ছাত্র-জনতার বিজয়ের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। আর এই অধ্যায়ের পর বারবার সামনে আসছে নোবেল জয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নাম। বাংলাদেশের অন্যতম গুণী এই অর্থনীতিবিদ ক্রীড়াক্ষেত্রেও বেশ পরিচিত মুখ। শুধু পরিচিতই নন, তিনি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও বেশ সম্মানিত। যিনি আবার গ্রামীণ ব্যাংকের এমডিও ছিলেন।
অলিম্পিক গেমসে মশাল বহন করা, অলিম্পিক গেমসে অতিথি হওয়া, বার্সেলোনায় আমন্ত্রণ, অলিম্পিক লরেল পুরস্কার পাওয়াসহ নানাবিধ অর্জন রয়েছে এই নোবেলজয়ীর। চলমান প্যারিস অলিম্পিকে অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্যারিসে গিয়েছিলেন ইউনূস। এর আগে গত ২০-২২ মার্চ ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে তিনি ক্ষুদ্রঋণ, দারিদ্র দূরীকরণে ক্রীড়ার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪ আয়োজনে সামাজিক ব্যবসার ভূমিকা নিয়ে নিজের রূপকল্প তুলে ধরেন।
গত ২০১৬ রিও অলিম্পিকে মশাল হাতে দেখা গিয়েছিল ড. ইউনূসকে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির আমন্ত্রণে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অলিম্পিক মশাল বহনের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস। মশাল হাতে নেওয়ার পর বাংলাদেশের কোটি মানুষের গর্ব ড. ইউনুসকে ঘিরে রাস্তায় উৎসুক মানুষের ভিড় লেগে যায়। কেউ কেউ তার সঙ্গে মোবাইলে সেলফি তুলে সময়টা স্মরণীয় করে রাখেন। পরে মশাল হাতে রিওর রাস্তা প্রদক্ষিণ করেন ড. ইউনুস।
আরও পড়ুন >> অলিম্পিক রিংয়ে থাকা কোন রং কি নির্দেশ করে?
ক্রীড়াক্ষেত্রে ড. ইউনুসের ভালোবাসা আগেও দেখেছে বিশ্ব। ওই বছরের অর্থাৎ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার আমন্ত্রণে ন্যু ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। বিশ্বফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব স্প্যানিশ জায়ান্টদের আমন্ত্রণে ন্যু ক্যাম্পে পা রাখেন বাংলাদেশের কোটি মানুষের গর্ব।
বার্সেলোর নিজস্ব ভেন্যু ন্যু ক্যাম্পে ২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেল জয়ীকে স্বাগত জানান বার্সার ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্ডি কার্দোনার ও পরিচালক ডিডাক লি। তরুণ মানুষদের নিয়ে কাজের জন্য ড. ইউনুসকে অভিনন্দিত করার পাশাপাশি তাকে সামনে পেয়ে সম্মানিত বোধ করার কথা ব্যক্ত করেন বার্সা ভাইস প্রেসিডেন্ট।
আরও পড়ুন >> প্যারিসে দ্রুততম মানবী জুলিয়ান আলফ্রেড
সেখানে বার্সার একটি জার্সিও উপহার পান ড. ইউনুস। ‘PROF. YUNUS’ লেখা জার্সি পরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আসতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশে সবাই বার্সা সমর্থক এবং সবাই এ ক্লাব ও ক্লাবের খেলোয়াড়দের বিষয়ে সবকিছু জানে। এই ক্লাবের ওপর মানুষের আবেগপ্রবণতার দিকটি আশ্চর্যজনক। ক্রীড়া তাদের জন্য স্বপ্ন, বিশেষ করে তরুণদের জন্য। বার্সা মানুষদের একত্রিত করে এবং এ শক্তি অন্যদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে।’
এরপর গত ২০২১ সালে আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করেন ড. ইউনূস। অলিম্পিকের সম্মানসূচক পুরস্কার অলিম্পিক লরেল পান নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশি ড. ইউনূস।ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান ও ইউনুস স্পোর্টস হাব প্রতিষ্ঠার কারণে এই পুরস্কারের জন্য মনোনিত করা হয় তাকে।
আরও পড়ুন >> প্যারিস অলিম্পিক: ব্রাজিলকে আনন্দে ভাসালো ১৬ বছরের কিশোরী
অলিম্পিকের ইতিহাসে সর্বপ্রথম অলিম্পিক লরেল পুরস্কারের প্রচলন শুরু হয় ২০১৬ রিও অলিম্পিক থেকে। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে অলিম্পিক লরেল পেয়েছেন ড. ইউনূস। প্রথমবার এই পুরস্কার লাভ করেন কেনিয়ার সমাজসেবী ও সাবেক অলিম্পিয়ান কিপ কেইনোকে।
অলিম্পিক লরেল পেয়ে অনুভূতির কথা জানিয়ে ইউনূস বলেছিলেন, ‘অলিম্পিক লরেল পেয়ে আমি সম্মানিত ও অভিভূত। এটা খুব দুঃখজনক আপনাদের সঙ্গে টোকিওতে থাকতে পারিনি। আইওসি খেলার সামাজিক প্রসার বাড়ানোকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আপনারা অ্যাথলেটরা পৃথিবী বদলানোর নেতৃত্ব দিতে পারেন।’
অ্যাথলেটদের প্রতি নিজের আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, পৃথিবীকে এসব বিষয়ে শূন্যে নিয়ে আসতে পারেন আপনারা। শূন্য কার্বন নিঃসরণ, সম্পদ কেন্দ্রিভূত করে দরিদ্রতা বাড়ানো শূন্য ও বেকারত্ব দূর করতে সবার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার শক্তি ছড়িয়ে দিয়ে সহায়তা করতে পারেন।’
ক্রিফোস্পোর্টস/৬আগস্ট২৪/এজে