‘ক্রিকেট’ শাব্দিক অর্থে ঝিঁঝিঁপোকা৷ তবে খেলা হিসেবে ক্রিকেটের যাত্রাপথ বেশ পুরোনো৷ এখনকার দিনে ক্রিকেটের যে জনপ্রিয়তা, তার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল ব্রিটিশরা। যদিও ফুটবলের তুলনায় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ঢের পিছিয়ে। বিশ্বের প্রায় সব মহাদেশে বর্তমানে ফুটবলের যে রমরমা বাজার তা ক্রিকেটের নেই৷ তবুও ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ক্রিকেট এক আবেগের নাম৷ যুগ যুগ ধরে এই ক্রিকেট তৈরি করেছিল খ্যাতনামা অনেক তারকাদের। ডন ব্রাডম্যান থেকে শুরু করে কপিল দেব, ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, শচীন টেন্ডুলকার কিংবা হালের ভিরাট কোহলিসহ আরো কত নাম!
যাত্রা বেলায় ক্রিকেট
ক্রিকেটের যাত্রা শুরুর সময়টা নিয়ে অনেকের মাঝেই বিতর্ক রয়েছে৷ কারো মতে ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণীর হাত ধরে শুরু হয় আজকের ক্রিকেট। আবার কারো মতে ক্রিকেট ছিল শোষিত শ্রেণীর খেলা, যা একপর্যায়ে পরিণত হয় শাসকদের খেলায়। তবে ক্রিকেটকে অভিজাত শ্রেণী কিংবা রাজাদের খেলা বলা হলেও ক্রিকেটের যাত্রা শুরু সম্পূর্ণ গ্রামীন পরিবেশ থেকে৷ ইংল্যান্ডের সারে অঞ্চলের কৃষক ও রাখালদের কাছে ক্রিকেট ছিল আনন্দের অনুষঙ্গ। সুযোগ পেলেই ক্রিকেটে মত্ত হয়ে যেত তারা৷ তবে আজকের মতো এতো আধুনিক ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম কিংবা নিয়ম-কানুন তখন ছিল না, কোনো মতে ব্যাটের বদলে তক্তা কিংবা লাঠি দিয়েই চালিয়ে নিত৷
তখন খেলাটির ধরন ছিল অনেকটা এরকম – একটি বল একজন ব্যাটারের দিকে ছুড়ে মারা হতো। আজকের স্ট্যাম্পের মতোই ব্যাটার ঠিক পেছনেই এক ধরনের বস্তু রাখা হতো এবং ব্যাটার কাঠের তৈরি তক্তা বা লাঠি দিয়ে বোলারের বল মোকাবেলা করতো৷ তখনকার ব্যাটগুলো দেখতে অনেকটা আজকের হকিস্টিকের মতো ছিল। ধীরে ধীরে সময়ের তালে ক্রিকেট জনপ্রিয় হতে শুরু করে৷
১৭ শতকের দিকে ইংল্যান্ডে ক্রিকেট মোটামুটি জনপ্রিয় এক খেলাতে পরিণত হয়৷ ১৭৬০ সালে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হ্যাম্পশায়ারের হ্যামব্লিডনে। এরপর ১৭৮৭ সালে যাত্রা শুরু বর্তমান ক্রিকেটের নিয়ম-নীতির প্রণয়নকারী মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের(এমসিসি)। শুরু হয় ক্রিকেটের আধুনিক যুগ।
আধুনিক যুগে ক্রিকেট
ক্রিকেটে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের মধ্যে দিয়ে৷ ১৭১৯ সালে ইংল্যান্ড জাতীয় দল ও কেন্ট দলের মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় আধুনিক ক্রিকেটের পথচলা৷ তবে তখনো ক্রিকেট পুরোপুরি আধুনিক হয়ে উঠেনি। কারণ তখন আজকের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নিয়মে খেলা হতো না৷ ১৭৪৪ সালের দিকে ক্রিকেটে মোটামুটি আধুনিকতার ঝাঁপটা লাগতে শুরু করে৷ কালের পরিক্রমায় ক্রিকেট ক্রমেই জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
১৮৭৭ সালের দিকে টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ১৮৭৭ সালের ১৫ ই মার্চ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেও দুই দল মুখোমুখি হয়৷ দুই ম্যাচেই জয় পায় অস্ট্রেলিয়া৷
ভারতীয় উপমহাদেশে ক্রিকেট
ভারতীয় উপমহাদেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে থাকায় এ অঞ্চলে ব্রিটিশদের হাত ধরেই ক্রিকেটের সূত্রপাত হয়। তবে শুরুর দিকে কেবল ব্রিটিশরাই ট খেলায় অংশগ্রহণ করতো। পরবর্তীতে ক্রিকেটে ভারতীয়দেরও অংশগ্রহণ শুরু হয়৷
১৯ শতকের প্রথম দিকেই ক্রিকেট কলকাতা, মুম্বাই ও মাদ্রাজে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে৷ এর মাঝে ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কাউন্সিল৷ পরবর্তীতে সংস্থাটির নাম থেকে ‘ইম্পেরিয়াল’ শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল৷
১৯০৯ সালের দিকে ক্রিকেট খেলতে ইংল্যান্ড সফর করে ভারত। তখন ‘অল-ইন্ডিয়া’ নামে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দেন রনজিৎ সিং৷ ভারতে ক্রিকেট যাত্রার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এই রনজিৎ সিং৷ পরবর্তীতে তাঁর নামেই ১৯৩৫ সালের দিকে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ঘরোয়া টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফির নামকরণ করা হয়৷ ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ অভিষেক আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ভারতের অভিষেক হয়। এভাবেই সময়ের পরিক্রমায় এদেশেও জনপ্রিয় হতে থাকে ক্রিকেট।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট যখন টি-টোয়েন্টি লিগের দখলে
ক্রিফোস্পোর্টস/৫ফেব্রুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি