সময় টা ছিল ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন সৌম্য সরকার। এই অলরাউন্ডারকে ছাড়া বাংলাদেশ স্কোয়াড কল্পনা করা যেত না। তবে সেই সৌম্য এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অতিথি। বার বার ফিরে আসেন, আবারও চলে যান। তবে কেন এমন হয়? বার বার সুযোগ পেয়েও কেন হারিয়ে যান সৌম্যরা?
২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮- ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টেস্টেও জাতীয় দলের অংশ ছিলেন সৌম্য। মূলত ওপেনার না হলেও মিডল ও লেট অর্ডারে ভরসার প্রতীক ছিলেন এই অলরাউন্ডার। এর পর দীর্ঘ দিন টেস্ট দলে সঙ্গে নেই তিনি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলেছেন এই ক্রিকেটার।
২০২০ সালের পর থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটেও বাজে খেলতে থাকেন সৌম্য। প্রতি নিয়মিতই খারাপের থেকেও খারাপ খেলতে থাকেন তিনি। খারাপ খেলার কারণে ২০২১ এর মার্চ থেকে ২০২৩-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৭ মাস ওয়ানডে দলের বাইরে থাকতে হয়েছে বাঁ-হাতি এই ব্যাটারকে। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মোটামুটি অবস্থান ছিলেন সৌম্য। অবশ্য এখনও আছেন। এ বছর জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে ছিলেন ডান-হাতি এই বোলার।
ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ার পর দীর্ঘ ২৭ মাস পর আবারও সুযোগ পান সৌম্য। এরপর আবারও বাদ পড়েন তিনি। এরপর আবারও সুযোগ পেয়ে চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে সিরিজটি খেলেছেন। এ সিরিজের ২ ম্যাচের একটিতে ৬৬ বলে ৬৮ রান অন্যটিতে মাত্র ৩ রানে আউট হয়েছিলেন এই ওপেনার।
এদিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে আবারও দলে ডাক পেয়েছেন সৌম্য। যেহেতু ৮ মাস আগে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে দলে ছিলেন, সে সিরিজে একটি ম্যাচে ৬৮ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। তাই তার দলভুক্তি নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা-বার্তা শোনা যায়নি। সমালোচনাও তেমন হয়নি।
এরপরও কোথাও না কোথাও প্রশ্ন জাগে।বার বার কেন সৌম্য সরকারকে ডাকতে হয়? বিকল্প কোনো রাস্তা নেই নির্বাচক প্যানেল বা টিম ম্যানেজমেন্টের? নতুন কেউ উঠেও আসেন না? তাই ঘুরে ফিরে সৌম্য সরকার, এনামুল হক বিজয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ হাসান, তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন কিংবা নাইম শেখদেরই দলে ডাকা হয়। এই সব ওপেনাররা ঘরোয়া লিগেও আহামরি ভালো খেলেন না। ঘরোয়া লিগে রানের বন্যায়ও ভাসাননা। এ জন্য তাদের না নিয়ে উপায় নাই। ব্যাপারটি এমন না।
আসলে বাস্তব চিত্র হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো না খেলেও তারা ঘুরে ফিরে ঠিকই আবার জাতীয় দলে আসেন এবং এসে আবারও কিছুদিন অল্প কিছু ম্যাচ খেলেন। ফেরার পর ভালো করতে না পেরে আবার বাদ পড়েন। এরপর কিছুদিন বাইরে থেকে অটোমেটিকালি আবার জাতীয় দলে ডাক পাবেন। এভাবেই চলছে মূলত বাংলাদেশের ক্রিকেট।
সত্যি বলতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুনদের পদার্পণ কম। তাই ঘুরে ফিরে যারা আছেন তাদেরই নিয়ে স্কোয়াড সাজাতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টের এবং এদের খুব ভালো খেলার প্রয়োজন হয় না।
এরপর ২-৪ টা সিরিজ সুযোগ পাওয়ার পর যারা খারাপ খেলার প্রতিযোগিতায় মাতেন। এরপর তাদের বাদ দেওয়া হয়। আর যারা একটু কম খারাপ খেলেছেন, তাদের তখন নতুন করে বিবেচনায় আনা হয়। এভাবেই চলছে। এটায় হল বর্তমান বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা।
এই সব খেলোয়াড়েরা বুঝে গেছেন যে আমাকে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভাল খেলতে হবেনা। এবং ঘরোয়া ক্রিকেটও খুব ভালো খেলারও প্রয়োজন নেই। কিছু না করে আবার জাতীয় দলে চান্স পেতে পারি। খালি আমার জায়গায় যে বা যারা জাতীয় দলে খেলছে , তারা আমার চেয়ে একটু বেশী খারাপ খেললেই আবার সুযোগ পাবো। এভাবেই চলছে। কিন্তু আর কতকাল?
আরও পড়ুন: ভারতের হারে শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া, পয়েন্ট টেবিলে কে কোথায়?
ক্রিফোস্পোর্টস/৩ নভেম্বর ২৪/এইচআই