অস্ট্রেলিয়ার কাছে মেলবোর্ন টেস্টে হেরে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি সিরিজে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় অজিদের কাছে বড় পরাজয় বরণ করতে হয় সফরকারীদের। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে বাংলাদেশের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহিদ সৈকতের দেয়া জয়সওয়ালের ক্যাচ আউটের ঘোষণা।
ইনিংসের ৭১তম ওভারে প্যাট কামিন্সের করা লেগ স্টাম্পের ওপর লাফিয়ে ওঠা বল পুল করার চেষ্টা করেন যসশ্বী জয়সওয়াল। ব্যাটের খুব কাছ দিয়ে বল পৌঁছে যায় উইকেট রক্ষকের হাতে। অবশ্য এই ঘটনায় সরাসরি নট আউটের সিদ্ধান্ত জানায় ফিল্ড আম্পায়ার। তবে রিভিউ নেয় স্বাগতিকরা। এতে সিদ্ধান্ত চলে যায় তৃতীয় আম্পায়ার সৈকতের কাছে।
রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাট এবং গ্লাভসের খুব কাছে দিয়ে যাচ্ছে বল। সৈকত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জানান, তিনি স্পষ্ট করেই দেখতে পেয়েছেন বলের গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। যদিও স্নিকোগ্রাফে আউট দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত উপাত্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে রিপ্লে দেখে সৈকত নিশ্চিত হন বল সামান্য ব্যাট এবং গ্লাভসে স্পর্শ হয়ে দিক পরিবর্তন করেছে।
ফলে আউটের সিদ্ধান্তে উপনীত হন সৈকত। এতে মাঠের আম্পায়ারদের বদলাতে হয় নিজেদের নট আউটের সিদ্ধান্ত। অবশ্য স্নিকো-মিটারে ব্যাট বা গ্লাভসে বল লাগার প্রমাণ না পাওয়া সত্যেও এমন সিদ্ধান্তে থার্ড আম্পায়ার সৈকতকে নিয়ে সমালোচনায় মেতেছে ভারতীয় মিডিয়া এবং একাধিক সাবেক ক্রিকেটার। যদিও অধিকাংশ ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞ আম্পায়ারদের সমর্থন পেয়েছেন সৈকত।
এমন ঘটনা এবার নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন আইসিসির অ্যালিট প্যানেলে থাকা এই বাংলাদেশি আম্পায়ার নিজেই। যেখানে তিনি জানিয়েছেন এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর নিজের তৃপ্তির কথা। এদিকে এই ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করলে জানা যায় প্রযুক্তিগত দিকের কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরও পড়ুন:
» ২০২৫ সালে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যত খেলা
» হেডের উদযাপন নিয়ে ভারতে সমালোচনা: নেপথ্যের ঘটনা
দেশের এক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী গতকাল সকালে সৈকতের সঙ্গে ফোনে কথা যোগাযোগ করা হয়। যেখানে তিনি জানান, আপাতত ফোন আর সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে আউট ঘোষণার সময়েই নাকি তিনি বুঝে গিয়েছিলেন এই সিদ্ধান্তে আলোচনার ঢেউ উঠবে নিশ্চিত! তবে তিনি তৃপ্ত, সঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন।
এমন ঘটনায় যে স্নিকোমিটার-বিতর্ক উঠেছে, এটির কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, এই সিরিজে আরটিএস বা রিয়েল টাইম স্নিকো প্রযুক্তি ঠিক ভাবে কাজই করছে না! ক্যামেরার ফ্রেমিং এবং স্নিকোর আওয়াজ বোঝার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত জটিলতাও আছে। ফলে কেবল প্রযুক্তির ওপর ভরসা না করে সৈকতকে নিজের অভিজ্ঞতা, সুদীর্ঘ আম্পায়ারিং জীবনের সঞ্চিত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
হার্শা ভোগলে এবং মার্ক নিকোলাস এটাকে ‘সাহসী ও ন্যায্য’ সিদ্ধান্ত বলেই আখ্যা দিয়েছেন। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার চ্যানেল সেভেনে আউটের সিদ্ধান্তের পক্ষেই মত দিয়েছেন অভিজ্ঞ আম্পায়ার সাইমন টোফেলও।এদিকে ভারতের আরেক সাবেক ক্রিকেটার সুরিন্দর খান্না নিজ দেশের ক্রিকেটারদের সমালোচনা করে পক্ষ নিয়েছেন আম্পায়ারের ন্যায্য সিদ্ধান্তের।
ক্রিফোস্পোর্টস/১জানুয়ারি২৫/এফএএস