তামিম ইকবাল খান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার পূর্ণ করতে গেলে তার ছবি বেশ বড় আকারেই ছাপতে হবে। শুধু তাই নয়, দেশের ক্রিকেট আকাশে উজ্জ্বল একটি তারাও তিনি। এই তারার কথা বলতেই মনে পড়লো- তামিমের শৈশবের কথা। তামিম এতোটাই ক্রিকেট পাগল ছিলেন, যে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আকাশে তারা দেখতেন। যদি তারা দেখা যেত তবে পরদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা কম থাকতো। এতে করে তার খেলাটা জমতো। তারা দেখে বড় হওয়া তামিম এখন নিজেই তারকা। এই তারকা ক্রিকেটারের আজ ৩৫তম জন্মদিন।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ। পোর্ট অফ স্পেনে ভারতের বিরুদ্ধে ডাউন দ্য উইকেটে এসে জহির খানের বল উড়িয়ে মেরে সীমানা ছাড়া করেছিলেন যে তামিম, সেই তামিমের শুভ জন্মদিন আজ। দেখিয়েছেন নিজের শক্তি, বুঝিয়েছিলেন- তিনি থাকতেই এসেছেন। আছেনও বহুদিন ধরে। হয়েছেন দেশসেরা ওপেনার। এই ওপেনার ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ পৃথিবীর আলো-বাতাসে আসেন।
১৭ বছরের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই খান সাহেব। পোর্ট অব স্পেনে ভারতবধের পর মনে রাখা মতো ইনিংসের মধ্যে রয়েছে- লর্ডসের মাঠে তেড়েফুঁড়ে সেঞ্চুরি উদযাপন করা। এশিয়া কাপের এক-দুই-তিন-চার গুনে গুনে আঙুল দিয়ে নিজের ইনিংস বোঝানো। বিষয়টা এমন যে- তামিম ইকবাল মানে বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিট, কিংবা অনেকখানি বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটার কে? যে কটা নাম আপনার মাথায় আসবে, সবার আগে আসা নামটাই তামিম ইকবাল খান। লর্ডস টেস্টের স্মৃতি শুধু তামিম নয়, যেকোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে একটা সোনালী স্মৃতি। ওই টেস্টের প্রথম ইনিংসে অর্ধশতকের পর লর্ডসের এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- ফিফটি করলে বোর্ডে নাম লেখানো হয় না?’ কর্মকর্তার জবাব, না সেঞ্চুরি লাগবে! পরের ইনিংসে করলেন তেড়েফুঁড়ে এক শতক। উদযাপনে ছিল ভিন্ন এক মাত্রা। যেন বলতে চাইলেন; ‘এই নে, করেছি শতক, আর নামটা লিখে রাখ লর্ডসের অনার্স বোর্ডে!’
সাগরিকাখ্যাত চট্টগ্রামে ১৯৮৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা এই তারকা ওপেনার। বাবার নাম ইকবাল খান, মা নুসরাত খান ইকবাল। বাংলাদেশের আরেক তারকা ক্রিকেটার আকরাম খান তার চাচা। তামিমের বড় ভাই নাফিস ইকবালও দেশের হয়ে খেলেছেন ক্রিকেট। বাংলাদেশের ক্রিকেট গৌরবগাথার অনেক অধ্যায়ই রচিত হয়েছে তামিমের ব্যাটে।
দেশের হয়ে তামিম ইকবালের এখন পর্যন্ত অর্জন
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ রান।
বাংলাদেশের ২য় ক্রিকেটার হিসাবে টেস্টে ২০০ রান করেছেন।
ওয়ানডেতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০টি ফিফটি তামিমের।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সবচেয়ে বেশি ২৫ শতক।
একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ১৫ হাজার রান।
ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানও চোখে পড়ার মতো। তাকিয়ে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। ৭০ টেস্ট খেলে ৩৮.৮৯ গড়ে করেছেন ৫১৩৪ রান। সর্বোচ্চ ২০৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। ১০টি শতকের সাথে ফিফটি হাঁকিয়েছেন ৩১টি।
২৪৩টি ওয়ানডে খেলে রান করেছেন ৮৩৫৭। ৩৬.৬৫ গড়ে রান তুলে ক্যারিয়ারে ১৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ৫৬টি।
৭৮ টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলে ২৪ গড়ে করেছেন ১৭৫৮ রান। একটি শতকের পাশাপাশি ৭টি পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।
একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে তামিম করেছেন ৮ হাজার ওয়ানডে রান। এই রান তুলতে রাহুল দ্রাবিড়, গিলক্রিস্ট, ইনজামাম, শেওয়াগ, গিবস, সাঙ্গাকারা, যুবরাজ, দিলশান, আজহারউদ্দিন, জয়সুরিয়া, জয়াবর্ধনদের মতো তারকাদের চেয়েও কম ইনিংস খেলেছেন।
হয়তো তামিম চেয়েছিলেন যেকোনো ফরম্যাটে দশ হাজার রান করবেন।ওয়ানডে ফরম্যাটে এই সুযোগও ছিল তার। কিন্তু অভিমান, অবসর, ফেরা, ভাঙন, ক্যাপ্টেনসি ছাড়া, আবার ফেরা, সাময়িক বিশ্রাম সব মিলিয়ে মাঠে আর নামা হচ্ছে না খান সাহেবের। ভক্তদের মনেও প্রশ্ন- তামিম আবার কবে ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে?
আর এই জবাবটা শুধু তামিমই দিতে পারবেন। আবারও ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারবেন কীনা সেটারও জবাবও তার কাছেই। জন্মদিনে কোটি ভক্ত মনে মনে চাচ্ছে- ফিরে আসুন খান সাহেব। নামুন মাঠে। বল পাঠান গ্যালারিতে। সবার পক্ষ থেকে ক্রিফোস্পোর্টস পরিবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আপনাকে।
আরও পড়ুন: টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন মুশফিকুর রহিম
ক্রিফোস্পোর্টস/২০মার্চ২৪/এজে