আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিওনেল মেসির শুরুটা ছিল খুবই বেমানান। ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট আকাশি-নীলদের হয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচেই লাল কার্ড দেখেছিলেন মেসি। হাঙ্গেরির বিপক্ষে এক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে বদলি হিসেবে নামার ৪৫ সেকেন্ড পরেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। তখন হয়ত কেউ ভাবেনি লাল কার্ড দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা এই তরুণই একদিন বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করবে।
লাল কার্ড দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা মেসিই এখন আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার গোলসংখ্যা ১০৯টি। এছাড়া যুবদলের হয়েও উজ্জ্বল ছিলেন তরুণ মেসি। ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি দলগত অনেক সাফল্যও বয়ে এনেছেন এই মহাতারকা। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এখন পর্যন্ত ৯টি ফাইনাল খেলে ৫টি শিরোপা জিতেছেন রোজারিও শহর থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার।
এক নজরে মেসির ৯ ফাইনাল
২০০৫ সালের অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ: ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন মেসি। সেবার সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল আলবিসেলেস্তেরা। ফাইনালে নাইজেরিরার বিপক্ষে মেসির জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা যুব দল। সেই আসরে সর্বোচ্চ ছয় গোল করে গোল্ডেন বুটের পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
» লামিন ইয়ামাল ও মেসির ভাইরাল ছবির নেপথ্যের ঘটনা
» চলতি শতকের অপ্রতিরোধ্য দল আর্জেন্টিনা, ১০ বছরে ৬ ফাইনাল
২০০৭ সালের কোপা আমেরিকা: প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে ফাইনালে উঠেছিল মেসি। তবে ভেনেজুয়েলার মারাকাইবোতে কোপার সেই ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায় আলবিসেলেস্তেরা। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম ফাইনালেই হারের স্বাদ পান মেসি। তবে সেই আসরে সেরা তরুণ ফুটবলার ও টুর্নামেন্ট সেরা গোলের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক: ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জয় পায় আলবিসেলেস্তেরা। জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন ডি-মারিয়া, যাকে অ্যাসিস্ট করেছিলেন মেসি।
২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ: আকাশি-নীলদের জার্সিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল মেসি। তবে মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে জার্মানির কাছে অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে আরো একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা হাতছাড়া করে মেসিরা। সেই আসরে টুর্নামেন্টের সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মেসি।
২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা: ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকায় পর পর দুইবার ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। আর দুবারই প্রতিপক্ষ চিলি। ২০১৫ সালে ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে পর ফলাফল না আসায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে গঞ্জালো হিগুয়েন ও এভার বানেগার গোল মিসের কারণে শিরোপা জিতে নেয় চিলি। ২০১৬ সালেও ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে পর ফলাফল না আসায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। তবে এবার বিগলিয়া ও মেসির পেনাল্টি মিসের পর আবারও শিরোপা হাতছাড়া করে আর্জেন্টিনা। পর পর দুইবার স্বপ্নভঙ্গের পর ফুটবল থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি।
আরও পড়ুন:
» কোপা আমেরিকার ইতিহাসে মেসির যত অর্জন
» কোপা আমেরিকার ইতিহাসে আর্জেন্টিনার যত শিরোপা জয়
২০২১ সালের কোপা আমেরিকা: মেসি অবসর ভেঙে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ফিরলেও ২০১৯ কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরে ছিটকে যায় আর্জেন্টিনা। তবুও মনোবল হারাননি তিনি। ২০২১ কোপা আমেরিকায় আবারও ফাইনালে উঠে এবং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শিরোপা জয় করে আর্জেন্টিনা। আর প্রথমবারের মতো বড় শিরোপা জয়ের স্বাদ পান মেসি।
২০২২ সালের ফিনালিসামা: কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন ও ইউরোর চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে ২০২২ সালে আয়োজন করা হয় ফিনালিসামা। সেই ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। সেই ম্যাচে মার্টিনেজ-ডি মারিয়াদের গোলে ইতালিকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জেতে আলবিসেলেস্তেরা।
২০২২ সালের বিশ্বকাপ: আগেই ফুটবল অঙ্গনের প্রায় সকল পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন মেসি। তবে বাকি ছিল সবচেয়ে মূল্যবান বিশ্বকাপ শিরোপা। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর জয় দিয়ে শিরোপা নিয়ে বাড়ি ফেরে মেসিরা। এর ফলে ফুটবলে মেসির সব চাওয়া পূর্ণতা পায়। মেসির নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জয় পায় আলবিসেলেস্তেরা।
চলমান কোপা আমেরিকার মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ক্যারিয়ারের দশম ফাইনাল খেলতে যাচ্ছেন মেসি। সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় যুক্তরাষ্ট্রের হার্ড রক স্টেডিয়ামে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৩জুলাই২৪/বিটি