বিশ্বকাপের গল্প রচিত হয় চারবছর পরপর। কিন্তু ফুটবলের সেরা তো প্রতি বছরই বেছে নিতে হয়, ঘোষণা করা হয় বর্ষসেরা তারকার নাম। আর এই ঘোষণার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় যে ট্রফির দিকে, তার নাম ব্যালন ডি’অর। যে ট্রফি কোনো ফুটবলারের সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক হিসেবে যুক্ত হয়। বাড়িয়ে দেয় তার গৌরব।
কিন্তু এই গৌরবময় ট্রফিই নেই ফুটবলের দুই অবিসংবাদিত তারকা পেলে ও ম্যারাডোনার ঝুলিতে। লাখো ভক্তের মনের প্রশ্ন- তিনটি বিশ্বকাপ পাওয়া পেলে ব্যালন ডি’অর পাননি কেন? কেনইবা ক্ষুদে জাদুকর ম্যারাডোনার হাতে ওঠেনি সোনালী রঙের বড্ড সাদামাটা এই ট্রফিটা?
বছরজুড়ে মাঠে রাজত্ব করা ফুটবলারদের ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি এই ট্রফি। যা ঘিরেই অপেক্ষা করে আনন্দ-উচ্ছ্বাস কিংবা রোমাঞ্চ। যে ট্রফি নিয়ে এত উত্তেজনা, এতো আগ্রহ, তা ম্যারাডোনা আর পেলের ভাগ্যে জোটেনি শুধু সিদ্ধান্তের কারণে। কিন্তু কী সেই সিদ্ধান্ত?
ব্যালন ডি অ’রের ইতিহাস বলে- ১৯৫৬ সালে ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর সম্পাদক গ্যাব্রিয়েল হান্তের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল ব্যালন ডি’অর। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন ইউরোপের সেরা ফুটবলার। খুব ঘরোয়াভাবে ভোটাভুটি করে প্রথমবার সেই পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয়েছিল স্ট্যানলি ম্যাথুসের হাতে।
আরও পড়ুন:
» ফুটবল সম্রাটের জন্মদিন আজ, যেভাবে কোটি সমর্থকের মনে পেলে
» যে কারণে ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠেনি ব্যালন ডি’অর
» ব্যালন ডি’অর ২০২৪: কে জিতলেন কোন পুরস্কার
অবশ্য প্রথম দিকে এই পুরস্কারটি পেতে একজন খেলোয়াড়কে দুটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হতো। তাকে ইউরোপীয় হতে হবে, একই সঙ্গে খেলতে হবে ইউরোপের কোনো লিগে। এই নিয়মের কারণেই ফুটবলের ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের এ পুরস্কার কখনোই হাতে নিতে পারেননি পেলে আর ম্যারাডোনা। পেলে তো ইউরোপে খেলতেই আসেননি। আর ম্যারাডোনা ইউরোপ মাতিয়ে গেলেও দক্ষিণ আমেরিকান হওয়ায় এই পুরস্কার পাননি।
এদিকে অনেকেরই প্রশ্ন- ব্যালন ডি’অর জেতা তারকা কত টাকা পান? উত্তর হলো সরাসরি এক টাকাও পান না। শুধু ট্রফিটাই তুলে দেওয়া হয়। তবে কোনো আর্থিক পুরস্কার না পেলেও এটি একটি বিরাট সম্মানা। কারণ ব্যালন ডি’অর জিতলে অনিবার্যভাবে ওই তারকার সাথে বড় কোনো কোম্পানি স্পনসরশিপ চুক্তি করেন। ক্লাব ও দল থেকে বোনাস পান। যা তার আয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ব্যালন ডি’অর বিজয়ীরা ভবিষ্যতে সমস্ত অনুষ্ঠানের জন্য আজীবন প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকেন।
ব্যালন ডি অর দেওয়া হয় কয়েকটা ক্যাটাগরিতে। পুরুষদের পাশাপাশি বর্ষসেরা নারী ফুটবলারকেও দেয়া হয় ট্রফি। বছরের সেরা তরুণ যার বয়স ২১ বছরের নিচে তাকে দেওয়া হয় কোপা ট্রফি। বর্ষসেরা গোলরক্ষকের জন্য রয়েছে ইয়াসিন ট্রফি। সেই সঙ্গে দেয়া হয় বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী কোচের স্বীকৃতি। একইভাবে বর্ষসেরা ক্লাবেও নারী ও পুরুষ দুই বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এছাড়াও বছরের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের দেয়া হয় গোল্ডেন সু বা গার্ড মুলার ট্রফি। আরও দেয়া হয় সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড। বছরজুড়ে ফুটবল মাঠে নানান মানবিক ঘটনা ঘটে। সেসব মানবিক কাজের মধ্যে সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড।
ক্রিফোস্পোর্টস/১নভেম্বর২৪/এজে