ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ হওয়া বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে তার পারফরম্যান্স ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আট ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কোহলি বেশিরভাগবারই পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। ব্যাট হাতে আগের মতো আগ্রাসী ফর্ম দেখা যায়নি।
তার এই ফর্মহীনতা নিয়ে চিন্তিত ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। তবে প্রোটিয়া কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে কোহলির মানসিকভাবে নতুন করে শুরু করার প্রয়োজন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) এক লাইভ সেশনে ডি ভিলিয়ার্স কোহলির ফর্ম নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাটসম্যানেরই কিছু না কিছু দুর্বলতা থাকে। নিজের ক্যারিয়ারের উদাহরণ টেনে ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘‘আমার জন্য সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল সোজা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যাওয়া। আমি ক্যারিয়ারের শেষ দিকেও এই দুর্বলতা নিয়ে ভুগেছি। কোহলির ক্ষেত্রেও একই ধরনের একটি বিষয় হয়েছে। কিন্তু এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দরকার মানসিক দৃঢ়তা এবং কঠোর পরিশ্রম।’’
আরও পড়ুন :
» ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যে কারণে বাংলাদেশ দলে নেই জাহানারা
» ২০২৫ সালে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যত খেলা
» ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহক
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে কোহলির ব্যাটিং গড় ছিল প্রত্যাশার অনেক নিচে। পুরো সিরিজে তিনি মাত্র ১৯০ রান করতে পেরেছেন। ব্যাটিংয়ের সময় তাকে বেশ অস্থির মনে হয়েছে। বিশেষ করে ফিল্ডারদের সঙ্গে কথা বলা এবং দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তার স্বাভাবিক আগ্রাসী মনোভাবও ব্যাটিংয়ে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং এতে তার ফোকাস আরও নষ্ট হয়েছে।
ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, কোহলির অন্যতম শক্তি হলো মাঠে তার লড়াকু মানসিকতা। তবে এই লড়াইয়ের মনোভাব মাঝে মাঝে তার জন্য বাধাও হয়ে দাঁড়ায়। ডি ভিলিয়ার্স বলেন, ‘‘কোহলি অনেক বেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে এবং দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেন। এটি তার অন্যতম শক্তি হলেও মাঝে মাঝে সেটাই দুর্বলতায় পরিণত হয়। এসব কারণে তিনি ‘রিসেট বাটন’ চাপতে ভুলে যান।’
কোহলির ফর্ম পুনরুদ্ধারে ডি ভিলিয়ার্স একটি সহজ পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যখন আপনি জীবনের সেরা ফর্মে নেই, তখন প্রতিটি বলকে আলাদা ঘটনা হিসেবে দেখতে হবে। প্রতিটি বলের পর আগের বল ভুলে যেতে হবে। বিরাটের মতো ব্যাটসম্যানের দক্ষতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তার সমস্যা মানসিকভাবে প্রতিটি বলের পর পুনরায় মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে।’’
ডি ভিলিয়ার্স আরও বলেন, ‘‘কোহলির অভিজ্ঞতা এবং প্রতিভা তাকে অবশ্যই আগের ফর্মে ফিরিয়ে আনবে। তবে তাকে সাময়িকভাবে নিজের আগ্রাসী মানসিকতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মাঠে লড়াই করা ভালো, তবে কখনও কখনও শান্ত থাকা এবং প্রতিটি বল আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরি।’’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ইনিংসে কোহলিকে দর্শকদের উদ্দেশ্যে স্যান্ডপেপারগেট কেলেঙ্কারির ইঙ্গিত দিতে দেখা যায়। স্যান্ডপেপারগেট হলো একটি বিতর্কিত ঘটনা, যেখানে অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়রা বল টেম্পারিং করেছিলেন। এই ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছিল। সেই পুরোনো ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কোহলি মাঠে আগ্রাসী বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স সেই আগ্রাসনকে সমর্থন করতে পারেনি।
ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, কোহলি এমন একজন ব্যাটসম্যান যিনি চ্যালেঞ্জ উপভোগ করেন। তবে এই ধরনের মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য মানসিক স্থিরতা জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘কোহলি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন। তবে যখন আপনি ভালো ফর্মে নেই, তখন প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আলাদা করে দেখতে হবে। বোলারকে ভুলে গিয়ে পরবর্তী বলের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’’
এবি ডি ভিলিয়ার্স মনে করেন, বিরাট কোহলির ফর্ম নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তিনি বললেন, ‘‘কোহলির মতো ব্যাটসম্যান সবসময়ই নিজের জায়গায় ফিরে আসেন। তার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তার দরকার মানসিক রিসেট। মাঠে অনেক চাপ থাকে। কিন্তু সেই চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কোহলি আবারও নিজের আগের ফর্মে ফিরবে।’’
ডি ভিলিয়ার্স আরও যোগ করেন, ‘‘কোহলি জানেন কীভাবে চাপে খেলতে হয়। তিনি একজন লড়াকু খেলোয়াড়। তবে সময় এসেছে নিজের ব্যাটিংয়ে কিছু পরিবর্তন আনার। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রতিটি বলকে আলাদা করে দেখতে হবে।’’
বিরাট কোহলির ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। তবে তার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের জন্য সাময়িক ফর্মহীনতা বড় কোনো সমস্যা নয়। ডি ভিলিয়ার্সের মতো সাবেক ক্রিকেটাররা মনে করেন, কোহলির এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে না। তবে তার দরকার মানসিক রিসেট। মাঠে লড়াই করাটা ভালো, কিন্তু কখনও কখনও শান্ত থেকে খেলায় মনোযোগ দেওয়া আরও জরুরি। কোহলি যদি এই পরামর্শ মেনে নিতে পারেন, তাহলে আবারও তাকে সেরা ফর্মে দেখা যাবে বলে আশা করছেন ক্রিকেটবিশ্ব।
ক্রিফোস্পোর্টস/৭জানুয়ারি২০২৫/আইএইচআর/এসএ