সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪ এর আসর বসেছে নেপালের কাঠমুন্ডুতে। এবারের আসরে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছে সেমিফাইনালে। আগামীকাল (রবিবার) ফাইনাল খেলার লক্ষ্যে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে ভুটানের বিপক্ষে। এছাড়াও গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল বাংলাদেশ। অথচ দেশের গৌরব বয়ে আনা এই বাংলার মেয়েদের গত মাসের বেতনসহ বিগত চার ম্যাচ ফি’র টাকা বাকি রেখেছে বাফুফে। কিন্তু বাফুফে অর্ধকোটি টাকা অর্থ ব্যয়ে আয়োজন করেছে বিলাসী নির্বাচনি সভা।
একটি ফুটবল ফেডারেশনের প্রাণ হলো ফুটবলাররা। অথচ সেই ফুটবলারদেরই বেতন বোনাস বাকি রেখে সাফের মতো বড় টুর্নামেন্টে খেলতে পাঠিয়েছে বাফুফে। অথচ ফেডারেশনের কর্তারা রয়েছেন বিলাসী আমেজে। কাউন্সিলরদের মান রাখতে ব্যস্ত ফেডারেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তা।
১৩৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে ২০২৪ সালের বাফুফের নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। এসকল কাউন্সিলরদের সাথে রয়েছে আরও কিছু বাড়তি সহযোগীরাও। এদের সবাইকে এই নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য দেওয়া হবে প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা। এছাড়াও নির্বাচনী এই সভাকে ঘিরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ১৩০ টা রুম ভাড়া নেওয়া হয়েছে।কাউন্সিলর ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের জন্য যেখানে প্রতিটি রুম সাড়ে ৮ হাজার টাকা করে নিয়ে মোট ১১ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ করছে বাফুফে। এছাড়াও আবাসন, টিএ বিলসহ প্রতি একজনের জন্য প্রায় ২০ হাজারের মতো খরচ করছে তাঁরা।
অথচ যারা দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনে সেসকল নারী ফুটবলারদের গতমাসের বেতন এবং ভুটান ও চাইনিজ তাইপে ম্যাচের ম্যাচ ফি প্রদান করতে পারেননি বাফুফে কর্তারা।
বাফুফের ফুটবলারদের বেতন বাকি রেখে বিলাসী আয়োজন সম্পর্কে বাফুফের নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মহিদুর রহমান মেরাজ স্পষ্টভাবেই বলেন, ‘মেয়েদের বেতন বন্ধ রেখে তাঁদের কে সাফে খেলতে পাঠিয়ে দেওয়া একদমই ঠিক হয় নি। এমন বড় টুর্নামেন্টের আগে তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করা উচিত ছিল। কারণ এই মেয়েরাই কয়েক বছর যাবত বাফুফের সম্মান রক্ষা করছে। তাদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করে এমন বিলাসিতা মোটেও কাম্য নয়। নতুন কমিটির কাছে ফুটবলারদের স্বার্থরক্ষাই যেন মূলকথা হয় সেই প্রত্যাশা করছি।’
বাফুফে তাঁর সহযোগী সংগঠনগুলোকে অন্যান্য সময় তেমন সাহায্য করতে না পারলেও নির্বাচনের আগে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। টিএ বিল, আবাসন খরচসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রীও প্রদান করে হয় কাউন্সিলরদের।
কয়েক মাস আগে নারী লিগে চারটি কাউন্সিলর শিপ দেওয়ার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ্য টাকা খরচ করে সভা করা হয়। অথচ ফুটবলারদের বেতন প্রদান করা হয় নি।
গতবছর বিশ্বকাপ প্রাক বাছাইয়ে মালদ্বীপকে হারানোর কারণে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন তৎকালীন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দীন। কিন্তু একবছর পার হলেও জামাল-তপুরা সেই টাকা বুঝে পায়নি।
ফেডারেশন আর্থিকভাবে দুর্বল হলেও বাফুফে কর্তারা সবাই স্বচ্ছল। তারা চাইলে সহজেই সাবিনাদের বকেয়া ১০-১২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক প্রদান করতে পারত। কিন্তু তাঁরা সেটা করেনি। অথচ নারী দলের ট্রফি জয়ের সময় ছবি তুলতে তাঁদের ভূমিকা থাকে অগ্রণ্য।
২০১২ সাল পর্যন্ত বাফুফে ভবনেই নিজেদের নির্বাচনী সভা আয়োজিত হয়। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে নিরাপত্তা অজুহাতে হোটেলে আয়োজন করে বাফুফে। এতে করে মনোনয়ন বিক্রির টাকাসহ ফেডারেশনের তহবিল থেকে একটা বড় অংকের টাকা খরচ করতে হয় বাফুফেকে। কিন্তু নিজস্ব ভবনে করলে এত টাকা খরচ হতো না। বাফুফে বাদে বাকি ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো নিজেদের ক্রীড়া স্থাপনা ভবনেই সভার আয়োজন করে থাকে।
আরো পড়ুন : প্রথমবার এল ক্লাসিকো খেলবেন এমবাপ্পে: যা বললেন রিয়াল কোচ
ক্রিফোস্পোর্টস/২৬অক্টোবর২৪/এসআর