২০২৩ সালে হঠাৎ করে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ওপেনার তামিম ইকবাল। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে অবসর ভেঙে আবারও লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপান খান সাহেব। কিন্তু পরবর্তীতে হেড কোচ হাথুরুসিংহে ও দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সাথে সাথে নানা ইস্যুর জেরে বিশ্বকাপে না খেলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন তামিম।
বিশ্বকাপ থেকেই জাতীয় দলের ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী ওপেনার। কবে নাগাদ তিনি ফিরবেন বা আদৌ টাইগারদের হয়ে তাকে আর মাঠে দেখা যাবে কি না সেই প্রশ্নই এখন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্প্রতি দুই বিসিবি পরিচালকের সঙ্গে জাতীয় দলে নিজের ভবিষ্যতের বিষয়ে আলোচনায় বসেন তামিম। সেখানে কি সিদ্ধান্তে তারা পৌঁছেছেন তা এখনো স্পষ্টভাবে জানানোও হয়নি। আর এই ইস্যুটা নিয়েই গত কয়েক দিন সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে বেশ বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে ভুল বার্তা গেছে। আমি নাকি পরিচালকদের বলেছি চলতি বছরে জাতীয় দলে আর ফিরবো না। আমি আসলে এমন কোন কিছুই তাদের বলিনি। আপনারা চাইলে বোর্ডের দুই পরিচালকের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।’
এর আগে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, বিপিএলের মাঝেই তামিমের সাথে মিটিং করে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ ব্যাপারে বিসিবি বস জালাল ইউনুসকে দায়িত্বও দিয়েছিলেন। পরে পাপন নিজেই জানান, দুই বিসিবি পরিচালক এনায়েত হোসেন সিরাজ ও জালাল ইউনুসকে তামিমের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেছেন। তামিমের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, দুই পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ এ বাঁ হাতি ওপেনার তার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানিয়েও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: হাথুরুসিংহে দায়িত্বে থাকলে জাতীয় দলে ফিরবেন তামিম?
আর তামিমের সিদ্ধান্ত, জাতীয় দলে আর না ফেরা। বিসিবি বসকেও কয়েক মাস আগে একই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন তামিম কিন্তু শেষ কিছু দিন ধরে বিষয়টি গণমাধ্যমে ভুলভাবে উত্থাপন করা হচ্ছে বলে বিষয়টি নিয়ে বেশ বিরক্ত দেশসেরা ওপেনার।
এর আগে গত বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথেই হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দেন তামিম ইকবাল। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবসর ভাঙলেও জাতীয় দলের হেড কোচ হাথুরুর সঙ্গে নানা ইস্যু নিয়ে আর জাতীয় দলে ফেরেননি বলে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের ধারণা। সাথে সতীর্থ সাকিবের সাথেও সম্পর্কটা সুখকর নয় তামিমের। এর আগেও একাধিকবার সরাসরি গণমাধ্যমে তামিমের সমালোচনা করেছেন ‘সাবেক বন্ধু’ সাকিব। তামিম সম্প্রতি দেশের এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তার জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: ‘তামিম জাতীয় দলে খেলতে চাইলে অবশ্যই খেলবে’
তামিমের জাতীয় দলে ফেরায় সবচেয়ে বড় বাঁধা হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে টাইগারদের বর্তমান হেড কোচ হাথুরুসিংহেকে। কেননা তাদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব রয়েছে। হাথুরুর ইচ্ছাতেই তামিমকে নাকি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ নম্বরে ব্যাট করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। হাথুরুর বিশ্বকাপে তামিমকে দলে রাখার ব্যাপারে অনাগ্রহের কারণেই নাকি তামিম বিশ্বকাপের দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
তবে বিশ্বকাপ শেষে পাপনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তামিম আগেই তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে পাপনকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পাপন সময় চেয়ে নেয়ায় এবং বিসিবি থেকে গণমাধ্যমে এখনো কোন কিছু প্রকাশ করার নির্দেশ না দেয়ায় তামিম বিষয়টি গণমাধ্যমকে পরিস্কারভাবে জানাতেও পারছেন না। তামিমের ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করেন, এজন্যই হয়তো বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ভুলভাল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বর্তমান যে পরিস্থিতি বিরাজমান তা থেকে বলা যায়, তামিম হয়তো জাতীয় দলে আর ফিরছেন না। গণমাধ্যমে দেয়া সাকৃষাৎকার থেকে জানা যায়, বিসিবিকে তামিমের নিজের মতামতের বিষয়টি মোট তিন বার জানিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত হেড কোচ থেকে শুরু করে বিসিবি সংশ্লিষ্ট কর্তা-ব্যক্তিদের থেকে তেমন কার্যকরী সাড়া পাননি তামিম। তাই খান সাহেবও হয়তো জাতীয় দলে আর না খেলার সিদ্ধান্তেই শেষ পর্যন্ত অটল থাকবেন।
আরও পড়ুন: ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি: স্বামী-ছেলের ছবি দিয়ে কি লিখলেন শান্তর স্ত্রী
ক্রিফোস্পোর্টস/১৪মার্চ২৪/এমএস/এজে