মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত থাকে, যা বিপুল পরিমাণ টাকার অঙ্কেও কেনা যায় না৷ অলিম্পিকের পদকের ক্ষেত্রেও তাই৷ শত আবেগ, কষ্ট ও পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েই অ্যাথলেটদের জায়গা করে নিতে হয় অলিম্পিকের প্রতিটি আসরে৷ যা অ্যাথলেটের কাছে স্বপ্নের মতো। তাই অলিম্পিকের পদকের মূল্যের চেয়েও অ্যাথলেটদের কাছে সম্মানটাই বরং বেশি দামি৷
কিন্তু একটি পদকের জন্য গোটা দুনিয়ার অ্যাথলেটদের এতো যে লড়াই, তার মূল্য কত? বছরের পর বছর ধরে যে পদক জয়ের জন্য অ্যাথলেটদের যে সাধনা, সেই পদকের কাগুজে মূল্য কত? কিংবা কীভাবে তৈরি হয় অলিম্পিকের স্বর্ণ, রৌপ্য কিংবা ব্রোঞ্জ পদক?
চলতি প্যারিস অলিম্পিকের কথাই ধরা যাক৷ ভালোবাসার শহর প্যারিসের মূল প্রতীক আইফেল টাওয়ার৷ এবারের আসরে অলিম্পিকের পদকজয়ী প্রত্যেকেই আইফেল টাওয়ার গলায় ঝুলিয়ে এক ইতিহাসের অংশ হয়ে বাড়ি ফিরবে৷
আরও পড়ুন:
» জার্মান ফুটবলে ইলকায় গুন্দোয়ান অধ্যায় কেমন ছিল?
» বিসিবির নতুন সভাপতি কে এই ফারুক আহমেদ?
শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি, প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের লোহা গলিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবারের অলিম্পিকের পদক৷ ১৮৯৯ সালে নির্মাণ শেষ হওয়ার পর থেকে নিয়মিত বিরতিতে চলেছে আইফেল টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। রক্ষণাবেক্ষণের সময় যদি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ লোহার ফ্রেম দেখা যেত, তাহলে তা খুলে প্রতিস্থাপন করা হতো নতুন ফ্রেম। খুলে রাখা এসব লোহাই স্থান পেয়েছে এবারের অলিম্পিকের পদকে৷
অলিম্পিকের পদক তৈরির কাজে বরাবরই এগিয়ে ফরাসি জুয়েলারি কোম্পানি শুমে। আঠারো শতকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া শুমে এবারের অলিম্পিকের পদক তৈরিতেও রেখেছে নতুনত্বের ছোঁয়া৷ প্রতিটি পদকের মাঝখানে রাখা হয়েছে একটি লোহার ফলক। ষড়ভুজ আকৃতির ফলকটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে আইফেল টাওয়ারের লোহা। যা নির্দেশ করে ফ্রান্সের মানচিত্র৷
শুধু তাই নয়, প্রতিটি পদকের নকশাতেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আলোক রশ্মির মতো কয়েকটি রেখা৷ তবে নিয়ম অনুযায়ী পদকের উল্টো পাশে পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রতিবারের মতো এবারও পদকের উল্টো পাশে রাখা হয়েছে গ্রিক বিজয়ের দেবী অ্যাথেনা নাইকির প্রতিচ্ছবি। যা যুগ যুগ ধরে শোভা পাচ্ছে অলিম্পিকের পদকে৷
আরও পড়ুন:
» ইংলিশ ফুটবলে হামজা চৌধুরীর উত্থান যেভাবে
» অলিম্পিকের সর্বকালের সেরা তারকারা
অলিম্পিকের স্বর্ণপদকের ওজন ৫২৯ গ্রাম। নামে স্বর্ণপদক হলেও সেখানে স্বর্ণের পরিমাণ মাত্র ৬ গ্রাম৷ বাকি পুরোটাই রূপা দিয়ে তৈরি৷ পদকের মাঝখানে রয়েছে ১৮ গ্রাম লোহা। যার পুরোটাই আইফেল টাওয়ারের লোহা গলিয়ে যোগ করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে অলিম্পিকের স্বর্ণপদকের দাম ৯৫০ ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১ লাখ ১২ হাজার টাকা।
রৌপ্যপদকে অবশ্য রুপার পরিমাণ অনেক বেশি। ৫২৫ গ্রাম ওজনের এই পদকে ৫০৭ গ্রাম রুপা, বাকি ১৮ গ্রামে রাখা হয়েছে লোহা। যার দাম ৪৮৬ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৭ হাজার টাকা।
স্বাভাবিকভাবেই ওজনের দিক থেকে সবচেয়ে হালকা ব্রোঞ্জপদক। যার ওজন মাত্র ৪৫৫ গ্রাম। তামা ও জিংকের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে ৪১৫ গ্রাম তামার সঙ্গে রয়েছে ২১ গ্রাম জিংক আর ১৮ গ্রাম আইফেল টাওয়ারের লোহা। স্বর্ণ ও রৌপ্য পদকের তুলনায় ব্রৌঞ্জ পদকের দাম অনেক কম৷ মাত্র ১৩ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৬০০ টাকা।
অলিম্পিকের পদক এক স্বপ্ন ও আবেগের নাম, যেখানেই নেই কোনো অর্থের ঝনঝনানি৷ বরং সেখানে রয়েছে সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে বসার সুযোগ৷
ক্রিফোস্পোর্টস/২৪আগস্ট২৪/টিএইচ/বিটি