অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ব্যাট্যার স্যাম কনস্টাস মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) বক্সিং ডে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেকে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া কনস্টাস অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট খেলোয়াড় এবং সর্বকনিষ্ঠ ওপেনার হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন।
কনস্টাসের এই সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তার ব্যক্তিগত ব্যাটিং কোচ, বাংলাদেশের তাহমিদ ইসলাম। সিডনিতে বসবাসরত তাহমিদ ক্র্যানব্রুক স্কুলে কনস্টাসের সঙ্গে কাজ শুরু করেন এবং তার ব্যাটিং দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
কনস্টাসের সাহসী ব্যাটিংয়ে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল ভারতের পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর বিপক্ষে তার আক্রমণাত্মক শটগুলো। অভিষেক ইনিংসে তিনি ৬৫ বলে ৬০ রান করেন, যেখানে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল। বিশেষ করে, বুমরাহর বলেই স্কুপ এবং রিভার্স সুইপের মতো শট খেলে তিনি দর্শকদের মুগ্ধ করেন।
কনস্টাসের এই সাহসী ব্যাটিংয়ের পেছনে তাহমিদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাহমিদ জানান, কনস্টাস তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী খেলেছেন এবং ব্যর্থতার ভয় না পেয়ে স্বাধীনভাবে খেলতে পছন্দ করেন। তাহমিদ আরও বলেন, ‘সে একজন প্রবৃত্তিনির্ভর খেলোয়াড়। সে অনেক স্বাধীনভাবে খেলে। তার কাছে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সে ব্যর্থ হওয়ার ভয় করে না।’
কনস্টাসের শৈশব এবং উন্নয়নের প্রসঙ্গে তাহমিদ বলেন, ‘আমি তার বাবার সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করি কীভাবে তাকে নিউ সাউথ ওয়েলস অনূর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা করে দেওয়া যায়। এরপর থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়।’ এছাড়া, কনস্টাসের মানসিক প্রস্তুতির জন্য অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার শেন ওয়াটসনের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি।
কনস্টাসের সাদা বলের ক্রিকেটে উন্নয়ন সম্পর্কে তাহমিদ বলেন, ‘সে সবসময়ই টেকনিক্যালি দক্ষ ছিল। তবে শুরুর দিকে দ্রুত রান তুলতে পারত না। তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উন্নতির জন্য আমরা কাজ করেছি।’ এই উন্নয়নের ফলস্বরূপ, কনস্টাস এখন সাদা বলের ক্রিকেটেও উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স প্রদর্শন করছেন।
আরও পড়ুন:
» বিপিএল ২০২৫: পাকিস্তানী তারকাদের নিয়ে বিপাকে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো
» হামজার লেস্টার সিটির ম্যাচসহ আজকের খেলা (২৯ ডিসেম্বর ২৪)
কনস্টাসের আত্মবিশ্বাস সম্পর্কে তাহমিদ বলেন, ‘সে সবসময় আত্মবিশ্বাসী ছিল। সে আগেই বলে দিত, ‘আগামীকাল সেঞ্চুরি করার পর কীভাবে সেলিব্রেট করব বলুন তো।’ এই আত্মবিশ্বাসই তাকে বড় ম্যাচে নিজের খেলা দেখাতে সাহায্য করে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র ১১ ম্যাচ খেলে টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া কনস্টাস তার অভিষেকেই প্রমাণ করেছেন যে তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারেন। তার আক্রমণাত্মক খেলা ও মানসিক দৃঢ়তা ভবিষ্যতে তাকে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।
কনস্টাসের অভিষেক টেস্টে তার এই পারফরম্যান্স অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, তার সাহসী ব্যাটিং এবং বুমরাহর বিপক্ষে আক্রমণাত্মক শটগুলো তাকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার এই সাফল্যের পেছনে তাহমিদ ইসলামের ভূমিকা এবং তাদের যৌথ পরিশ্রম অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আরও পড়ুন:
» আজিজুল তামিমকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত রংপুরের কোচ মিকি আর্থার
» বিপিএলে সেরা পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে থাকতে চান জিসান
তাহমিদ ইসলাম সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে এসেছিলেন, তবে সে বছর কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি। অস্ট্রেলিয়ায় তিনি কোচ হিসেবে নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন এবং সিডনিতে বসবাসরত এই বাংলাদেশি ক্রিকেটার ক্র্যানব্রুক স্কুলে কনস্টাসকে নিয়ে কাজ শুরু করেন।
কনস্টাসের এই সাফল্যের পর, তাহমিদ ইসলামের কোচিং দক্ষতা এবং তার তত্ত্বাবধানে কনস্টাসের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, কনস্টাসের সাহসী ব্যাটিং এবং বুমরাহর বিপক্ষে তার আক্রমণাত্মক শটগুলো ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
কনস্টাসের এই অভিষেক ইনিংস এবং তার কোচ তাহমিদ ইসলামের সঙ্গে তার সম্পর্ক অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে নতুন প্রতিভার উত্থানের ইঙ্গিত দেয়। তাদের যৌথ পরিশ্রম এবং কনস্টাসের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে আরও সাফল্য বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৯ডিসেম্বর২৪/আইআর/এফএএস