Connect with us
ফুটবল

জুলে রিমে থেকে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি: ফুটবলের এক নাটকীয় ইতিহাস

Jules Rime to the FIFA World Cup
জুলে রিমে ট্রফির সাথে পেলে ও ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির সাথে ম্যারাডোনা। ছবি- সংগৃহীত

পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন দেশ, জাতি ও পতাকার প্রতিনিধিত্বকারী মানুষকে এক সূতোয় গেঁথে ফেলে ফুটবল। একটা সোনালী ট্রফিকে ঘিরে মাঠ ও মাঠের বাইরে লড়াই করে অসংখ্য ফুটবল উন্মাদ৷

প্রায় ৮২ বছরের ফুটবলের ইতিহাসে সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপের মাধ্যমে ফুটবলীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর বসেছে মোট ২২ বার। এতে ৩৬ বছর পর শিরোপা ঘরে তোলে আর্জেন্টিনা। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসের উপাখ্যানে একসময় রচিত হয়েছে ‘ট্রফি’ নামক আরেক ইতিহাস। যে ফুটবলের ইতিহাস মানুষের মাঝে উন্মদনা তৈরি করেছিল, সেই ফুটবলের ট্রফির ইতিহাসেও লুকিয়ে ছিল নানা কাকতালীয় ঘটনা।

সময়টা ১৯৩০ সাল। ল্যাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়েতে বসেছে ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসর। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারানোর পর ‘এস্তাদিও সেন্তেনারিও’ স্টেডিয়ামে উরুগুয়ের হাতে যে ট্রফি তুলে দেওয়া হয়েছিল, সেটির নাম ছিল ‘ভিক্টরি ট্রফি’। সভত্যার সূতিকাগার গ্রিসের বিজয়ের দেবী ‘নাইকি’র অবয়বে তৈরি হয়েছিল সেই বিখ্যাত ‘ভিক্টরি ট্রফি’।

১৯৩০ সালে উরুগুয়ে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পায়।

এরপর আসে ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ৷ পৃথিবীর বাতাসে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বার্তা উড়ে বেড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের মতো আসর বসানো ছিল তৎকালীন ফিফার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ৷

তবুও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রমরমা পরিবেশে ফ্রান্সে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে৷ সে আসরে হাঙ্গেরিকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ইতালি৷ শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণস্বরূপ সেই ট্রফি চলে যায় রোমে। কিন্তু এডলফ হিটলারের কুখ্যাত নাৎসি বাহিনীর কবল থেকে ট্রফিকে রক্ষা করতে ইতালিকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷

তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্ট ও ইতালিয়ান নাগরিক অটোরিনো বারাসি খুব সাবধানে ও গোপনীয়তার সাথে ট্রফিটি রোম থেকে নিয়ে আসেন। যাতে নাৎসি বাহিনী ঘুনাক্ষরেও টের না পায়৷ তিনি ট্রফিটি একটি জুতার বাক্সে করে নিজের বেডরুমে লুকিয়ে রাখেন। ফলে নাৎসি বাহিনী সেই ট্রফিটি আর আত্নসাৎ করতে পারেনি। এরপর ১৯৪৬ সালে তখনকার ফিফার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জুলস রিমটের প্রতি সম্মান রেখে এই ভিক্টরি ট্রফির নামকরণ হয় ‘জুলে রিমে ট্রফি’। কেউ বা আবার ডাকতো ‘কৌউপ ডু মোন্ডে’ নামে।

১৯৬৬ সালের ইতিহাসে এ ট্রফির সাথে ঘটে আরেক বিব্রতকর ঘটনা৷ ১৯৬৬ সালের ২০শে মার্চ, বিশ্বকাপের মাত্র চার মাস পূর্বে লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার সেন্ট্রাল হলের একটি প্রদর্শনী থেকে কাকতালীয়ভাবে চুরি হয়ে যায় ‘জুলে রিমে ট্রফি’।

ফলে বিশ্বকাপের আমেজের সময় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে তখনকার ইংলিশ ফুটবল এসোসিয়েশনের প্রধান জো মেয়ার্সের। তবে সৌভাগ্যবশত চুরি হওয়ার মাত্র ৭ দিন পরেই দক্ষিণ লন্ডনের সাভারবান গার্ডেন থেকে কাগজে মোড়ানো অবস্থায় ট্রফিটি উদ্ধার করে ‘পিকলস’ নামের একটি কুকুর।

তবে এরপর ফিফা ‘জুলে রিমে ট্রফি’র ক্ষেত্রে একটি নিয়ম প্রচলণ করে৷ যদি কোনো দেশ তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে ‘জুলে রিমে’ ট্রফিটি চিরদিনের জন্য নিজেদের করে নিতে পারবে।

১৯৭০ সালের মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফুটবলের জাদুকর পেলের অসাধারণ নৈপুণ্যে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। এর সুবাদে ‘জুলেরিমে’ ট্রফিটি স্থায়ীভাবে নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল।

জুলে রিমে ট্রফি হাতে পেলে

কিন্তু এরপরও এ ট্রফির শেষ রক্ষা হয়নি৷ ১৯৮৩ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহর থেকে ‘জুলে রিমে’ ট্রফি আবার চুরি হয়ে যায়। এরপর ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন জুলে রিমে ট্রফির রেপ্লিকা তৈরি করে নেয়। তবে আজ অব্দি সেই বিখ্যাত ট্রফির হদিস মিলেনি।

১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের পূর্বে ফিফার তত্ত্বাবধানে জুলে রিমে ট্রফির পরিবর্তে তৈরি হয় আরেকটি গৌরবময় ট্রফি৷ এই নতুন ট্রফির ডিজাইনের জন্য ফিফা ভিন্ন সাতটি দেশের শিল্পীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ট্রফির ডিজাইন নিয়েছিল। সর্বশেষ, ইতালিয়ান শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিকার ডিজাইনকৃত ট্রফিকে সর্বসম্মতিক্রমে বেছে নেয় ফিফা। এটিই হলো আজকের গৌরবময় ‘ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ট্রফি’।

ট্রফিটি তৈরি হয়েছিল ইতালির স্টাবিলিমেন্টো আর্টিস্টিকো বেরটোনি কোম্পানিতে। প্রায় ৩৬.৮ সে.মি. উচ্চতা ও ১৮ ক্যারেট সোনা এবং ৬.১ কিলোগ্রাম ওজনের এ ট্রফির বর্তমান মূল্য- প্রায় ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মার্কিন ডলার।

আরও পড়ুন: ২০২৪ সালে বিশ্ব ফুটবলে যত খেলা, পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি 

ক্রিফোস্পোর্টস/০৯জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি

Crifosports announcement
Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ফুটবল