ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে ফুরিয়ে গেল এক মাসেরও বেশি সময়। চার-ছয় আর উইকেটের বন্যায় ক্রিকেটারদের সাথে আনন্দে মেতেছিল ভক্তরাও। গ্রুপপর্বের ৪৫টি ম্যাচ ও ২টি সেমিফাইনালের পর এবার ফাইনালের অপেক্ষা। আগামী রবিবার (১৯ নভেম্বর) অস্ট্রেলিয়া-ভারতের ধুন্ধুমার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। এই ফাইনাল সামনে রেখে মনে পড়ে পুরোনো ১২টি আসরের ফাইনালও।
১৯৭৫ সালে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে এ বছরের আগে মাঠে গড়িয়েছে ১২টি ফাইনাল। তবে সব মিলিয়ে ফাইনাল খেলেছে মাত্র ৭টি দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। চলুন এক নজরে দেখে নিই গত ১২টি ফাইনাল কেমন ছিল…
২০১৯: ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড (লর্ডস)
জমজমাট ও ঐতিহাসিক ফাইনাল বলা হয় এই ম্যাচকে। ৫০ ওভারে ২৪১ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। ৫০ ওভারে ২৪১ রান তোলে ইংল্যান্ড। ম্যাচ টাই হওয়ার পর গড়ায় সুপার ওভারে। ইংল্যান্ড ১৫ রান তোলার পর নিউজিল্যান্ডও তোলে ১৫ রান। আবারও স্কোর সমান হওয়ায় বাউন্ডারি ব্যবধানে ২৬-১৭তে এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। সেটাই ইংল্যান্ডের প্রথম শিরোপা।
২০১৫: অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড (মেলবোর্ন)
২০১৯ সালের মতো ২০১৫ সালেও ফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। সেবার তাদের প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। আগে ব্যাট করে মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। ৭ উইকেটের জয়ে পঞ্চম শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।
২০১১: ভারত-শ্রীলঙ্কা (মুম্বাই)
২৮ বছর পর আবারও বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় ভারত। জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৭৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে গাম্ভীরের ৯৭ ও ধোনির অপরাজিত ৯১ রানে দ্বিতীয় শিরোপা জেতে ভারত।
২০০৭: অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা (ব্রিজটাউন)
টানা চতুর্থ আসরের ফাইনাল ছিল মাইটি অস্ট্রেলিয়ার। বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনাল ম্যাচ হয় ৩৮ ওভারের। গিলক্রিস্টের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ২৮১ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ৩৬ ওভারে শ্রীলঙ্কার ২৬৩ রানের লক্ষ্য দাড়ালেও ২১৫ রান তোলে জয়াবর্ধনের দল। চতুর্থ শিরোপা পায় অজিরা।
২০০৩: অস্ট্রেলিয়া-ভারত (জোহানেসবার্গ)
পুরো আসর জুড়ে শক্তিশালী ক্রিকেট খেলে ফাইনালে উঠে মুখ থুবড়ে পড়ে ভারত। রিকি পন্টিংয়ের ১৪০ ও ডেমিয়েন মার্টিনের ৮৮ রানে ভর করে ৩৫৯ রানের সংগ্রহ পায় অজিরা। জবাবে শেবাগের ৮২ আর দ্রাবিড়ের ৪৭ রানে ভর করে ২৩৪ রানে অলআউট হয় গাঙ্গুলীর টিম। তৃতীয় শিরোপা ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া।
১৯৯৯: অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান (লর্ডস)
৯২ এরপর দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণি আর টম মুডি-ম্যাকগ্রার সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে সাঈদ আনোয়াররা। মাত্র ১৩২ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। ২০ ওভারেই ছোট লক্ষ্য ছুঁয়ে ১২ বছর পর দ্বিতীয় শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।
১৯৯৬: শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া (লাহোর)
ইংল্যান্ড ও ভারতের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখায় শ্রীলঙ্কা। তাই তাদের শক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। ৫০ ওভারে টেইলরের ৭৪ ও পন্টিংয়ের ৪৫ রানে ভর করে ২৪১ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে অরবিন্দ ডি সিলভার অনবদ্য ১০৭ রানে ভর করে প্রথম ও একমাত্র শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় লঙ্কানরা।
১৯৯২: পাকিস্তান-ইংল্যান্ড (মেলবোর্ন)
ইমরান খানের দল পুরো আসরজুড়ে ভালো খেলে। ফাইনালে ইয়ান বোথাম ও প্রিঙ্গিলকে মোকাবেলা করে ২৪৯ রান তোলে পাকিস্তান। ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াদাদের জোড়া ফিফটি ও ১৩৯ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহ এনে দেয়। জবাবে ওয়াসিম আকরাম ও মুশতাক আহমেদের বলে ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। প্রথম ও একমাত্র শিরোপা যায় পাকিস্তানের হাতে।
১৯৮৭: অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড (কলকাতা)
ডেভিড বুনের ৭৫ রানের ইনিংসে ভর করে ৫০ ওভারে ২৫৩ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে মাইক গ্যাটিং, গ্রাহাম গুচের ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকেই যাচ্ছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু ৭ রান দূরে থাকতে শেষ হয় নির্ধারিত ৫০ ওভার। প্রথমবার শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।
১৯৮৩: ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ (লর্ডস)
ক্রিকেট পরাশক্তিকে যুক্ত হয় ভারত। টানা তৃতীয়বার ফাইনালে ওঠা পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শিরোপা উল্লাসে মাতে কপিল দেবের দল। ৬০ ওভারের বিশ্বকাপে হোল্ডিং, মার্শাল, রবার্টসদের বোলিং তোপে ১৮৩ রানে অলআউট হয় ভারত। ছোট লক্ষ্য নিয়েও মদন লাল আর মহিন্দর অমরনাথের কল্যাণে ১৪০ রানেই শেষ হয় ক্যারিবীয়দের ইনিংস। ৪৩ রানের জয়ে প্রথম শিরোপা ছুঁয়ে ফেলে টিম ইন্ডিয়া।
১৯৭৯: ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড (লর্ডস)
টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা যায় ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। এবারও সেই লর্ডসের মাঠ, কিন্তু প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। ভিভ রিচার্ডসের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৬০ ওভারে ২৮৬ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে জোয়েল গার্নারের ৫ উইকেট শিকারের পথে ১৯৪ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ৯২ রানে জিতে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ক্যারিবীয়রা।
১৯৭৫: ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া (লর্ডস)
লর্ডসের মাঠ। প্রথমবার বিশ্বকাপ। টানটান উত্তেজনা। জমজমাট লড়াই। সব মিলিয়ে জম্পেশ এক ফাইনাল। আগে ব্যাটিং করে ক্লাইভ লয়েডের শতকে ভর করে ২৯১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইয়ান চ্যাপেলের ৭৪ রানের ইনিংসে জয়ের খুব কাছে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য ছুতে পারেনি। ১৭ রানের জয়ে প্রথম শিরোপা জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া-ভারত ফাইনাল ম্যাচের আম্পায়ার চূড়ান্ত
ক্রিফোস্পোর্টস/১৭নভেম্বর২৩/এজে