাশ-ম্যাশ ম্যাজিক বাঙালিকে ক্রিকেট ক্রেজিতে পরিণত করেছে। আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে যে আবেগ তা একদিনে তৈরি হয়নি। এর ভিত অন্তত এক দশক ধরে গড়েছে।
টিম বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৬টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে আরেকটি বিশ্ব আসর। এবার সাকিব তামিমদের কাধে টিম বাংলাদেশ। যারা পরবর্তী প্রজন্মের ভিত গড়ে দিয়ে যাবেন। তাদের হাত ধরেই দেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন মিরাজ-মুস্তাফিজরা। সামনে নিশ্চই সোনালি ট্রফিটা ধরা দেবে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের হাতে।
তবে দেশের ক্রিকেটকে এই উচ্চ মাকামে পৌঁছে দিতে কয়েক দশক ধরে যে সমর্থন যুগিয়েছন সমর্থকরা, তার প্রতিও পূর্ণ শ্রদ্ধা থাকতে হবে। বাংলার মানুষের ক্রিকেট উন্মাদনার ফলেই এতো পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে দেশের ক্রিকেট। তাই পেশাদারিত্ব ও আবেগ এই দুইয়ের সংমিশ্রণেই হোক বাংলাদেশ ক্রিকেটের সামনের পথচলা। তাহলেই জিতবে ক্রিকেট, জিতবে বাংলাদেশ।
লেখক :
মো. সাইদুল আজীম (Md. Saidul Azim)
সাংবাদিক, ঢাকা পোস্ট
আরও পড়ুন: মুগ্ধ শোধি বললেন, বাংলাদেশ দারুণ ভদ্রতা দেখিয়েছে
ক্রিফোস্পোর্টস/২৫সেপ্টেম্বর২৩/এসএ