গত ১৬ বছর ধরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিয়মিত দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। শুরু থেকেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে তারকাবহুল দল গড়ায় বেশ নাম রয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির। আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এখন অবধি ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয় বিরাট কোহলিও এই দলেই খেলছেন। অথচ এরপরও একবারের জন্য আইপিএলের সোনালী ট্রফিটা ঘরে তুলতে পারেনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর।
এখন পর্যন্ত মোট তিন বার টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে প্রতিবারই হারতে হয়েছে আরসিবি’কে। মোট ৮ বার প্লে অফে কোয়ালিফাই করেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। প্রায় প্রতিবারই নামে-ভারে শক্তিশালী দল বানিয়েও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে কোহলির দলকে। তাই ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত আইপিএল শিরোপা জিততে পারেননি।
আগামী ২২ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের জন্য চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কেননা আসরের প্রথম ম্যাচেই কোহলিদের প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস। বিরাট কোহলিসহ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ফাফ ডু প্লেসি, রজত পতিদারদের নিয়ে বিধ্বংসী এক ব্যাটিং অর্ডার দাঁড় করিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ২০২৪ সালে আইপিএল জয়ের মিশনে এবার দেখে নেয়া যাক তাদের দলে শক্তির জায়গা ও দুর্বলতার জায়গাটি কোথায়।
শক্তিশালী দিক –
এ ক্ষেত্রে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক তাদের ব্যাটিং অর্ডার। বিরাট, ডু প্লেসি, ম্যাক্সওয়েল, পতিদার, গ্রিনদের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব ফেরিওয়ালাদের পসরা সাজিয়েছে তারা। তাদের ব্যাটিং অর্ডারের গভীরতাও চোখ কপালে তোলার মত। এক দিকে যেমন ডু প্লেসির অভিজ্ঞ অধিনায়কত্ব, অন্য দিকে কোহলির ম্যাচ ধরে খেলার সক্ষমতা। খেলার পরিস্থিতি বুঝে ব্যাট হাঁকানো জন্য আছেন রজত পতিদার। আর মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য অজি অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের খ্যাতি তো গোটা পৃথিবী জুড়েই।
এবারে ব্যাঙ্গালুরুর শিবিরে নতুন সংযোজন আরেক তরুণ অজি অলরাউন্ডার ক্যামেরুন গ্রিন। গত আইপিএলে নিজের ক্যাটিয়ারের প্রথম মৌসুমে এসেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ১৬ ম্যাচে প্রায় ৫৫ গড়ে ৪৫২ রান করেন তিনি। সাথে বল হাতেও ৬ উইকেট শিকার করেন এই তরুণ তুর্কি। তাই বলতেই হচ্ছে, নিজেদের দিনে এই ব্যাটাররা যে কোন প্রতিপক্ষের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়াতে পারবে।
দূর্বল দিক –
মারকুটে ব্যাটিং লাইন আপের পরও খাতা কলমে যে বোলিং লাইন আপ আরসিবি এবার সাজিয়েছে, তারাই হয়তো ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে পারে। পেসার মোহাম্মদ সিরাজের নেতৃত্বে গত নিলামে তারা দলে ভিড়িয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলজারি যোসেফ, নিউজিল্যান্ডের লকি ফার্গুসন ও টম কারানকে। স্থানীয়দের মধ্যে যশ দয়ালকে দলে ভিড়িয়েছে আরসিবি। কিন্তু চিন্তার বিষয়টা এখানেই যে, এই পাঁচ বোলারের প্রত্যেকেরই ওভার প্রতি ইকোনমি ৮.৫ এর উপরে।
তার উপর গত নিলামের আগে তারা অজি পেসার জশ হ্যাজেলউড, ভারতীয় পেসার হার্শাল প্যাটেল ও শ্রীলঙ্কান তারকা অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ছেড়ে দেন। এ নিয়ে তখন অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। এবার দেখা যাক, এই সব তারকা বোলারদের শূণ্যস্থান নতুন বোলিং ইউনিট কতটা পূরণ করতে পারে।
অন্যদিকে, স্পিনিং বিভাগে ব্যাঙ্গালুরুর অবস্থা যেন আরও শোচনীয়। দলে দীর্ঘ দিন ধরে খেলা চাহালকেও এবার ছেড়ে দিয়েছে তারা, হাসারাঙ্গাও নেই। দলে মূল স্পিনার হিসেবে আছেন কর্ন শর্মা ও হিমাংশু শর্মা। এছাড়াও আইপিএলে মোটে ৭ টি ম্যাচের অভিজ্ঞতা থাকা ৩৩ বছর বয়সী স্পিনার স্বপ্নীল সিংকে দলে ভিড়িয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সঙ্গে ব্যাটিং অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও বল ঘুরাতে প্রস্তুত আছেন।
এবার দেখার পালা, এই সব তারকা বোলারদের শূণ্যস্থান নতুন বোলিং ইউনিট কতটা পূরণ করতে পারে। বিরাট কোহলি ও দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর আইপিএল শিরোপা জয়ের পুরনো স্বপ্নটা কি এবারে পূরণ হবে?
আরও পড়ুন: সিরিজ জয়ের মিশনে বাংলাদেশ শিবিরে পরিবর্তন, সম্ভাব্য একাদশ
ক্রিফোস্পোর্টস/১৬মার্চ২৪/এমএস/এমটি