আর্জেন্টিনার ছোট্ট একটি শহর রোজারিও। সেই শহরে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্ম নিলেন এক শিশু। বেড়ে উঠলেন ছোট আঁটসাঁট, ফুটবলপ্রেমী একটি পরিবারে। ছোট্ট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তার অবিশ্বাস্য টান। চার ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় এই ছেলেটি নিজের বড় দুভাই এবং চাচাতো ভাইদের সঙ্গে খেলত। তার পায়ের ছোঁয়াতেই যেন ফুটবল পেলো নতুন জীবন। তিনি ফুটবল জাদুকর খ্যাত লিওনেল মেসি। রোজারিওর সেই ছোট্ট ছেলেটি ফুটবলকে রাঙান বর্ণিল রঙে।
পুরো বিশ্বকে নিজের পায়ের জাদুতে আটকে লিওনেল মেসি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অক্ষয় কালিতে লিখেছেন নিজের নাম। আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী লিও বিশ্বকাপ জিতেছেন কাতারে।
লিওনেল আন্দ্রেস মেসি যেভাবে ফুটবলার হয়ে উঠেন
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার সান্তা ফেতে জন্মগ্রহণ করেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। বাবা হোর্হে মেসি ছিলেন একজন ইস্পাত কারখানার ব্যবস্থাপক এবং মা সেলিয়া কুকিত্তিনি ছিলেন চুম্বক তৈরির কারখানার কর্মচারী। বাবার দিক থেকে তিনি ইতালীয় ও স্পেনীয় বংশোদ্ভূত এবং মার দিক থেকে প্রাথমিকভাবে ইতালীয় বংশোদ্ভূত। ছোটবেলায় তিনি বড় দুভাই রদ্রিগো-মাতিয়াস ও চাচাতো ভাই ম্যাক্সিমিলিয়ানো ও ইমানুয়েল বিয়ানকুচির সঙ্গে খেলতেন। পরে দুজনই পেশাদার ফুটবলার হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুন :
» বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হতে পারে আইপিএল মাতানো ৩ ক্রিকেটারের
» জোড়া গোলে ক্যারিয়ারের ৪৬তম ট্রফি জিতলেন মেসি
» মেসির ইন্টার মায়ামি ছাড়ার গুঞ্জন
চার বছর বয়সে তিনি স্থানীয় ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে যোগ দেন। এরপর ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার জন্য স্পেনে যান। ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলার মেসির আত্মপ্রকাশ। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে ক্লাবের একজন অবিচ্ছেদ্য খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৮-০৯ সালে বার্সেলোনাকে স্প্যানিশ ফুটবলে প্রথম ট্রেবল অর্জন করতে সাহায্য করেন তিনি। সে বছরই ২২ বছর বয়সের মেসি প্রথম ব্যালন ডি’অর জেতেন।
বার্সেলোনায় রাজকীয় মেসি
২০১১-২০১২ মৌসুমে তিনি বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সময় লা লিগা এবং এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের জন্য ইউরোপীয় রেকর্ড গড়েন। মেসি ২০১৮ সালে বার্সেলোনার অধিনায়কত্ব পান পরের বছর রেকর্ড ষষ্ঠ ব্যালন ডি’অর জেতেন। বার্সেলোনায় তার পুরো মেয়াদে ৩৪টি ট্রফি জিতেছেন, জিতছেন দশটি লা লিগা শিরোপা, সাতটি কোপা দেল রেস, চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, সাতটি সুপারকোপা ডি এস্পানাস, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ এবং তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।
মেসি ২০২১ সালের আগস্টে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। সেখানে দুটি লিগ-১ শিরোপা এবং একটি ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়নস জেতেন। মেসি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আমেরিকান ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে যোগ দেন এবং আগস্টে লিগ কাপ অর্জন করেন। তিনি ২০২৩ সালে রেকর্ড অষ্টম ব্যালন ডি’অর পান। ২০২৪ সালে অধিনায়ক হিসাবে মেসি দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা জয় করেন।
মেসি বার্সেলোনার হয়ে ৫২০ ম্যাচে ৭৭৮ অ্যাসিস্টসহ ৬৭২ গোল করেছেন। এছাড়াও পিএসজির হয়ে ৫৮ ম্যাচে ৭৫ অ্যাসিস্টে ৩২ গোল করেছেন এবং ইন্টার মায়ামির জার্সিতে মেসি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২২ ম্যাচে ৩৩ অ্যাসিস্টসহ ২৮ গোল করেছেন। এই নিয়ে পুরো ক্লাব ক্যারিয়ারে মেসি ৬৩২ ম্যাচে ৯১৮ অ্যাসিস্টসহ ৭৪৩টি গোল করেছেন। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ১৫২ ম্যাচে ২১০টি অ্যাসিস্টসহ মোট ১২৫টি গোল করেছেন লিওনেল মেসি।
ক্রিফোস্পোর্টস/৫অক্টোবর২০২৪/এসআর/এসএ