সত্তর দশকে ডাচ ফুটবলের অন্যতম নাম ছিলেন ইয়োহান ক্রুইফই। ক্রুইফের আগের ডাচ ফুটবলের অন্যতম খেলোয়াড়কে কেউ মনে রাখেনি। কিন্তু ক্রুইফকে সবাই মনে রেখেছে। যেমন সেরাদের মানুষ সবসময়ই মনে রাখে।
সেই সময়ে ডাচ ফুটবলের অন্যতম ‘দ্বিতীয় সেরা’ খেলোয়াড় ছিলেন ইয়োহান নিসকেন্স। বার্সেলোনায় খেলার সময় নিসকেন্সকে বার্সা সমর্থকরা ভালোবেসে ‘ইয়োহান দ্য সেকেন্ড’ বলে ডাকতেন। নিসকেন্স নিজে একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সর্বকালের দ্বিতীয় সেরা ফুটবলার হতে আমার কোনো আফসোস নাই।’
এসময় নিসকেন্স আরও বলেন, আমি সবসময় ক্রুইফকে প্রথম সেরা হিসেবে দেখে থাকি।’ মৃত্যুর হিসেবেও নিসকেন্সের থেকে ৮ বছর এগিয়ে ক্রুইফ। আজ ৮ বছর পরে ক্রুইফের পথে যাত্রা করলেন নিসকেন্স, একথা জানিয়েছেন ডাচ ফুটবল এসোসিয়েশন। মৃতুকালে তার বয়স ছিল ৭৩ বছর।
নিসকেন্সের মৃত্যুর খবর জানালেও মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেননি ডাচ ফুটবল ফেডারেশন। রবিবার মারা যাওয়ার পর ডাচ ফুটবল ফেডারেশন জানায়, ‘নিসকেন্সের মৃত্যুর মধ্য ডাচ ও আন্তর্জাতিক ফুটবল একজন কিংবদন্তির জীবনাবসান ঘটলো। এসময় বিবৃতিতে আরও বলা হয় ডাচ ফুটবল চিরকাল নিসকেন্সকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।’
ডাচ ফুটবলের সর্বকালের সেরা এই মিডফিল্ডারকে নিয়ে ফিফার এক সাক্ষাৎকারে তাঁর সতীর্থ সিয়াক সোয়ার্ট বলেন, ‘দুইজন মিডফিল্ডারের সমান ছিলেন নিসকেন্স।’ আসলে নিসকেন্স শুধু মিড ফিল্ডার নয় সেই সঙ্গে তিনি ফরোয়ার্ড এবং ডিফেন্ডার হিসেবেও যথেষ্ট ভালো করতেন। এককথায় পুরো মাঠ জুড়ে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ।
নিসকেন্স কে নিয়ে উয়েফা নিজেদের ওয়েবসাইটে লেখেন যে, ‘নিসকেন্স ছিলেন একজন ইস্পাতদৃঢ় মিড ফিল্ডার। সে সবসময় বিপক্ষ দলকে চাপে রাখতেন। সেই সঙ্গে লক্ষ্য ঠিক রেখে দারুণ টেকনিকে গোল করতেন। তাঁর স্ট্যামিনা শক্তিও ছিলো অন্যরকমের।’
নিসকেন্স-ক্রুইফ ছিলেন আয়াক্সের প্রাণ- ভ্রোমরা। তাঁরা ছিলেন ডাচ ফুটবলের মেরুদণ্ড। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে মাত্র ৮৮ সেকেন্ডের মাথায় গোল করেন নিসকেন্স। যা এখনও বিশ্বকাপ ফাইনালের ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম গোল। জার্মানির কোনো খেলোয়াড় বলে পা লাগানোর আগেই গোলটি করেন নিসকেন্স। সেই নিসকেন্স আজ পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে।
নিসকেন্সের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে হাঙ্গেরি এবং জার্মানির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করবে ডাচ ফুটবলাররা।
ডাচ বার্তা সংস্থা এএনপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান ডাচ কোচ রোনাল্ড কোম্যান বলেন, ছোট বেলায় যখন বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতাম তখন বেশিরভাগ সবাই ক্রুইফ হতে চাইলেও আমি নিসকেন্স হতে চাইতাম।’ এসময় কোম্যান আরও বলেন, ‘নিসকেন্স আমার সবচেয়ে বড় আদর্শ। আমি তাঁর খেলা অনুসরণ করে বড় হয়েছি।’
নিসকেন্সের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে তাঁর ক্লাব আয়াক্স লিখেছেন, ‘আয়াক্স কিংবদন্তি নিসকেন্সের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদন জানাচ্ছি আমরা।’
ক্রুইফ-নিসকেন্স জুটি এবার হয়তো পরপারেও জুটি গড়ে ফুটবল খেলবেন।
আরো পড়ুন : ডায়েটকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফাস্ট ফুড খেলেন কোহলি
ক্রিফোস্পোর্টস/ ০৭অক্টোবর২৪/এসআর