Connect with us
ফুটবল

মেসির ২০১২: ফুটবল ইতিহাসের অমর মুহূর্ত

Lionel Messi 2012
লিওনেল মেসি। ছবি- সংগৃহীত

লিওনেল মেসি, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম মহান এবং প্রভাবশালী খেলোয়াড়, ২০১২ সালে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তার অসাধারণ পারফরম্যান্স এবং অসীম প্রতিভা ফুটবল জগতে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করেছিল। ২০১২ সালে, মেসি বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১টি গোল করে গের্ড মুলারের ৮৫ গোলের ইউরোপীয় রেকর্ড ভেঙে দেন, যা ছিল ফুটবল ইতিহাসে একটি অমর মুহূর্ত। মেসির এই অসাধারণ অর্জন তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেয় এবং টানা চতুর্থবারের মতো বেলন ডি’অর পুরস্কার জিতে ফুটবল জগতে নিজের অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করেন। এই অর্জন শুধু মেসির ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং এটি ছিল বিশ্ব ফুটবলের জন্য একটি ইতিহাস।

২০১২ সালে, মেসি যে অসাধারণ পরিসংখ্যান প্রদর্শন করেছিলেন, তা ফুটবল ইতিহাসে চিরকাল মনে রাখা হবে। সেই বছর তিনি বার্সেলোনার হয়ে ৭৯টি গোল এবং আর্জেন্টিনার হয়ে ১২টি গোল করেন, যা তার মোট গোলের সংখ্যা ৯১টি পৌঁছায়। ২০১২ সালে মেসি ছিল মাঠের এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি। তার ড্রিবলিং, পাসিং, গোল করার দক্ষতা এবং প্লে-মেকিং ক্ষমতা ফুটবল জগতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে চলে যায়। তার প্রতিটি গোল ছিল এক ধরনের শিল্পকর্ম, যা ফুটবল প্রেমীদের মুগ্ধ করেছিল। মেসির এই অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের ফলে বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনার জন্য আরও অনেক সাফল্য এসেছে। এর পাশাপাশি, তার খেলার শৈলী এবং সততা তাকে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত করেছে।

মেসির ৯১ গোলের রেকর্ড ভাঙার ঘটনা ফুটবল ইতিহাসে এক স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল। এই রেকর্ডটি ১৯৭২ সালে গের্ড মুলারের ৮৫ গোলের ইউরোপীয় রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়, যা ছিল একটি অভূতপূর্ব কৃতিত্ব। মেসির এই অর্জন ছিল কেবলমাত্র সংখ্যার ব্যাপার নয়, বরং এটি ছিল তার খেলার প্রতি নিবেদন এবং নিষ্ঠার চরম প্রমাণ। বার্সেলোনার হয়ে ৭৯টি গোল এবং আর্জেন্টিনার হয়ে ১২টি গোল করে, তিনি তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছান। এই রেকর্ড শুধুমাত্র মেসিকে নয়, বরং তাকে বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে চিরকাল অমর করে রেখেছে।

আরও পড়ুন:

» ইন্টার মিয়ামিতে নেইমার-মেসি-সুয়ারেজ পুনর্মিলন সম্ভব?

» কোয়ার্টার ফাইনালে আল-হিলালকে হারিয়ে সেমিতে ইত্তিহাদ

ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিন কর্তৃক প্রদত্ত বার্ষিক ব্যালন ডি’অর পুরস্কার, বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়কে সম্মানিত করে। মেসি প্রথমবারের মতো এই পুরস্কারটি ২০০৯ সালে জিতেছিলেন। সেই বছর তার খেলার শৈলী এবং অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এরপর, ২০১০ এবং ২০১১ সালে টানা দুইবার তিনি এই পুরস্কার জিতেন এবং তার প্রতিভার স্বীকৃতি লাভ করেন। ২০১২ সালে, তার ৯১ গোলের রেকর্ডের পর মেসি টানা চতুর্থবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতেন, যা ছিল এক অনন্য রেকর্ড। মেসির চতুর্থ ব্যালন ডি’অর জয়ের পর, তিনি আরও একবার প্রমাণ করেন যে তিনি বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়, এবং তার প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম, এবং নিবেদন তাকে ফুটবল ইতিহাসে এক অমর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মেসির ব্যক্তিগত জীবনও তার পেশাদারিত্বের মতোই প্রশংসিত। তিনি একজন অত্যন্ত নম্র, দয়ালু, এবং পরিশ্রমী খেলোয়াড়, যিনি মাঠে এবং মাঠের বাইরে তার আচরণ দিয়ে অনুপ্রেরণা জোগান। তার পরিবার, বিশেষত তার মা, স্ত্রী, এবং দুই সন্তান, সব সময় তাকে তার কর্মজীবনে সমর্থন করেছেন। মেসি তার খেলার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য এক আদর্শ সৃষ্টি করেছেন। তার খেলার ধরন, তার নিষ্ঠা এবং তার আচরণ, সবকিছুই তাকে একজন আদর্শ ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার খেলা শুধু একটি শখ ছিল না, বরং এটি ছিল তার জীবনের একটি গভীর লক্ষ্য। ফুটবল প্রেমীদের কাছে, মেসি ছিলেন একজন নতুন নায়ক, যিনি প্রতিদিন তার কর্মের মাধ্যমে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

২০১২ সালের পর, মেসি আরও অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি তার পঞ্চম ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জিতেন, যা তার ফুটবল জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। পরবর্তী বছরগুলোতে, মেসি বার্সেলোনার হয়ে অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন এবং আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। মেসি তার ফুটবল ক্যারিয়ারকে কেবলমাত্র শিরোপা জয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং তিনি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।

মেসির খেলা কেবল তার ব্যক্তিগত অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; তিনি ফুটবল জগতে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি করেছেন। তার খেলার শৈলী, দক্ষতা এবং নিষ্ঠা নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য আদর্শ হয়ে উঠেছে। মেসির উত্তরাধিকার শুধুমাত্র তার রেকর্ডে নয়, বরং ফুটবলের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় নিহিত। মেসি তার খেলার মাধ্যমে ফুটবলকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে এর আনন্দ এবং গুরুত্ব উভয়ই বেড়েছে। তিনি ফুটবলকে শুধুমাত্র একটি খেলা হিসেবে দেখেননি, বরং এটি ছিল তার জীবনের এক উদ্দেশ্য। ফুটবল তার জন্য ছিল এক শিল্প এবং এটি তিনি প্রতিটি ম্যাচে প্রমাণ করেছেন।

লিওনেল মেসি, তার অসীম প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার মাধ্যমে ফুটবল জগতে অমর হয়ে আছেন। ২০১২ সালে তার ৯১ গোলের রেকর্ড এবং টানা চতুর্থ বেলন ডি’অর জয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের ক্যারিয়ারকে শীর্ষে নিয়ে গেছেন। মেসির এই অর্জন শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং ফুটবল প্রেমীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। মেসি, ফুটবল ইতিহাসে এমন একজন কিংবদন্তি, যিনি কখনোই হার মানেননি, বরং প্রতিটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।

ক্রিফোস্পোর্টস/৮জানুয়ারি২৫/আইআর/এফএএস

Crifosports announcement
Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ফুটবল