![Minhazul](https://www.crifosports.com/wp-content/webp-express/webp-images/uploads/2025/02/crifo-Minhazul.jpg.webp)
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। তার খেলোয়াড়ি নৈপুণ্য, নেতৃত্বগুণ এবং প্রশাসনিক ভূমিকা দেশের ক্রিকেটকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
প্রারম্ভিক জীবন ও শৈশব
১৯৬৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। ছোটবেলা থেকেই তার খেলাধুলার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। বিশেষ করে ক্রিকেটের প্রতি তার টান ছিল অন্য রকম। তার বাবা শামসুল আবেদীন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন সাহসী যোদ্ধা।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন এবং তার কোনো খোঁজ আর মেলেনি। এই ক্ষতি মিনহাজুলের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।তার বড় ভাই নূরুল আবেদীন নোবেলও ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। পরিবার থেকেই খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ পেয়েছিলেন নান্নু। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা তাকে ধীরে ধীরে এই খেলার জগতে প্রবেশ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
![Minhaj](https://www.crifosports.com/wp-content/webp-express/webp-images/uploads/2025/02/Crifo-Minhaj.jpg.webp)
মিনহাজুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটে আশির দশকে
ক্রিকেটে প্রবেশ ও প্রথম সফলতা
মিনহাজুলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা ঘটে ১৯৮০-এর দশকে। তখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের স্থান করে নেওয়ার চেষ্টা করছিল।
আরও পড়ুন:
» বাংলাদেশের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা কতটুকু, জানালেন রবি শাস্ত্রী
» চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেমন হবে বাংলাদেশের সেরা একাদশ?
১৯৮৩ সালে তিনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান। সেই বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। যদিও সেখানে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি, তবে তার প্রতিভা অনেকের নজর কাড়ে।
১৯৮৪ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কাপে তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। চট্টগ্রামে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ৪৪ রান করে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মিডিয়াম পেসার হিসেবে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২ উইকেট তুলে নেন। তার এই পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলের আসন্ন সিরিজগুলোর জন্য একটি সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরে।
আন্তর্জাতিক অভিষেক
১৯৮৬ সালে, মিনহাজুল আবেদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (ওডিআই) অভিষেক করেন। এটি ছিল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের শুরুর দিককার সময়।
![Manhazul](https://www.crifosports.com/wp-content/webp-express/webp-images/uploads/2025/02/Crifo-Manhaz-3.jpg.webp)
ক্রিকেট বোর্ডেও নান্নুর স্থান ছিল বেশ শক্ত।
প্রথম অভিষেক ম্যাচের চ্যালেঞ্জ:
পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলা ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু তার দক্ষতা এবং ধৈর্যের প্রমাণ তিনি সেই ম্যাচেই দেখিয়েছিলেন। যদিও বাংলাদেশ দল সেই ম্যাচে জয় পায়নি, তবুও নান্নুর আত্মবিশ্বাস এবং খেলোয়াড়ি মানসিকতা তাকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছিল।
নেতৃত্ব ও সাফল্য
নান্নু ১৯৯০-৯১ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অধিনায়কত্বে দলটি অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভালো খেলার চেষ্টা করেছে।
আরও পড়ুন:
» এবার পারিশ্রমিক ইস্যুতে অভিযোগ তুললেন মুনিম শাহরিয়ার
» দেড়শ করে গেইল-কোহলিদের পেছনে ফেললেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটার
তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হলো ১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে তিনি একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে দলের অংশ ছিলেন। যদিও বাংলাদেশ তখনো তুলনামূলক দুর্বল দল ছিল, তবে তার অভিজ্ঞতা এবং পরিকল্পনা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
![Minhazul Nannu](https://www.crifosports.com/wp-content/webp-express/webp-images/uploads/2025/02/Crifo-Minhaz-4.jpg.webp)
ক্রিকেটার বাছাইয়ে ছিল নান্নুর বেশ দারুণ দক্ষতা।
দেশীয় ক্রিকেটে অবদান
নান্নু শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক পর্যায়েই নয়, দেশীয় ক্রিকেটেও অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টে তিনি দুর্দান্ত খেলে দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখেন। তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দেশের তরুণ খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেছে।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০০ সালের শুরুর দিকে মিনহাজুল আবেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। তবে অবসরের পরও ক্রিকেটের সঙ্গে তার সংযোগ ছিন্ন হয়নি।
কোচিং এবং প্রশাসনিক ভূমিকা
অবসরের পর তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১১ সালে তাকে বিসিবির প্রধান নির্বাচক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে এসেছে।
![Nannu](https://www.crifosports.com/wp-content/webp-express/webp-images/uploads/2025/02/Crifo-Nannu.jpg.webp)
হাবিবুল বাশার ও আব্দুর রাজ্জাকের সাথে প্রভাবশালী বোর্ড গড়েছিলেন
তিনি মোস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, তাসকিন আহমেদসহ আরও অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটারকে জাতীয় দলে স্থান দিতে ভূমিকা রেখেছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
১. বাংলাদেশ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।
২. বিসিবির পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা।
৩. এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) প্রশংসাপত্র।
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু শুধু একজন খেলোয়াড়ই নন, তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন অভিভাবক। তার অবদান দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার কর্মজীবন এবং প্রশাসনিক দক্ষতা দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।
ক্রিফোস্পোর্টস/১৫ফেব্রুয়ারি২৫/আইএইচআর/এজে
![](https://www.crifosports.com/wp-content/webp-express/webp-images/uploads/2023/04/Crifosports-logo-2.png.webp)