চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএলে) দলগুলোর লড়াই ইতোমধ্যে বেশ জমে উঠেছে। সঙ্গে মুস্তাফিজের আইপিএলে খেলা নিয়ে বিসিবি কর্তাদের মতের লড়াইও যেন পিছিয়ে নেই। আইপিএলে মুস্তাফিজের খেলা নিয়ে দুভাগে বিভক্ত বিসিবি!
চলতি আসরে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটি মাতাচ্ছেন টাইগার পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু আসরের মাঝপথেই দেশে ফিরে আসতে হবে তাকে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৌসুম আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। এরপরই সর্বোচ্চ অংশগ্রহণে আসবে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমানের নাম। কিন্তু বিসিবি থেকে দেওয়া ছাড়পত্রের মেয়াদ ১ মে শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে চলমান আসর শেষ না করেই দেশে ফিরে আসতে হবে তাকে।
আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য তাকে আইপিএলে বাকি সময় খেলতে দিতে নারাজ ক্রিকেট বোর্ড।
কিন্তু এখানেই ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা-ব্যক্তিদের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন ফিজের আইপিএলে খেলা চালিয়ে যাওয়াটা ভালো হবে তো কেউ মনে করছেন আইপিএল থেকে তার ক্রিকেটীয় জ্ঞান অর্জনের কিছু নেই। ফলে তার দেশে ফিরে আসাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত।
উল্লেখ্য, চলতি আসরে চেন্নাইয়ের হয়ে পাঁচ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এখন মুস্তাফিজ।
ফিজের আইপিএল প্রসঙ্গে কিছু দিন আগেই যেমন বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানিয়েছিলেন, মুস্তাফিজের আইপিএল খেলা নিয়ে তার কোনও সমস্যা নেই।
প্রসঙ্গটি নিয়ে লিপু বলেছিলেন, মুস্তাফিজ ছুটি পাবে কি না সেটা বোর্ডের উপর নির্ভর করছে। তাকে আইপিএলের ছুটি দেওয়া না হলে দলে রাখবো, আর আইপিএলের ছুটি দেওয়া হলে দলে ডাকা হবে না।
মিরপুর শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবির আরেক পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান জানান, জিম্বাবুয়ে সিরিজের চেয়ে আইপিএলে খেলাটা মুস্তাফিজের জন্য ভালো হবে। জাতীয় দলের সাবেক এই কাপ্তান গণমাধ্যমকে জানান, মুস্তাফিজ যে ধরনের বোলার, তাকে ঠিকঠাক ব্যবহার করা জানতে হবে।
তাকে ব্যবহার করতে পারলে ফল আসবেই যেটা চেন্নাই করছে। আমার মতে, চেন্নাইয়ের হয়ে খেলে সে নিজেও উপকৃত হচ্ছে যেটা বাংলাদেশের জন্যও কাজে লাগবে। কলকাতার বিপক্ষে মুস্তাফিজ কিন্তু দলের পরিকল্পনা অনুযায়ীই বল করেছে, ফলও পেয়েছে।
আমার মনে হয়, জিম্বাবুয়ে সিরিজের আইপিএল তার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেখানে অনেক বড় বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলতে পারছে, অনেক কিছু শিখতেও পারছে।
পাশাপাশি আইপিএলের আগে ফিজের অফ ফর্মের কথাও মনে করিয়ে দেন আকরাম, আইপিএলের আগে সে বেশ কঠিন সময় পার করেছে। তার ফর্ম নিয়ে আমরাও দুশ্চিন্তায় ছিলাম, অনেক ভুগতে হয়েছে তাকে। এখন দেখুন, আইপিএলে গিয়ে সে কিন্তু আগের চেয়ে উন্নতি করেছে। পুরোপুরি হয়তো বদলায়নি কিন্তু এর ফলে আমরা নিজেরাও লাভবান হবো।
কিন্তু এ প্রসঙ্গে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের মত যেন পুরোপুরি বিপরীত মেরুর, মুস্তাফিজের জন্য আইপিএল কোনোভাবেই ভালো হতে পারে না। তার আর শেখার কিছু নেই। উল্টো আইপিএলের ক্রিকেটাররা তার থেকে শিখতে পারে।
এটা আমাদের দলের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বোলারের জন্য দেখে মনে হতে পারে আইপিএল ৪ ওভারের খেলা কিন্তু এখানে আরও অনেক চাপ থাকে। আইপিএল তার থেকে সবটুকু শুষে নিচ্ছে। তার স্বাস্থ্য ও ফিটনেসের ব্যাপারে আমরা চিন্তায় আছি।
২০২১ সালে আইপিএলের জন্য আমরা দু’জন ক্রিকেটারকে এনওসি দিয়েছিলাম। ফিরে এসে তারা জানিয়েছিল, তারা ভীষণ ক্লান্ত। আমরা এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি আর চাই না। আইপিএল থেকে ফিরলে তাকে আমরা ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট করাবো। জিম্বাবুয়ে সিরিজে সে হয়তো বিশ্রামে থাকবে তবে দলের সঙ্গেই থাকবে। বিশ্বকাপে তার থেকে আমরা সেরাটা চাই—যোগ করেন ইউনুস।
আরও পড়ুন: মুম্বাইয়ের জয়ের রাতে রোহিতের জোড়া মাইলফলক
ক্রিফোস্পোর্টস/১৯এপ্রিল২৪/এমএস/এসএ