বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অভ্যন্তরীণ বিষয়ে উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও বোর্ড পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। যমুনা টিভির এক সাক্ষাৎকারে নাজমুল আবেদিন ফাহিম বোর্ডে কাজের স্বাধীনতা কম পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে তার বোর্ডে থাকা কঠিন হবে। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। তবে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এই গুঞ্জনকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন এবং জানিয়েছেন, পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই ফাহিমের।
রোববার সকালে যমুনা টিভির এক সাক্ষাৎকারে বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম তার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বোর্ডে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি স্বাধীনতা কম পাচ্ছেন। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাকে সঠিকভাবে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় কাজ চালিয়ে যাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফাহিম আরও বলেন, ‘আমি যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে না পারি, তাহলে আমার কাজের মান কমে যাবে। এটি কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এভাবে চলতে থাকলে আমার পক্ষে বোর্ডে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’
এই বক্তব্যের পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, ফাহিম হয়তো বোর্ড থেকে পদত্যাগ করতে চলেছেন।
ফাহিমের এই সাক্ষাৎকারের পর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দ্রুতই বিষয়টি পরিষ্কার করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সিলেটে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ফাহিম ভাইয়ের পদত্যাগের কোনো বিষয় আমি জানি না। উনি বলেছেন, কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে পদত্যাগের ইচ্ছার কথা কখনোই শোনেনি।’
ফারুক আরও বলেন, ‘আজ আমি যমুনা টিভির সঙ্গে কথা বলেছি। ফাহিম ভাইও আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়েছি। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি এবং আগামীতেও করব।’
ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সামান্য মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘টিকিট বিতরণ নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। প্রেসিডেন্ট বক্সেও একটা ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছিল। সব মিলিয়ে সেদিন আমার মুড ভালো ছিল না। হয়তো সে সময় আমি এমন কিছু বলে ফেলেছি, যা ফাহিম ভাইয়ের মনঃক্ষুণ্ণ করেছে। তবে এটি ইচ্ছাকৃত কিছু ছিল না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘মতের অমিল যেকোনো প্রতিষ্ঠানে হতে পারে। তবে এগুলো নিজেদের মধ্যেই সমাধান করা উচিত। ফাহিম ভাই আমার সিনিয়র। আমি তাকে সব সময় সম্মান করি। তাই আমাদের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, তা এখন মিটে গেছে।’
বিসিবির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো প্রায়ই লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে। কিন্তু এই ঘটনার মাধ্যমে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সংকট আবার সামনে এসেছে। ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মতো দুই অভিজ্ঞ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফাহিম দেশের ক্রিকেটে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার হাত ধরেই উঠে এসেছেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। অন্যদিকে, ফারুক আহমেদও দীর্ঘদিন ধরে বিসিবির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়া বোর্ডের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ফারুক আহমেদ স্বীকার করেছেন, বোর্ডে কাজের চাপ অনেক বেশি। কিন্তু লোকবল কম থাকার কারণে অনেক কাজ সঠিকভাবে ভাগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই কারণে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ফারুক বলেন, ‘নতুন বোর্ড বলতে তো আমরা দুজনই। বাকি সবাই পুরনো। ফলে আমাদের ওপর চাপ বেশি পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। হয়তো সেখানেই কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিসিবির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে দুই পক্ষই বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফাহিম এবং ফারুক উভয়েই জানিয়েছেন, তারা একসঙ্গে কাজ করতে চান এবং আগামীতেও দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করে যাবেন।
আরও পড়ুন:
» ১০০ বছরের ইতিহাসে বিরল রেকর্ড গড়ল ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
» রোমাঞ্চকর ম্যাচে লিভারপুলের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে ফিরল ইউনাইটেড
এদিকে, ক্রিকেটপ্রেমীরা আশা করছেন, বোর্ডের এই অভ্যন্তরীণ সংকট দ্রুতই সমাধান হবে। কেননা, বাংলাদেশের ক্রিকেট বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় পার করছে। সামনে রয়েছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট। এই সময়ে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো ক্রিকেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললে তা দেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘যেকোনো প্রতিষ্ঠানে মতের অমিল হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়া। আমি ফাহিম ভাইকে সব সময় সম্মান করি এবং তার পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। এই ধরনের ছোটখাটো সমস্যাগুলো আমরা নিজেরা সমাধান করতে পারি।’
ফাহিমও সাক্ষাৎকারের পরে আর কোনো মন্তব্য করেননি। ফারুকের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বোর্ডের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে মাঝে মধ্যেই আলোচনা হয়। তবে ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, তা আপাতত মিটে গেছে বলে মনে হচ্ছে। দুই পক্ষই একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করেন বিসিবিকে যদি ভবিষ্যতে এমন সংকট এড়াতে হয়, তাহলে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বোর্ডের অভ্যন্তরীণ সংকট ক্রিকেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ক্রিকেটপ্রেমীরাও আশা করছেন, দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই বোর্ডের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
ক্রিফোস্পোর্টস/৬জানুয়ারি২৫/আইআর/এফএএস