গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা ১০ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শিরোপা হাতছাড়া করে ভারত। ঘরের মাঠে শিরোপা জয়ের খুব কাছে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় রোহিত-কোহলিদের। অবশেষে প্রায় ১১ বছরের শিরোপা খরা কাটাল ভারত। ২০১৩ সালে পর আইসিসির প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বাদ পেল তারা। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে অপরাজিত থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফাইনালে ৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল ম্যান ইন ব্লুসরা।
শনিবার (২৯ জুন) কেনসিংটন ওভালে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে রোহিত-কোহলিরা। জবাবে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান তুলতে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন দুই ওপেনার বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। তবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ২৩ রানে মাথায় কেশভ মহারাজের শিকার হয়ে ফিরে যান অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এরপরই বাধে বিপত্তি। একই ওভারে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসা ঋষভ পন্ত। বিপত্তি কাটিয়ে ওঠার আগে আরো একটি উইকেট হারায় ভারত। দলীয় ৩৪ রানের মাথায় ফিরে যান বিধ্বংসী ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব।
আরও পড়ুন:
» বিদেশি লিগে খেলার অনাপত্তিপত্র পেলেন বাংলাদেশের ৭ ক্রিকেটার
» শান্তর অধিনায়কত্ব থাকছে কিনা জানালেন জালাল ইউনুস
দ্রুত তিনটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। এরপর বিরাট কোহলি ও অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। চতুর্থ উইকেটে ৭২ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটার। দলীয় ১০৬ রানের মাথায় অক্ষর প্যাটেল রান আউট হলে ফিরে ফেলে ভেঙে যায় এই জুটি। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৩১ বলে ৪৭ রানের এক ঝোড়ো ইনিংস খেলেন এই অলরাউন্ডার।
এরপর শিভম দুবেকে নিয়ে আরো ৫৭ রান যোগ করেন কোহলি। এর মাঝে এই টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৫৯ বলে ৭৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেন এই ব্যাটার। এ ছাড়া দুবের ১৬ বলে ২৭ এবং অন্যন্য ব্যাটারদের ছোট ছোট ক্যামিওতে শেষ পর্যন্ত ১৭৬ রানে লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন কেশভ মহারাজ ও আনরিখ নরকিয়া। এছাড়া ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদা।
শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ১৭৬ রান ডিফেন্ড করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার রিজা হেন্ড্রিকসের স্টাম্প উড়িয়ে দেন যশপ্রিত বুমরাহ। পরের ওভারেই দ্বিতীয় আঘাত হানে ভারত। আর্শদীপ সিংয়ের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। পর পর দুই উইকেট তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের ব্যাকফুটে ফেলে দেয় ভারত।
পরবর্তীতে কুইন্টন ডি কক ও ট্রিস্টান স্টাবসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের জুটিতে ম্যাচে ফেরে দলটি। ধীরে ধীরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করা এই জুটি ভেঙে দেন অক্ষর প্যাটেল। দলীয় ৭০ রানের মাথায় ট্রিস্টানকে বোল্ড করে তাদের ৫৮ রানের জুটি ভেঙে দেন এই স্পিনার। এরপর চতুর্থ উইকেটে ডি কক হেনরিখ ক্লাসেন মিলে আরো ৩৬ রান যোগ করেন। ১০৬ রানের মাথায় ডি কককে ফিরিয়ে কিছুটা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত।
আরও পড়ুন:
» বিশ্বকাপের ‘সেরা একাদশে’ একমাত্র বাংলাদেশি রিশাদ
» শুরু হলো নাটক ও রোমাঞ্চে ভরা ইউরোর দ্বিতীয় রাউন্ড
তবে এই নিয়ন্ত্রণ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি রোহিতরা। ডি কক ফেরার পর মাঠে ছিলেন দুই বিধ্বংসী ব্যাটার ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে আবারো ম্যাচে ফিরে প্রোটিয়ারা৷ ইনিংসের ১৫তম ওভারে ২৪ রান নিয়ে পুরোপুরি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা।
শেষ ৩০ বলে প্রয়োজন ৩০ রান, ক্রিজে রয়েছেন দুই সেট ব্যাটার। এমন জায়গা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে যাবে সেটা হয়ত কেউ কল্পনাও করেনি। তবে এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে ভারত। ইনিংসের ১৭তম ওভারে বোলিং করতে এসে প্রথম বলে ক্লাসেনকে ফেরান হার্দিক পান্ডিয়া। এরপরই ম্যাচের গতিপথ বদলে যায়।
পরের ওভারে আরো একটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরে ভারত। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। স্ট্রাইকে মিলার থাকলেও প্রথমে বলেই আউট হয়ে যান তিনি। সবমিলিয়ে শেষ ৩০ বলে ৪টি উইকেট হারিয়ে ২২ রান নিতে সক্ষম হয়েছে প্রোটিয়ারা। এর ফলে হার নিশ্চিত হয় প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার।
ভারতের হয়ে হার্দিক পান্ডিয়া ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩টি উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন আর্শদীপ সিং ও বুমরাহ।
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০জুন২৪/বিটি