লর্ডস থেকে শুরু লর্ডসেই শেষ৷ মাঝে কেটে গেছে দুই দশক৷ হাত ঘুরিয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি বার, উইকেট তুলেছেন ৭০৪ টি৷ সংখ্যায় আবদ্ধ নয়, তৈরি করেছেন অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত।
এতক্ষণে হয়ত চরিত্রটা আঁচ করতে পেরেছেন৷ জেমস অ্যান্ডারসন। সুইং যদি মোনালিসা হতো তবে জেমস অ্যান্ডারসন হতেন একালের লিওনার্দো ভিঞ্চি৷ লাল বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড তো বটেই তাবৎ ক্রিকেট দুনিয়ার অন্যতম সফল নাম জেমস অ্যান্ডারসন৷
২১ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের পথচলা৷ সেই থেকে ধ্যানজ্ঞান ঐ লাল বল আর সাদা পোশাকে৷ বয়স গড়িয়ে এখন পড়তির দিকে৷ চলতি মাসেই পা রাখবেন ৪২ বছরে৷ তাতে কি? টেস্ট ক্রিকেটের গোটা ইতিহাসই যেন নিজের করে নিয়েছেন অ্যান্ডারসন৷
আরও পড়ুন:
» অ্যান্ডারসনকে নিয়ে বিদায়ী বার্তায় যা বললেন মুশফিক-তাসকিন
» বড় জয়ে বিদায় রাঙালেন অ্যান্ডারসন
টেস্টে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় মুত্তিয়া মুরালিধরনের ৮০০ উইকেট ও শেন ওয়ার্নের ৭০৮ উইকেটের ঠিক পরের নামটাই জেমস অ্যান্ডারসনের৷ যা পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। বহু আগেই ছাপিয়ে গেছেন কোর্টনি ওয়ালশ ও গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো কিংবদন্তিদের৷
তবে উইকেটেই আটকে নেই অ্যান্ডারসনের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার৷ শচীন টেন্ডুলকারের পর সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা ক্রিকেটারের নামটিও জেমস অ্যান্ডারসন৷
টেস্ট ক্রিকেটের পাতা উল্টাতে গেলে এমন অসংখ্য জায়গায় পাওয়া যাবে জেমস অ্যান্ডারসনের নাম৷ ম্যাচের শুরু থেকে শেষ, নতুন বল কিংবা পুরোনো বল অ্যান্ডারসনের বোলিং ধাঁচ একই রকম৷ রিভার্স সুইং নিয়ে ক্রিকেটের শুরু দিকই থাকবেন তিনি৷ টেস্টের যেকোনো দিন, যেকোনো সময় বল হাতে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনের জন্য ভয়ংকর রূপ নিতে জানেন জেমস অ্যান্ডারসন৷
আরও পড়ুন:
» শেন ওয়ার্নের সেই ‘বল অফ দ্যা সেঞ্চুরি’
» হেডিংলির মহাকাব্যে মুগ্ধতার নায়ক ‘বিগ বেন’ স্টোকস
৩৫ বছর বয়সে যেখানে থেমে যায় অনেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার, সেখানে ৩৫ বছর পর যেন তারুণ্যে ফিরে গেছেন অ্যান্ডারসন৷ ৩৫ বছর পার করা কোর্টনি ওয়ালশ, রিচার্ড হ্যাডলি কিংবা গ্লেন ম্যাকগ্রাদের মতো পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল নামটা অ্যান্ডারসনের৷ পয়ত্রিশের পর ৬২ টেস্টে উইকেট তুলেছেন ২২০টি, এর মধ্যে দশবার নিয়েছেন ৫ উইকেট৷
শুধু পেস স্বর্গে নয়, এশিয়ার মতো স্লো উইকেটেও পেসারদের মধ্যে অন্যতম সফল নাম জেমস অ্যান্ডারসন। এশিয়ার মাটিতে ক্যারিয়ারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ডেল স্টেইনের সঙ্গে যৌথভাবে রয়েছে ৯২ উইকেট৷ অবশ্য স্টেইনের চেয়ে ১০ ম্যাচ বেশি খেলেছেন তিনি। তবে ক্যারিয়ারজুড়ে দুজনেই ছিলেন প্রায় একই ধরণের বোলার৷
জেমস অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের আলোচনাই ফিকে যাবে, যদি স্টুয়ার্ট ব্রডের নাম না নেওয়া হয়৷ একযুগের বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ডের পেস ইউনিটের নেতৃত্ব দিয়েছেন এই দুই কিংবদন্তি৷ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা এই জুটি বল হাতে ১৩৮ টেস্টে তুলেছেন হাজারখানেক উইকেট৷ বহু আগেই ছাড়িয়ে গেছেন বিখ্যাত ওয়াকার ইউনুস-ওয়াসিম আকরাম জুটিকে৷
স্টুয়ার্ট ব্রডের পর এবার নিজের বনেদি ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন লর্ডসের ঘাসে৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামার আগে চেষ্টা করছেন নিজের কান্নাটা ছেপে রাখার৷ ম্যাচের আগে বলেছেন,’আমি চেষ্টা করছি ম্যাচটা নিয়ে অত বেশি না ভাবতে। চেষ্টা করছি যতটা বেশি মনোযোগী হওয়া যায়। এই সপ্তাহে আমার জন্য জরুরি বিষয় হচ্ছে ভালো খেলতে চাওয়া, ভালো বল করতে চাওয়া এবং জয় তুলে নেওয়া। আমি এসবের ওপরই মনোযোগী হতে চাচ্ছি। আমি নিশ্চিত এই সপ্তাহের মধ্যে আমার আবেগীয় ভাবে পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে আমি চেষ্টা করছি কান্না আটকে রাখার।’
অ্যান্ডারসনের বিদায়ী টেস্টে ইনিংস ও ১১৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। এই ম্যাচে বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৬.৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেছেন টেস্ট ইতিহাসের সফলতম এই পেসার।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৩জুলাই২৪/টিএইচ/বিটি