মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ফুটবল অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন স্পেনের বিস্ময় বালক লামিন ইয়ামাল। বার্সেলোনার লা মাসিয়া একাডেমি থেকে উঠে আসা এই তরুণ ফুটবলার বল পায়ে নিজ ক্লাবের পর এবার জাতীয় দলের হয়েও রীতিমতো দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। ছাপিয়ে গেছেন সেরাদের সেরা ফুটবলারদের রেকর্ডেকেও।
চলমান ইউরোতে বল পায়ে প্রতিটি ম্যাচে চমক দেখিয়েছেন ইয়ামাল। মাঠের ডান পাশে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের বাড়তি চিন্তার কারণ ছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে রোনালদোর অ্যাসিস্টের রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছেন এই তরুণ। ২০০৪ ইউরো আসরে দুটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন ১৯ বছর বয়সী রোনালদো। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই এবারে ইউরোতে ৩ অ্যাসিস্ট করে এই পর্তুগিজ মহাতারকার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন ইয়ামাল।
এছাড়া গতকাল সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোল করে ইউরোর ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা বনে গেছেন এই তরুণ সেনসেশন। প্রথমে পিছিয়ে পড়ার পর তার দাপুটে গোলে সমতায় ফেরে স্পেন। ফ্রান্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে লা রোজাদের ২০১২ সালের পর ইউরোর ফাইনালে তোলার নায়ক এই ১৬ বছর বয়সী তরুণ।
আরও পড়ুন:
» ফাইনালে আর্জেন্টিনার সামনে বিরল রেকর্ডের হাতছানি
» টানা দ্বিতীয় ফাইনাল নিশ্চিতে রাতে ডাচদের মুখোমুখি ইংলিশরা
এই ম্যাচের পর ইয়ামাল প্রসঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছেন বার্সেলোনার সাবেক আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। ইয়ামালের সঙ্গে তার ছোটবেলার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ইয়ামালের বাবা মুনির নাসরাউই তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মেসির সঙ্গে লামিন ইয়ামালের ছোটবেলার একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন, ‘দুই কিংবদন্তির শুরু।’
মূলত ২০০৭ সালে একটি চ্যারিটি ক্যালেন্ডারের জন্য এই ছবি তোলা হয়েছিল। দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটো সাংবাদিক জোয়ান মনফোর্ট বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যুতে এই ছবিগুলো তুলেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইয়ামালের বয়স যখন মাত্র কয়েক মাস তখন ক্যাম্প ন্যুতে দর্শকদের লকার রুমে এই ছবিগুলো তোলা হয়েছিল। স্থানীয় সংবাদপত্র দিয়ারিও স্পোর্ট এবং ইউনিসেফের বার্ষিক চ্যারিটি কার্যক্রমের অংশ ছিল এটি। এসময় ইয়ামালের পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলেন মেসি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইউনিসেফের সহায়তায় ক্যালেন্ডার বানিয়েছিলাম। এজন্য মাতারোর রোকা ফোন্ডাতে ইউনিসেফ একটি র্যাফেল করেছিল, যেখানে লামিনের পরিবার বসবাস করতো। এই র্যাফেল সাইন আপ করে জয়ীরা ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনার খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পেত। সেখানে তারা সাইন আপ করেছিল এবং জয়ী হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
» বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের দুরবস্থার নেপথ্যে যেসব কারণ
» আমেরিকান কাপের ইতিহাসে ব্রাজিলের যত শিরোপা জয়
মেসির সঙ্গে লামিনের ছবি তোলা প্রসঙ্গে মনফোর্ট বলেন, এই কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। মেসি কিছুটা লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় বাচ্চাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা ভালোভাবে জানতেন না। তাছাড়া একটা বাচ্চা কীভাবে ধরে রাখতে হয় তাও তিনি জানতেন না। এর ফলে কাজটা কিছুটা কঠিন হয়েছিল।
ইয়ামাল যখন কয়েক মাসের শিশু তখন মেসির বয়স ছিল ২০ বছর। এরপর মেসির মতোই বার্সেলোনার লা মাসিয়া একাডেমিতে খেলে মূল দলে খেলার সুযোগ পান তিনি। ২০২৩ সালের এপ্রিলে ১৫ বছর ৯ মাস ১৬ দিন বয়সে বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষেক হয় তার। কিউলসদের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচে ৭ গোল ও ৭টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তার।
ক্লাবে দুর্দান্ত খেলে জাতীয় দলের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের নজর কাড়েন ইয়ামাল। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ১৬ বছর ৫০ দিন বয়সে জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। এরপর ১৬ বছর ৫৭ দিন বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। লা রোজাদের হয়ে ১৩ ম্যাচে ৩ গোল ও ৬ অ্যাসিস্ট রয়েছে এই তরুণ তারকার।
ক্রিফোস্পোর্টস/১০জুলাই২৪/বিটি