মাত্র ৫০ লক্ষ মানুষের দেশ নিউজিল্যান্ড। তাসমান সাগর পাড়ের দেশটির জাতীয় খেলা রাগবি। রাগবি আর ফুটবলের পরেই কেবল নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেটের নাম নেওয়া হয়৷ জনপ্রিয়তায় নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেট পিছিয়ে থাকলেও, বৈশ্বিক ক্রিকেটীয় আঙিনায় তারা অন্যতম জনপ্রিয় দল৷ গত কয়েক বছরে আইসিসি ইভেন্টে দারুণ পারফরম্যান্সের জানান দিচ্ছে দলটি৷ এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের স্বাদ না পেলেও কিউইরা সর্বোচ্চ ১০ বার সেমিফাইনাল খেলেছে। এর মধ্যে ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে রানার্সআপ ও ২০২১ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়ন্সশীপ জয় করে দলটি৷
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ব্যাগি গ্রিনের মতো নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার স্টিফেন ফ্লেমিং, মার্টিন ক্রো, রস টেইলর কিংবা হালের কেন উইলিয়ামসনদের মাথায় মুকুট হিসেবে শোভা পায় ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’। যা পরবর্তীতে ক্রিকেটে হয়ে ওঠে দেশটির ডাক নাম৷ কিন্তু কিভাবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতীক হয়ে ওঠে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ নামটি?
নিউজিল্যান্ডের জাতীয় রঙ হিসেবে পরিচিত কালো ও সাদা৷ যেকোনো ধরনের খেলার জার্সিতে এ দুটি রঙের ব্যবহার দেখা যায়৷ ক্রিকেটও এর ব্যতিক্রম নয়৷ দলটির জার্সির আভিজাত্যের রঙ হিসেবে শোভা পায় কালো রঙ৷ ১৮৯২ সালের দিকে নিউজিল্যান্ড রাগবি ফুটবল ইউনিয়ন গঠিত হয়৷ তখন থেকেই রাগবি দলের জন্য কালো রঙের জার্সি বেছে নেওয়া হয়। ১৯২০ সালে নিউজিল্যান্ড প্রথমবার অলিম্পিক খেলতে গিয়ে কালো রঙের জার্সি পরে। এবং সে সময় তারা এ জার্সি পরে পদকও জেতে৷ এরপর ক্রমান্বয়ে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে কালো রঙের জার্সি৷
যদিও শুরুর দিকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের জার্সির রঙ কালো ছিল না। ১৯৮০ থেকে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের জার্সির প্রতীক ছিল ধূসর৷ এরপর ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড নিজেদের ঐতিহ্যবাহী ধূসর ও সাদা রঙকে জার্সি হিসেবে বেছে নেয়৷ তবে ২০০৩ বিশ্বকাপ থেকে পুরোদমে কালো জার্সিকেই নিজেদের ক্রিকেটীয় প্রতীক হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে৷ তখন থেকে নিউজিল্যান্ড নামের সাথে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ নামটিও জনপ্রিয় হতে থাকে৷
অবশ্য এর আগেই ১৯৯৮ সালে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ নামটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ ‘ক্লিয়ার কমিউনিকেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সে সময় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের স্পনসর হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি নিউজিল্যান্ড দলের জন্য একটি ডাক নাম বেছে নিতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় ব্ল্যাক-ক্যাপস নামটি সর্বজনস্বীকৃত হয়৷ এরপর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটও (এনজেডসি) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ নামটিকে স্বীকৃতি দেয়। ক্রিকেট ছাড়াও নিউজিল্যান্ডের রাগবি টিম ‘অল-ব্ল্যাকস’ ও হকি টিম ‘ব্ল্যাক স্টিক’ নামে পরিচিত৷
তবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল শুধু ব্ল্যাক ক্যাপস নয়, ‘কিউই’ নামেও সমধিক পরিচিত। ১৯০০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নিউজিল্যান্ডকে একটি দেশ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে কার্টুনিস্টরা কিউই পাখির ছবি ব্যবহার করতে থাকে। কিউই আসলে দেশটির জাতীয় পাখির নাম। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কিউই পাখি অনন্য এবং রহস্যময়। দেশটির মাওরি অধিবাসীরা এ পাখিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। কারণ মাওরি অধিবাসী প্রধানদের পরিহিত মূল্যবান চাদর তৈরিতে কিউই পাখির পালক ব্যবহৃত হয়। তাই পাখির নাম থেকেই দেশটির অধিবাসীরা কিউই নামে পরিচিত হয়ে ওঠে৷
এছাড়া, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ড সেনাদের উপনাম ছিল ‘কিউই’। যুদ্ধের দামামা শেষ হলেও পরবর্তীতে পুরো জাতির জন্যই কিউই নামটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। বৈশ্বিক ক্রিকেটাঙ্গনে এই কিউই পাখির অস্তিত্বের ঝান্ডা সগৌরবে এখনো উড়িয়ে বেড়াচ্ছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল৷
আরও পড়ুন: জুলে রিমে থেকে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি: ফুটবলের এক নাটকীয় ইতিহাস
ক্রিফোস্পোর্টস/১০জানুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি