আনুমানিক ষোড়শ শতকের শেষ দিকে ক্রিকেট খেলার সূচনা হয়। এরপর অষ্টাদশ শতকের দিকে ইংল্যান্ডের জাতীয় খেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে ক্রিকেট। ধীরে ধীরে উনিশ ও বিশ শতকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে জনপ্রিয় এই খেলাটি। খেলাটিকে আকর্ষণীয় করতে রয়েছে অসংখ্য নিয়ম কানুন। এর মধ্যে অন্যতম আউট পদ্ধতি। জেনে নেওয়া যাক- ক্রিকেটে আউট কত ধরনের?
মূলত একটি দল অন্য একটি দলকে পরাস্ত করে আউট করে। অর্থাৎ ক্রিকেট খেলায় ফিল্ডিং দলের কোনো সদস্য বা একজন বোলার যখন আইসিসি স্বীকৃত বৈধ উপায়ে ব্যাটিং দলের সদস্যদের মাঠ থেকে বের করেন— ক্রিকেটের ভাষায় সেটা আউট।
একজন ব্যাটার একবার আউট হলে ওই ইনিংসে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান না। তবে এই ধরনেও রয়েছে ভিন্নতা। একেকজন ব্যাটার একেকরকমভাবে আউট হতে পারেন। মূলত আইসিসির আইন অনুযায়ী একজন ব্যাটারকে ১১টি বৈধ নিয়মে আউট করা যায়।
আরও পড়ুন :
» ক্রিকেটে ‘দুসরা’ কি, কে এই ‘দুসরা’র জনক?
» কে হচ্ছেন বর্ষসেরা ফুটবলার, এক নজরে সংক্ষিপ্ত তালিকা
» অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতে কত টাকা প্রাইজমানি পেল বাংলাদেশ?
বোল্ড আউট
আইসিসির ৩২নং আইন অনুযায়ী কোনো একজন বোলার যখন বৈধ উপায়ে ডেলিভারি দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারের উইকেট উপড়ে ফেলতে পারে তাহলে সেটা হয় বোল্ড আউট। তবে উইকেটে বল লাগার আগে যদি ফিল্ডিং দলের খেলোয়াড়দের বা আম্পায়ারের স্পর্শে উইকেট ভাঙে তাহলে সেক্ষেত্রে আউট হবে না। ১৮৭৭ থেকে ২০১২ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার জন্য বোল্ড আউট ২১.৪% দায়ী।
কট বা ক্যাচ আউট
আইসিসির ৩৩ নম্বর আইন অনুযায়ী ব্যাটার যদি কোনো বৈধ ডেলিভারিকে ব্যাট দিয়ে আঘাত করে এবং বল যদি মাটিতে স্পর্শ করতে না পারার আগে ফিল্ডিং দলের খেলোয়াড়রা মুঠোবন্দি করেন তাহলে সেটা ক্যাচ আউট। আবার যখন বল একইভাবে ব্যাটারের ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষক বা স্লিপে কাছে ধরা পড়ে তখন সেটা কট বিহাইন্ড আউট বলে।
১৮৭৭ থেকে ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কট বা ক্যাচ আউটের হার ৫৬.৯%। যেখানে ফিল্ডারদের কাছে ক্যাচ ধরা পড়েছে ৪০.৬% এবং উইকেটরক্ষকের কাছে ধরা পড়েছে ১৬.৩%।
এলবিডব্লু আউট
আইসিসির ৩৬ নম্বর আইন অনুযায়ী বোলারের কোনো বৈধ ডেলিভারিতে যদি বল ব্যাটারের ব্যাট স্পর্শ না করেই উইকেট বরবার রাখা পায়ে আঘাত করে তাহলে বোলার আম্পায়ারের কাছে আবেদন করে এমন পরিস্থিতিতে আম্পায়ার বিচক্ষণতা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। কখনও প্রযুক্তির সাহায্যও নেওয়া হয়। একেই লেগ বিভোর উইকেট বলে। ১৮৭৭ থেকে ২০১২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই ধরনের আউটের হার ১৪.৩%।
রান আউট
কোনো একজন ব্যাটার যখন বল মেরে মাঠের অন্য প্রান্তে পাঠিয়ে দেন এবং জোরে ছুটে রান নিতে থাকেন এমন মুহূর্তে যদি বল স্টাম্পে আঘাত করার আগে ব্যাটার ভিন্ন প্রান্তের উইকেটের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেটা রান আউট হয়ে থাকে। কখনও কখনও প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয় সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে। আইসিসির ৩৮ নম্বর আইন অনুযায়ী এই আউটে স্ট্রাইক ও নন-স্ট্রাইক উভয় প্রান্তের ব্যাটার আউট হতে পারে। ১৮৭৭ থেকে ২০১২ সালের জরিপ বলছে ধরনের আউটের হার ৩.৫%।
