ক্রিকেট বিশ্বে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার লড়াই মানেই উত্তেজনা, রোমাঞ্চ আর নাটকীয় মুহূর্তের এক মহাসমারোহ। ঠিক এমনই এক সিরিজ শেষ হলো সম্প্রতি, যেখানে ৫ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩-১ ব্যবধানে জয়লাভ করলেও পুরো সিরিজজুড়েই ছিল চমকপ্রদ ঘটনা। তবে এই সিরিজ ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে অন্য কারণে—গত ১০০ বছরের মধ্যে কোনো ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে কম বল খেলা হয়েছে।
সিরিজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই ছিল অনিশ্চয়তা, নাটকীয়তা এবং রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ, পিচের অবস্থা ও ক্রিকেটারদের দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে প্রতিটি ম্যাচেই ঘটে গেছে চমক।
সিরিজ শুরু হয় ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর পার্থে। পাঁচটি ম্যাচে মোট ৭৬৬৪টি বল খেলা হয়েছে, যা গত এক শতাব্দীর মধ্যে ৫ ম্যাচের কোনো সিরিজে সর্বনিম্ন। এর আগে ১৯২৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজে ৭৫৫৯টি বল খেলা হয়েছিল। তবে এর চেয়েও কম বল খেলার রেকর্ড রয়েছে আরও আগে।১৯০২ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে মাত্র ৬৫৪৫টি বল খেলা হয়েছিল।
সিরিজের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় পার্থে। ভারত এই ম্যাচে ২৯৫ রানের বড় জয় তুলে নেয়। টেস্টটিতে ১৭৬৫ বল খেলা হয়। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অসাধারণ পারফরম্যান্সে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলে ভারত। তবে এই ম্যাচই ছিল ভারতের একমাত্র জয়।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি হয় অ্যাডিলেডে। এই ম্যাচটি ইতিহাস গড়ে সবচেয়ে কম বলে শেষ হওয়া টেস্ট হিসেবে। মাত্র ১০৩১টি বল খেলে শেষ হয় পুরো টেস্ট ম্যাচটি। এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা দারুণ ছন্দে ছিলেন। মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দেন।
অস্ট্রেলিয়া সহজেই জয় তুলে নেয় এই ম্যাচে। তৃতীয় টেস্টটি হয় ব্রিসবেনে। তবে ম্যাচটি বারবার বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হওয়ায় খুব বেশি বল খেলা হয়নি। টেস্টে মোট ১২৯৭টি বল মাঠে গড়িয়েছে। বৃষ্টি বাধা দিলেও ম্যাচটি ছিল রোমাঞ্চকর। দুই দলই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে। চতুর্থ টেস্টটি ছিল মেলবোর্নে। এই ম্যাচে খেলা হয় সিরিজের সর্বোচ্চ ২৪৩০টি বল। তবে ম্যাচটি ছিল দুই দলের বোলারদের দাপটের প্রদর্শনী।
আরও পড়ুন:
» রোমাঞ্চকর ম্যাচে লিভারপুলের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরল ইউনাইটেড
» বিপিএলে সিলেট পর্বের ম্যাচসহ আজকের খেলা (৬ জানুয়ারি ২৫)
মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ও অশ্বিন দারুণ বোলিং করেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস লাবুশেনের ব্যাটিং পারফরম্যান্স তাদের জয় এনে দেয়। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি হয় সিডনিতে। এই ম্যাচে খেলা হয় ১১৯৭টি বল টেস্টটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী।
অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচটি জিতে সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নেয়। তবে ম্যাচটি ছিল সম্পূর্ণ নাটকীয়তায় ভর। শেষ দিন ভারতের ব্যাটসম্যানদের দ্রুত আউট করে জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া।
সিরিজে বল খেলার সংখ্যা কম হওয়ার কারণ ছিল বিভিন্ন। প্রতিটি ম্যাচের পিচই ছিল বোলারদের জন্য সহায়ক। ফলে ব্যাটসম্যানরা খুব বেশি সময় টিকতে পারেননি। ব্রিসবেন টেস্টে বারবার বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়েছে।দুই দলই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে। ফলে উইকেট দ্রুত পড়ে গেছে এবং ম্যাচ দ্রুত শেষ হয়েছে।
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার এই সিরিজটি শুধুমাত্র নাটকীয়তার জন্যই নয়, সবচেয়ে কম বল খেলা সিরিজ হিসেবেও ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
১০০ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা বিরল। তবে এই সিরিজ প্রমাণ করেছে যে টেস্ট ক্রিকেট এখনো উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত উপহার দিতে পারে।এই সিরিজ থেকে দুই দলই অনেক কিছু শিখেছে। অস্ট্রেলিয়া তাদের দুর্দান্ত ফাস্ট বোলিং আক্রমণের কারণে সিরিজ জিততে পেরেছে। অন্যদিকে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো।অস্ট্রেলিয়া তাদের দাপট ধরে রাখতে চাইবে আগামী সিরিজগুলোতে। অন্যদিকে, ভারত নিজেদের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে চাইবে।
ভারত-অস্ট্রেলিয়ার এই সিরিজটি ছিল টেস্ট ক্রিকেটের একটি বিশেষ অধ্যায়। নাটকীয়তা, উত্তেজনা, ইতিহাস এবং পরিসংখ্যান—সবকিছুই এই সিরিজে ছিল। ১০০ বছরে সবচেয়ে কম বল খেলেও সিরিজটি ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে টেস্ট ক্রিকেট এখনো রোমাঞ্চকর, এবং এটি ভবিষ্যতেও ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদন দিতে থাকবে।
ক্রিফোস্পোর্টস/৬জানুয়ারি২৫/আইআর/এফএএস