দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকার সেমিফাইনাল জয়৷ শুধু জয় নয়, রীতিমতো ইতিহাস৷ সর্বশক্তির দল নিয়েও বারবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল টপকাতে না পারার কারণে দলটির নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘চোকার্স’ শব্দটি৷ স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত রাজা রবার্ট ব্রুস সপ্তম বারের চেষ্টায় পুনরুদ্ধার করেছিলেন নিজের রাজত্ব৷ দক্ষিণ আফ্রিকাও যেন রবার্ট ব্রুসের প্রতিচ্ছবি।
ত্রিনিদাদে নিজের অষ্টম বারের চেষ্টায় সেমিফাইনালের জুজু কাটিয়েছে প্রোটিয়ারা৷ আফগানিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার দিনে ৩২ বছরের আক্ষেপ ঘুচেছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
প্রোটিয়ারা যেন রবার্ট ব্রুসের প্রতিচ্ছবি
আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগের কথা—১৩১৪ সালে ব্যানকবার্নের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীকে হারিয়ে ইতিহাসে স্মরণীয়ম নাম রবার্ট দ্য ব্রুস। রাজা রবার্ট ব্রুসের সেই বীরত্বের কাহিনী অনেকেই জানেন। পরপর ছয়বার যুদ্ধে পরাজয়ের পরও হতাশা কাটিয়ে ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জন্মভূমি স্কটল্যান্ডকে মুক্ত করেছিলেন তিনি। কঠিন সময়ে একটি মাকড়সার বার বার চেষ্টা করা ও সফলতা দেখেই নাকি তিনি প্রেরণা পেয়েছিলেন।
একই সূত্রেগাঁথা একটি ফ্রেম যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট। সেই ১৯৯২ সাল থেকে শুরু৷ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বৃষ্টি আইনে ১ বলে ২২ রানের অসম্ভব সমীকরণ দাঁড়ায় আফ্রিকার সামনে৷ বৃষ্টি নামক এমন দুর্ভাগ্যের কাছে সেবার হারতে হয়েছে প্রোটিয়াদের৷ সেই থেকে শুরু একে একে বিশ্বকাপের ৭টি সেমিফাইনালে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আরও পড়ুন :
» ফাইনাল খেলতে নয়, শিরোপা জিততে এসেছি : শামসি
» ব্যাটারদের এত দীর্ঘ রান খরা আগে দেখিনি : তাসকিন
» রোহিত-দ্রাবিড়ের বিশ্বাস, ফাইনালে রানে ফিরবেন কোহলি
সর্বশেষ ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে, ২০১৫ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের ও ২০২৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা৷ হাশিম আমলা, গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স কিংবা ডেল স্টেইনদের আফ্রিকার সোনালী প্রজন্মের তারকারা তাই ট্রফি ছাড়াই ক্যারিয়ারে ইতি টেনেছেন৷
তবে এবার দীর্ঘদিনের আক্ষেপের প্রলেপ হয়ে হাজির হয়েছে এইডেন মার্করামের নেতৃত্ব দক্ষিণ আফ্রিকা দল৷ ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের মতোই অপরাজেয় তারা৷ সেমিফাইনালে আফগানদের ব্যাটে-বলে একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছে দলটি৷
ত্রিনিদাদে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রোটিয়াদের বোলিং আক্রমণের সামনে রীতিমতো উড়ে যায় আফগানরা৷ মার্কো ইয়ানসেন, এনরিখ নরকিয়া ও কাগিসো রাবাদার বোলিং তোপে মাত্র ৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা। দলটির অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই ছাড়া কেউই পৌঁছাতে পারেনি দুই অঙ্কের কোটা৷ সুপার এইটের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে ইতিহাস গড়া আফগানিস্তান এমন অসহায় আত্মসমর্পণ করবে, তা হয়তো ভাবেনি কেউই৷
আফগানদের দেওয়া মাত্র ৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়ারা খুব বেশি তাড়াহুড়ো করেনি৷ ৪৭ বল ৯ উইকেট হাতে রেখে রিজা হেন্ড্রিক্স ও অধিনায়ক এইডেন মার্করামের ব্যাটে চড়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার এমন ঐতিহাসিক জয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্রায়েম স্মিথ ও ডেল স্টেইনের মতো দলটির সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা৷ একইসঙ্গে অধিনায়ক এইডেন মার্করামের নেতৃত্বে ৩২ বছরের চোকার্স শব্দের অপবাদ থেকে মুক্ত হলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্রিফোস্পোর্টস/২৮জুন২৪/টিএইচ/এসএ