আবর্জনার পর্বতে খুঁজতেন স্বপ্ন৷ প্যারিসের রাস্তা ধরে হাঁটতেন আর কোথাও আবর্জনা দেখলেই ছুটে যেতেন৷ পরিত্যক্ত জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণপোষণ চালাতেন। এভাবেই কেটে যেত পারতো এনগোলো কান্তের জীবন৷
তবে এনগোলো কান্তের জীবনে লেখা ছিল অন্য গল্প। তখনো তিনি জানতেন না, তার জন্য অপেক্ষা করছে স্বপ্ন জয়ের সুযোগ৷ ভাগ্যের খোঁজে ১৯৮০ সালেই মালি থেকে প্যারিসে পাড়ি জমান কান্তের বাবা-মা৷ জন্মের পর মালির এক প্রাচীন রাজার নামানুসারেই বাবা-মা তার নামের সঙ্গে জুড়ে দেয় ‘এনগোলো’।
কিন্তু রাজার প্রাসাদ ছিল না তাদের৷ বরং চারদিকে কান পাতলেই শোনা যেত অভাবের দীর্ঘশ্বাস৷ কান্তের বয়স যখন ১১, তখনি হারান বাবাকে৷ শুরু হয় জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা৷ পরিবারের পাঁচ ভাই-বোনের জন্য হন্য হয়ে ঘুরতে থাকেন প্যারিসের রাস্তায়৷ আবর্জনার স্তূপ থেকে ময়লা কুড়িয়ে কোনোমতে দু’পয়সা দিয়ে চালাতেন পুরো পরিবার৷
এতো সংগ্রামের মাঝেও ভালোবাসতেন ফুটবলকে৷ সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবলে মগ্ন হতেন। ফুটবলের প্রতি সেই ভালোবাসাই আজ এনগোলো কান্তেকে তৈরি করেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে৷
আরও পড়ুন:
» এনদ্রিককে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রিয়াল মাদ্রিদ, নেই এমবাপ্পে
» প্যারিস অলিম্পিক: তৃতীয় দিনে মেডেল তালিকার শীর্ষে ফিরলো চীন
শুরুতে নাম লেখান ফ্রান্সের অপেশাদার একটি ফুটবল ক্লাবে৷ সেখান থেকে ফ্রান্সের দ্বিতীয় সারির ক্লাব বেলোন ও কায়ে হয়ে পাড়ি জমান ইংলিশ চ্যানেলের অপর পাড়ের ক্লাব লেস্টার সিটিতে৷ যা মোড় ঘুরিয়ে দেয় এনগোলো কান্তের জীবন গল্পের৷
২০১৫-১৬ মৌসুমে লেস্টার সিটি প্রথম বারের মতো প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ঘরে তোলে৷ শিরোপা জয়ের অন্যতম বড় নায়ক ছিলেন লেস্টার সিটির মাঝ মাঠের রাজা এনগোলো কান্তে৷ এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি কান্তেকে৷
২০২০-২১ মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিকে টপকে চেলসির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিলেন এনগোলো কান্তে৷ ট্যাকেল, রানিং কিংবা পাসিংয়ে ফুটবল বিশ্বকে মুগ্ধ করে রেখেছিল কান্তে৷ এরপর ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের মাঝ মাঠের ভরসার জায়গা ছিলেন কান্তে৷
এবারের ইউরো শুরুর আগেই চমক নিয়ে হাজির হন ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম৷ কাতার বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া এনগোলো কান্তেকে নিজের ইউরো দলে ভেড়ায় দেশম৷ দেশমের এমন কাণ্ড দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই৷ তবে মোটেও অবাক হননি দিদিয়ের দেশম৷ ৩৩ বছর বয়সী কান্তেই মাঝ মাঠে এখনো দেশমের আস্থার জায়গা৷
আরও পড়ুন:
» চলতি শতকের অপ্রতিরোধ্য দল আর্জেন্টিনা, ১০ বছরে ৬ ফাইনাল
» সুব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুললেন দ্রাবিড়, বোনাসের অতিরিক্ত অর্থ নিতে নারাজ
এর আগে ইউরোপীয় ফুটবলের পাঠ চুকে পাড়ি জমান সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল-ইত্তেহাদে৷ একসময়ে আবর্জনার স্তূপ থেকে স্বপ্ন খোঁজা সেই এনগোলো কান্তে এখন আল-ইত্তেহাদ থেকে বছরে ১০০ মিলিয়ন ইউরো আয় করেন৷ যা রোনালদো, নেইমার, বেনজেমার মতো ফুটবলারদের পর সর্বোচ্চ আয়৷
তবে ব্যক্তিজীবনে মোটেও বিলাসী নন কান্তে৷ আয়ের প্রায় পুরোটা ব্যয় করেন পিতৃভূমি মালির স্কুল, হাসপাতাল ও অনগ্রসর এলাকায়৷ লেস্টার সিটিতে পাওয়া নিজের সেই পুরোনো মিনি কুপার গাড়িটি এখনো ব্যবহার করেন কান্তে৷
শুধু তাই নয়, কখনো হাসপাতালে ছুটে যান তার এক অসুস্থ ভক্তকে দেখতে, আবার কখনো ভক্তদের দাওয়াতে যান তাদের বাসায়৷ এমন কান্তেকে ভালোবাসতে আপনি বাধ্যই হবেন৷ একজন ফুটবলার হিসেবে কান্তে সেরা তো বটেই তবে সবকিছু ছাপিয়ে একজন মানুষ হিসেবে কান্তে আরো সেরা৷
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০জুলাই২৪/টিএইচ/বিটি