Connect with us
ফুটবল

সেবাস্তিয়েন হলার: ‘আফ্রিকার বিশ্বকাপ’ জয়ের নায়ক

Sébastien Haller
ফাইনালে ৮২ মিনিটে জয়সূচক গোল করেন সেবাস্তিয়েন হলার। ছবি- সংগৃহীত

প্রাত্যহিক জীবনে লড়াই-সংগ্রাম নিয়েই তো মানুষের পথচলা৷ পথ চলতে চলতে শত বাধা-বিপত্তির মুখে কেউ হারিয়ে যায়, আবার কেউ বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে পৌঁছে যায় স্বপ্নের আঙিনায়৷ জয় করে স্বপ্নসৌধ।

ফুটবলও আস্ত এক জীবনের মতো। জমকালো সাফল্য আর অশ্রুসিক্ত ব্যর্থতার গল্পের আড়ালে এখানে থাকে শত শত জীবন সংগ্রামের গল্প। সেবাস্তিয়েন হলারের কথাই ধরুণ না, নক্ষত্র হয়ে জন্মানো হলারের শুরুর জীবনটা ছিল রংধনুর মতো৷ রোজ নিয়মকরে ফুটবল মাঠে বল পায়ে রঙ ছড়াতেন৷ কিন্তু বয়স যখন ২৮, তখনি দেখা দেয় এক ঘোর অমানিশা। ক্ষণিকের জন্য কালো মেঘের আড়ালে বিলীন হয়ে যায় রংধনুর সাত রং৷

জন্ম ফ্রান্সে হলেও শিকড় ছিল আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টে। বাবা ফরাসি হলেও মা ছিলেন আইভরিয়ান। ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব ১৯, ২০ দলে খেলা সেবাস্তিয়ান হলার চাইলেই খেলতে পারতেন ফ্রান্সের জাতীয় দলে৷ কিন্তু তা না করে বেছে নিয়েছিলেন মায়ের দেশ আইভরি কোস্টকে৷ সিদ্ধান্তটা যে ভুল নয়, তা প্রমাণ করেন সদ্য সমাপ্ত আফ্রিকান কাপ অব নেশন্সে। টুর্নামেন্টটির ফাইনালে আইভরি কোস্টকে এনে দেন এক ঐতিহাসিক সাফল্য। যে সাফল্য ছিল পুরো আইভরিয়ানদের স্বপ্নের মতো৷

রাজধানী আবিদজানের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৮২ মিনিটে গোল করেন সেবাস্তিয়ান হলার৷ এতে ২-১ গোলে জয় নিশ্চিত হয় আইভরি কোস্টের। স্বপ্ন জয়ের নায়ক আর কেউ নন, সেই সেবাস্তিয়েন হলার৷ মাস কয়েক আগেও জীবন নিয়ে যার ছিল চরম ধোঁয়াশা৷ আদৌ বাঁচবেন তো?

২০২২ সালের জুলাই মাসে ডর্টমুন্ডে থাকাকালীন অণ্ডকোষের ক্যান্সার আক্রান্ত হন তিনি৷ দুইবার সার্জারি ও চারবার ক্যামোথেরাপির কবলে পড়তে হয় তাঁকে। দীর্ঘ আট মাস ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ জয়ের পর ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারী ডর্টমুন্ডের হয়ে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি৷ এর তিনদিন পর ক্যান্সারের আঘাতে নিভে যাওয়া নক্ষত্রের আলো পুনরায় জ্বলে ওঠে৷ বাসেলের বিপক্ষে ৬-০ গোলে জয় পায় ডর্টমুন্ড৷ আর এতে হ্যাট্রিক করে বসেন সদ্য ক্যান্সারজয়ী সেবাস্তিয়ান হলার৷

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি হলারকে৷ স্বপ্নের মতো কাটাতে থাকেন একেকটি দিন৷ এর মধ্যে শুরু হয়ে যায় বুন্দেসলীগা৷ ২০২৩ সালের ৪ ফ্রেব্রুয়ারী বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের খেলা ছিল ফ্রেইবার্গের বিপক্ষে৷ ম্যাচটা একই সাথে সদ্য ক্যান্সারজয়ী হলারের প্রথম পেশাদার ম্যাচ। নির্ধারিত সময় শেষে ফ্রেইবার্গে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয় ডর্টমুন্ড৷ ম্যাচের ৫১ মিনিটে একটি গোল করেন হলার৷

কাকতালীয়ভাবে দিনটি ছিল বিশ্ব ক্যান্সার দিবস৷ তাই ম্যাচ শেষে নিজের গোলটি বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা মানুষদের উৎসর্গ করেন। আশা আর সাহসের মিশ্রণে ক্যান্সারকে পরাজিত করে ফিরে আসেন ফুটবলের সবুজ গালিচায়৷ ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমার গোলটি আশা ও সাহসের একটি বার্তা’

সর্বশেষ হলারের পায়ে ভর করেই আফ্রিকার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে আইভরি কোস্ট। দীর্ঘ আট বছর পর শিরোপা ঘরে তোলে দ্যা এলিপেন্টসরা৷ সর্বশেষ ২০১৫ সালে টুর্নামেন্টটির শিরোপা ঘরে তোলে দিদিয়ের দ্রগবার দেশ আইভরি কোস্ট।

আরও পড়ুন: ফেরার ম্যাচেই সালাহর গোল-অ্যাসিস্ট, লিভারপুলের বড় জয় 

ক্রিফোস্পোর্টস/১৭ফেব্রুয়ারি২৪/টিএইচ/এমটি

Crifosports announcement
Click to comment

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Focus

More in ফুটবল