ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে অংশ নিতে ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১৫ সদস্যের দল নিয়ে ভারতে উড়াল দিয়েছে সাকিব বাহিনী। শেষ মুহূর্তের দল ঘোষণায় বাংলাদেশের তামিমবিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা হয়নি দেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবালের। পুরোপুরি ফিট না থাকার কারণ দেখিয়ে তামিমকে বাদ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় আগের দিনের ঘোষণা করা দল নিয়েই ঢাকা ছাড়ে টিম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার পর এসব নিয়ে তামিম ইকবাল নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় কথা বলেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর মানসিকভাবে আমি খুব খুশি ছিলাম। গত চার-পাঁচ ম্যাচের যত বিষয় সব ভুলে গিয়েছিলাম। ম্যাচ শেষে আমার ইনজুরির অবস্থা ফিজিওকে জানাই। তখন ড্রেসিংরুমে নির্বাচকরা আসেন। আমি তাদের বলেছিলাম, আমার অবস্থা সামনে এমনই থাকবে। আমাকে দলে রাখলে বিষয়টি মাথায় রাখবেন। হোটেলে যাওয়ার পর আমাকে ফিজিও পর্যবেক্ষণ করেন।’
এরপর ফিজিওর রিপোর্টে কী ছিল তাও পরিষ্কার করে দেন তামিম, ‘ফিজিও’র রিপোর্টে ছিল প্রথম ম্যাচের পরে আমার ব্যথার অবস্থা কী, দ্বিতীয় ম্যাচের পর কী হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২৬ তারিখের (নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচ) ম্যাচের দিন অবস্থা কেমন হতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, খেলার জন্য আমি প্রস্তুত। তবে আমাকে বলা হয়েছিল আমি রেস্ট নিতেও পারি।’
কিউইদের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডেতে রেস্ট নেওয়ার বিষয়ে দেশসেরা ওপেনার বলেন, ‘শেষ ম্যাচটায় রেস্ট নিলে সেক্ষেত্রে আমার প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য রিহ্যাভ হয়ে যেত এবং বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচও আমি খেলতে পারবো এমনটা ছিল রিপোর্টে। আমি কোথাও বলিনি যে, পাঁচটা ম্যাচ খেলবো বা পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারবো। এটা মিথ্যা। জানিনা কিভাবে এটি মিডিয়াতে ছড়ানো হয়েছে। শুধু তিন নির্বাচককে জানিয়েছিলাম আমি ফিট না, দল ঘোষণার সময় যেন এটা মাথায় রাখেন।’
‘আমি নিশ্চিত কালকে নান্নু ভাইও কথাটা ক্লিয়ার করছে। আমি জানি না এই কথাটা মিডিয়াকে খাওয়ানো হলো বা কে করছে, কিন্তু এই জিনিস একদমই মিথ্যা। যে জিনিস আমি নির্বাচকদের বলেছিলাম যে আমার শরীর এরকমই থাকবে। এখন যেরকম অবস্থায় আছে। আমার ব্যথা থাকবে। আপনারা যখন দলটা নির্বাচন করবেন, তখন এটা মাথায় রাখবেন।’
তামিম আরও বলেন, ‘আমি কোনো কন্ট্রোভার্সি চাইনি। বিশ্বকাপের মাঝেও যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, তাই যাতে কোনো ঝামেলা না হয় তাই আগেই জানিয়ে রেখেছিলাম।’
বিসিবির পক্ষ থেকে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাবও দেওয়া হয় বলে জানান তামিম, ‘বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করে আমাকে বললো, ‘তুমি বিশ্বকাপে যাবা, কিন্তু তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলাতে হবে। একটা কাজ করো, তুমি প্রথম ম্যাচ খেলিও না। ‘‘আমি বলেছি, এখনো ১২/১৩ দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে তো আমি ভালো অবস্থায় থাকবো। তো কি কারণে খেলবো না?’’ তখন বললো, ‘’আচ্ছা তুমি যদি খেলো তাহলে আমরা পরিকল্পনা করছি, তুমি নিচের দিকে খেলবা।’’
‘তাদের প্রস্তাব শুনে আমি তো অবাক, জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন ধরনের কথা। এরপর বলা হলো মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করানোর কথা। অথচ আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে খেলে আসছি। আমাকে জোর করে করে অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হচ্ছে, ইচ্ছে করে। এটা ঠিক হলো এখন নতুন আরেকটা জিনিস বলি। এটা আমি অনুভব করেছি। এসব নোংরামি, আমি কোনো নোংরামির মাঝে থাকতে চাই না। এরপর ব্যক্তিগত নানা জায়গা থেকেও আমাকে এসব কথা বলা হলো’, আরও যোগ করেন তামিম।
তামিম বলেন, আমি কোনো সময়, কোনো মুহূর্তে কাউকেও বলিনি যে আমি পাঁচ ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। এই কথাটা কোনো সময় হয়নি। এটা একটা মিথ্যা কথা ভুল কথা। আমি জানি না কে বা কাহারা মিডিয়াকে কথাটা বলছে।
তামিম বলেন, আপনারা জানেন আমি অবসরে যাই। অবসরে যাওয়ারও কারণ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কারণেই আমি আবার অবসর থেকে ফিরি। এই দুই মাস আমি প্রচণ্ড পরিমান কষ্ট করে নিজেকে ফিট করার চেষ্টা করি। ফিজিও ট্রেইনারা যারা ছিলেন তারা আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, তারা আমাকে যা যা করতে বলছে যে সেশনে আমি তা তা করি নাই নিজেকে ফিট করার জন্য।
এর আগে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তামিম লেখেন, ‘আজকে বাংলাদেশ জাতীয় দল ভারতের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পর একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আমি সবাইকে বিগত কয়েক দিনের ঘটে যাওয়া ব্যাপারে কিছু কথা বলবো। গত কয়েক দিন অনেক কথাই গণ মাধ্যমগুলোতে এসেছে। আমি মনে করি বাংলাদেশ দলের এবং আমার ভক্ত – সমর্থক সবারই পরিষ্কার ভাবে সব কিছু জানার অধিকার রাখে।’
এদিকে বাংলাদেশ দল সরাসরি পৌঁছাবে ভারতের গোয়াহাটিতে। সেখানে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। পরে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে আগামী ২ অক্টোবর চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের মুখোমুখি টাইগাররা। দুটি ম্যাচই শুরু হবে দুপুর আড়ইটায়।
এদিকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্দা উঠবে এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপের। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। বিশ্ব এ আসরের পর্দা নামবে ১৯ নভেম্বর।
অপরদিকে আগামী ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড :
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহ অধিনায়ক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদী হাসান, তানজিদ হাসান ও তানজিম হাসান।
আরও পড়ুন: পুরোপুরি ফিট নন তবু দুই ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ দলে রেখেছে শ্রীলঙ্কা!
ক্রিফোস্পোর্টস/২৭সেপ্টেম্বর২৩/এসএ