ক্যারিয়ারের শুরুতে দুজনেই ছিলেন টগবগে তরুণ। ২০০৪ থেকে ২০০৯—পাঁচ বছর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দুজনে ক্যারিয়ারের সোনালী সময় কাটিয়েছেন। এসময় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও ওয়েন রুনি ছিলেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্নের নাম। রেড ডেভিলসদের হয়ে দুজনে ১৪৫ বার প্রতিপক্ষের জালে গোল দিয়েছেন৷
ফুটবলের সঙ্গে সখ্যতা থাকলেও ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে এখন দুজন দুদিকে৷ বয়সে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে আট মাসের ছোট ওয়েইন রুনি ৩৫ বছর বয়সেই খেলা ছেড়ে মননিবেশ করেছেন ফুটবল কোচিংয়ে৷ বর্তমানে ইংল্যান্ডের ডার্বি কাউন্টির হয়ে শুরু করেছেন কোচিং ক্যারিয়ার। অথচ এক সময়ের সতীর্থ রোনালদো এখনো দিব্যি খেলে চলেছেন।
মাত্র এক মাস পরে রোনালদো পৌঁছাবেন ৩৯ বছর বয়সে৷ ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তার আট মাস পর ১৯৮৫ সালের ২৪ অক্টোবর জন্ম নেন ওয়েইন রুনি। প্রায় ৩৯ বছর বয়সেও ফুটবল মাঠে এখনো তিনি টগবগে তরুণ রোনালদো। একটা সময়ে ইউনাইটেডকে একাই অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি। ইউনাইটেডের প্রায় প্রতিটি ম্যাচের পর প্রশংসার হাওয়া বয়ে যেত তাকে ঘিরে। পাঁচ বছরে তিনটি লিগ, একটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ইউনাইটেডের হয়ে জিতেছেন ছোট–বড় নয়টি শিরোপা।
আরও পড়ুন:
» ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ গোলের মুকুট রোনালদোর, সেরা চারে আর যারা
» রিয়ালকে নিয়ে রুনির মন্তব্যই ফলে গেল, ফাইনালে ম্যানসিটি
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সেই ৫ বছরে ইউনাইটেডের হয়ে ম্যাচে ১১৮টি গোল করেছেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। এরপর রেকর্ড ট্রান্সফারে মাদ্রিদে গিয়েও থেমে যাননি রোনালদো৷ গ্যালাক্টিকোদের হয়ে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৪৩৮ ম্যাচে করেছেন ৪৫০ গোল। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগেও সর্বাধিক ১৪০টি গোল রয়েছে মিস্টার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ খ্যাত রোনালদোর।
তবে সেই গোল উৎসব এখনো অব্যাহত রেখেছেন পর্তুগিজ ফুটবল সম্রাট৷ চলতি বছরে আল-নাসরের হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে, হ্যারি কেন, আর্লিং হল্যান্ডের পেছনে ফেলে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ গোটা ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যেই করেছেন ৮৫৭ গোল৷ ফুটবল দুনিয়ায় রোনালদোর চেয়ে আর কেউ পৌঁছতে পারেনি এ সংখ্যায়৷ এছাড়া, প্রিমিয়ার লিগ, লা-লিগা, সেরিয়া-এ ও ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ ক্যারিয়ারে তার রয়েছে ৩৪টি শিরোপা৷
অন্যদিকে খেলয়াড়ি জীবনে ওয়েন রুনিও কম যাননি৷ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে তিনি ১৬টি শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন। একই সঙ্গে সতীর্থ মাইকেল ক্যারিকের পাশাপাশি প্রথম ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, লিগ কাপ, উয়েফা ইউরোপা লিগ এবং ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জয়লাভ করেছেন।
সকল প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে সর্বোচ্চ ২৫৩টি গোল করেছেন, এর মধ্যে শুধুমাত্র প্রিমিয়ার লিগেই করেছেন ১৮৩টি গোল। ফলে প্রিমিয়ার লিগে একটি নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও রয়েছে তার দখলে।
ক্যারিয়ারের শুরু দিকে মাঠের খেলায় দুজনে একটা সময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্যতম সফল অস্ত্র ছিল৷ তৎকালীন কোচ অ্যালেক্স ফার্গুসন রোনালদো-রুনি নামক এ দুই অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য অনেক সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন৷ তবে ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসে এক সময়ের সতীর্থ রোনালদো-রুনির সম্পর্কে ভাঁটা পড়েছে। প্রায়ই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে একে অপরের ওপর ক্ষোভ নিংড়ে দেন৷
স্কাই স্পোর্টসের এক সাক্ষাৎকারে দ্বিতীয় মেয়াদে ইউনাইটেডে রোনালদোর যোগ দেওয়া নিয়ে ওয়েন রুনি বলেছিলেন, ‘অবশ্যই, রোনালদো ১০ বছর আগের সেই ফুটবলার নেই। গোল মুখে হয়তো সে হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ম্যানইউ-এর পুরো ম্যাচে প্রভাব রাখতে পারে এমন কাউকে দরকার। ক্লাবের কিছু তরুণ ফুটবলার আছেও।
রুনির ওই সমালোচনার জবাব রোনালদো মাত্র এক শব্দে দিয়েছেন। ইনস্টাগ্রামে মন্তব্য করেছেন, ‘টু জেলাস আই (ইমোজি) বা দুটি হিংসুক চোখ।’ চোখের দুটি ইমোজি পোস্ট করেছেন আই শব্দটা বুঝিয়েছেন তিনি।
এর আগে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টার পিয়ার্স মরগ্যানকে দেওয়া ৯০ মিনিটের সাক্ষাৎকারে রুনিকে নিয়ে রোনালদো বলেছিলেন, ‘আমি জানি না, সে কেন এভাবে আমার সমালোচনা করেছে। ওর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি এখনও শীর্ষ পর্যায়ে ফুটবল খেলছি। এটা কারণ হতে পারে।’
আরও পড়ুন:
» গুগল বলছে মেসি নয়, জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রোনালদো
» পেশাদার ক্যারিয়ারে রোনালদোর ‘১২০০ ম্যাচ’ খেলার কীর্তি!
ক্রিফোস্পোর্টস/৩০ডিসেম্বর২৩/টিএইচ/এসএ