ভারতীয় ক্রিকেটে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। প্রতিটি প্রজন্মেই এমন কিছু খেলোয়াড় উঠে আসে, যারা দলকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তেমনই এক উদীয়মান তারকা হলেন নীতিশ কুমার রেড্ডি। চলমান বোর্দার-গাভাস্কার ট্রফিতে, বিশেষ করে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বক্সিং ডে টেস্টে, তার অনন্য পারফরম্যান্স ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে তার মধ্যে রয়েছে প্রতিভা, সাহস এবং দায়িত্ব পালনের দক্ষতা।
নীতিশের নাম প্রথম শোনা যায় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য। তবে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে টেস্ট দলে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, একজন তরুণ আইপিএল খেলোয়াড় কি এত বড় সিরিজে পারফর্ম করতে পারবেন? তবে এমসিজি-তে তার দুর্দান্ত সেঞ্চুরি সেই সমস্ত সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিয়েছে।
বক্সিং ডে টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে যখন দল একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরির জন্য সংগ্রাম করছিল, তখনই নীতিশ কুমার রেড্ডি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। ইনিংসের সময় তার ব্যাটিং দৃঢ়তা, কৌশল এবং মনোযোগ তাকে প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে সাহায্য করে। দল যখন ২০০ রানের ঘরে পা রাখার জন্য লড়ছিল, তখন তিনি একপ্রান্ত ধরে রেখে গুরুত্বপূর্ণ রান সংগ্রহ করেন।
তিনি শেষ পর্যন্ত ১১৪ রানের অপ্রতিরোধ্য ইনিংস খেলেন, যা ভারতকে ৩৬৯ রানের সম্মানজনক স্কোর গড়তে সহায়তা করে। নীতিশের এই ইনিংস ভারতকে ফলো-অন এড়াতে সাহায্য করেছে এবং দলকে ম্যাচে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন:
» তরুণ ব্রাজিলিয়ানের প্রথম গোলে জয়ের ধারায় ম্যানসিটি
» ক্যালভার্টের দিকে নিউক্যাসলের নজর, তবে অপেক্ষায় থাকবে গ্রীষ্ম পর্যন্ত
সেঞ্চুরি করার পর নীতিশ বলেন, ‘কিছু মানুষ সন্দেহ করেছিল, যেন একজন তরুণ আইপিএল খেলোয়াড় এত বড় সিরিজে পারফর্ম করতে পারবে না। আমি শুধু চাই তারা ভুল প্রমাণ হোক। আমি চাই মানুষ জানুক যে আমি ভারতীয় দলের জন্য শতভাগ দিতে এসেছি।’ তার এই মন্তব্য শুধু আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন নয়, বরং প্রতিটি তরুণ ক্রিকেটারের জন্য একটি বার্তা।
নীতিশের সেঞ্চুরির পর তার পরিবার অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। তার বাবা-মায়ের চোখে আনন্দাশ্রু দেখা যায়। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নীতীশের এই অর্জন শুধু তার নয়, তার পরিবারের জন্যও এক বিশেষ গৌরবের মুহূর্ত। তার বাবা বলেন, ‘নীতীশ ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত ছিল। আমরা কখনো ভাবিনি যে সে এত দ্রুত এত বড় মঞ্চে নিজের প্রতিভা প্রমাণ করবে।’
নীতিশ কুমার রেড্ডির সাফল্যে শুধু তার সমর্থকরাই নয়, বরং তার সতীর্থরাও অভিভূত। বিরাট কোহলি, যিনি নীতিশের আদর্শ, তার এই ইনিংসের প্রশংসা করেন। নীতিশ বলেন, ‘আমি শৈশব থেকেই বিরাটকে দেখছি। তিনি আমার আদর্শ এবং এখন আমি তার সঙ্গে খেলছি। যখন তিনি পার্থে সেঞ্চুরি করেছিলেন, আমি নন-স্ট্রাইকার প্রান্তে ছিলাম। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এখন আমি সেঞ্চুরি করলাম, এবং তিনি আমাকে প্রশংসা করেছেন।’
আরও পড়ুন :
» বিপিএল ২০২৫ : একনজরে পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি
» বিপিএলে প্রতিদিন বাইক জেতার সুযোগ দর্শকদের, যা যা করতে হবে
এই মুহূর্তটি নীতীশের জন্য বিশেষ ছিল, কারণ তার আদর্শের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়া মানেই তার পরিশ্রমের প্রকৃত মূল্যায়ন।
ভারতীয় ক্রিকেটে তরুণ প্রতিভাদের উঠে আসার একটি ধারাবাহিক ইতিহাস রয়েছে। শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো খেলোয়াড়রা তাদের প্রতিভা দিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন। নীতিশ সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। তার সাফল্য তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
ভারতীয় ক্রিকেটে নীতিশ কুমার রেড্ডির উত্থান শুধু তার জন্য নয়, বরং সমগ্র দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। তার পরিশ্রম, প্রতিভা এবং দৃঢ়তা তাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে, এমনটাই আশা করা যায়।
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০ডিসেম্বর২৪/আইআর/এফএএস