স্টামড আউট
স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটার যদি বোলারকে মোকাবিলা করতে উইকেটের নির্দিষ্ট সীমা পার করে ফেলেন এবং পুনরায় নির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছানোর আগেই যদি উইকেটরক্ষক বল ধরে স্টাম্প ভেঙে দেয় তাহলে সেটা স্টামড আউট হয়। ১৮৭৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জরিপ অনুযায়ী আইসিসির ৩৯ নম্বর আইনে থাকা এই আউটের হার মাত্র ২.০%।
ক্রিকেটে এমন কিছু আউট আছে যেগুলোতে ফিল্ডিং দলের খেলোয়াড়দের তেমন কোনো অবদানই নাই বরং আইসিসি প্রদত্ত নিয়ম ও ব্যাটিং দলের খেলোয়াড়দের ভুলে ধরনের আউটগুলো হয়ে থাকে।
রিটায়ার্ড হার্ট আউট : যখন কোনো ব্যাটার নিজের শরীরে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়ে বা কখনও শারীরিক অসুস্থতা ছাড়া আম্পায়ারের অনুমতি না নিয়ে মাঠ ছাড়ে তাহলে আউট ঘোষণা করা হয়। তবে বিপক্ষ দলের অধিনায়ককে জানিয়ে মাঠ ছাড়লে পুনরায় ব্যাটিং করার সুযোগ পান। পরবর্তীতে ব্যাটিং করতে না পারলে তখন ওই ব্যাটারকে আউট হিসেবে ধরা হয়। আইসিসির ২৫.৪ নম্বর আইনে একথা বলা হয়েছে।
হিট দ্যা বল টোয়াইচ
একজন ব্যাটার যখন পরপর দুবার ব্যাট দিয়ে বলকে আঘাত করবে তখন ওই ব্যাটারকে আউট হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রথমবার মূলত বলকে হিট করার জন্য আঘাত করলেও দ্বিতীয়বার ইচ্ছাকৃত আঘাত করে থাকে ব্যাটার আর সেটার জন্যই মূলত আইসিসির ৩৪ নম্বর আইন অনুযায়ী ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করা হয়।
হিট উইকেট আউট
৩৫ নম্বর আইন অনুযায়ী মূলত একজন ব্যাটার যখন বলে ব্যাট স্পর্শ করা শুরু করার সময় নিজের শরীরের কোনো অংশ স্টাম্পে লাগিয়ে উইকেট উপড়ে ফেলে তখন সেটা হিট উইকেট আউট বলে। তবে যদি কোনো ফিল্ডার এমন কিছু করে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আউট বলে বিবেচিত হবে না।
অবস্ট্রাকটিং দ্যা ফিল্ড
কোনো ব্যাটার যদি কোনো ফিল্ডার বা বোলারকে মাঠের মধ্যে বল ধরতে বাঁধা দেয় বা কোনো কথা বলে দুর্বল করে দেয় তখন এই অবস্থায় সীমা লঙ্ঘনজনিত কারণে ওই ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করা হয়। এটা আইসিসির ৩৭ নম্বর ধারাতে বলা হয়েছে।
টাইমড আউট
কোনো একজন ব্যাটার আউট হওয়ার পর নতুন একজন ব্যাটারকে ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মাঠে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু কোনো নতুন ব্যাটার যদি এটা করতে না পারে তাহলে ওই ব্যাটারকে টাইমড আউট ঘোষণা করা হয়। ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র টাইমড আউট হওয়া খেলোয়াড় হলো এঞ্জেলো ম্যাথিউস। আইসিসির আইনের ৪০ নম্বর ধারা অনুযায়ী তিনি গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন লজ্জার আউট হন।
হ্যান্ডেল দ্যা বল
কোনো ব্যাটার যদি উইকেটরক্ষক বা ফিল্ডারদের বল ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যতীত অর্থাৎ যদি নিজের উইকেট বাঁচাতে বা দূরে ঠেলে দিয়ে রান নেওয়ার চেষ্টা করার উদ্দেশ্যে হাত দিয়ে বল স্পর্শ করে তাহলে তখন সেটা হ্যান্ডেল দ্যা বল আউট বলে। এটা সাধারণত একটা অপ্রচলিত আউট।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৭ডিসেম্বর২৪/এসআর/এসএ